বাংলাদেশেই ভবিষ্যতের সব সম্ভাবনা: উদ্যোক্তা সাবিরুল

সাবিরুল ইসলাম
সাবিরুল ইসলাম

বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ তরুণ উদ্যোক্তা ও লেখক সাবিরুল ইসলাম বলেছেন, আগামী দিনের সব সম্ভাবনা তিনি বাংলাদেশেই দেখতে পান। বাংলাদেশের তরুণদের উদ্দেশে তিনি বলেছেন, ‘চাকরির পেছনে না ঘুরে উদ্যোক্তা হও। দেশকে কিছু দেওয়ার চেষ্টা করো। মৃত্যুর পরও যেন মানুষের মধ্যে বেঁচে থাকতে পারো, এমন কাজ করো।’

আজ বুধবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে তরুণদের উদ্দেশে দেওয়া বক্তব্যে এসব কথা বলেন সাবিরুল ইসলাম। জুনিয়র চেম্বার ইন্টারন্যাশনাল (জেসিআই), ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ (ডিসিসিআই), বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) সঙ্গে যৌথভাবে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে প্রথম আলো।

সাবিরুল ইসলামের খ্যাতি এখন বিশ্বজোড়া। ২০১০ সালে পৃথিবীর ২৫ তরুণ শিল্প-উদ্যোক্তার একজন নির্বাচিত হন তিনি। যুক্তরাজ্যের প্রভাবশালী ১০০ ব্রিটিশ-বাংলাদেশির তালিকায় নাম আছে তাঁর। তাঁর লেখা বই ‘দ্য ওয়ার্ল্ড অ্যাট ইওর ফিট’ বিক্রি হয়েছে ৬০ হাজার কপি। তিনি এখন ‘ইন্সপায়ার ওয়ান মিলিয়ন’ কার্যক্রম চালাচ্ছেন, যার লক্ষ্য বিশ্বজুড়ে ১০ লাখ তরুণ উদ্যোক্তা তৈরি করা। ইতিমধ্যে এই প্রকল্প নিয়ে তিনি বিশ্বের ২৫টি দেশের আট লাখের বেশি তরুণের সামনে কথা বলেছেন। একই উদ্দেশ্যে তিনি ২২ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশে এসেছেন। ২৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তিনি দেশে আছেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণদের সামনে সাবিরুল যখন কথা বলছিলেন, তখন যেন সবাই তাঁকে মন্ত্রমুগ্ধের মতো শুনছিলেন।
সাবিরুল বলেন, ‘আমাদের বাবা-মায়েরা চান ছেলেমেয়েরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করে ভালো চাকরি করবে। তাঁদের কাছে সফলতা মানে এই। ছেলেমেয়েরা নিজে কিছু করবে, এটা তাঁরা ভাবতে পারেন না।’ সাবিরুল শুরু করেন তাঁর জীবনের গল্প। মাত্র ১৩ বছর বয়সে চাচাতো ভাইয়ের প্রতিষ্ঠানে তিনি কাজ শুরু করেন। কিন্তু দুই সপ্তাহ গড়াতে না গড়াতেই তাঁকে বলা হয়, আর কাজ করার দরকার নেই। এরপর তিনি ঠিক করেন নিজে কিছু করবেন। ১৪ বছর বয়সে খুলে বসলেন ওয়েবসাইট ডিজাইনের ব্যবসা। প্রথম ১৫ দিনেই আয় করেন এক হাজার ডলার। ১৬ বছর বয়সে যুক্তরাষ্ট্রে যান। ১৭ বছর বয়সে লিখে ফেলেন ‘দ্য ওয়ার্ল্ড অ্যাট ইওর ফিট’ বইটি। সাড়া পেলেন অভাবনীয়। পরবর্তী নয় মাসে ৩৭৯টি অনুষ্ঠানে তিনি বক্তব্য দিলেন। একই সময়ের মধ্যে বইটি বিক্রি হলো সাড়ে ৪২ হাজার কপি। এরপর শুধুই বদলে যাওয়ার গল্প। তাঁর তৈরি তরুণদের ব্যবসা শেখার গেম ‘টিন-ট্রাপেনার’ যুক্তরাজ্যের ৬৫০টি স্কুলে পাঠ্যসূচির অংশ হিসেবে শিক্ষার্থীদের খেলতে দেওয়া হয়। তাঁর দ্বিতীয় বইয়ের প্রকাশনা উৎসবে হাজির হয়েছিলেন যুক্তরাজ্যের সাবেক প্রধানমন্ত্রী গর্ডন ব্রাউন।
তরুণ বয়সেই সারা বিশ্বে খ্যাতি পাওয়া সাবিরুল বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে আমাদের একধরনের প্রতিযোগিতা শেখানো হয়। কে কার চেয়ে ভালো ফল করলো, কে কার চেয়ে নম্বর বেশি পেলো, কে কার চেয়ে বেশি ভালো চাকরি পেলো...। কিন্তু এগুলো কোনো জীবন হতে পারে না। আমি বলছি না চাকরি খারাপ, শিক্ষার কোনো দরকার নেই। কিন্তু মূল কথা হলো, উদ্যোক্তা হতে হবে। মনের মধ্যে যা আছে সেটা করতে হবে। নিজের কর্ম দিয়ে পৃথিবীতে বেঁচে থাকতে হবে।’
সাবিরুল বলেন, সবাই উন্নত দেশে যেতে চায়। কিন্তু আমি বাংলাদেশেই ভবিষ্যতের সব সম্ভাবনা দেখতে পাচ্ছি। তরুণদের উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ‘সরকার, রাষ্ট্র তোমাকে কী দিল, কি পেলে সেই হিসাব না করে উদ্যোক্তা হয়ে নিজে কিছু করো। সাহস করে শুরু করতে পারলে সফলতা আসবেই। আর উদ্যোক্তা হতে গিয়ে ব্যর্থ হলে সেই অভিজ্ঞতাও অনেক কিছু।’ সফল উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য সব সময় ইতিবাচক থাকা, ধৈর্য ধরা এবং জীবনের উদ্দেশ্য ঠিক করার পরামর্শ দেন সাবিরুল।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন জেসিআইয়ের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান, ডিসিআইসির সভাপতি সবুর খান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ কামালউদ্দিন।