জয়ী হলে টেন্ডারবাজি করবেন?

ঢাকা সিটি করপোরেশন দক্ষিণের​ মেয়র পদপ্রার্থীরা জনগণের মুখোমুখি অনুষ্ঠানে পরস্পরের হাতে হাত রেখে জয়ী হলে নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি পূরণের অঙ্গীকার করেন। গতকাল ইনস্টি​টিউট অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স মিলনায়তনে সুজন ও নাস​ক যৌথভাবে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে l ছবি: প্রথম আলো
ঢাকা সিটি করপোরেশন দক্ষিণের​ মেয়র পদপ্রার্থীরা জনগণের মুখোমুখি অনুষ্ঠানে পরস্পরের হাতে হাত রেখে জয়ী হলে নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি পূরণের অঙ্গীকার করেন। গতকাল ইনস্টি​টিউট অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স মিলনায়তনে সুজন ও নাস​ক যৌথভাবে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে l ছবি: প্রথম আলো

নির্বাচনের ফল কী হবে, তা জানতে অপেক্ষা করতে হবে আরও ১২ দিন। তবে তার আগেই জনগণের মুখোমুখি হলেন ঢাকা সিটি করপোরেশনের (দক্ষিণ) মেয়র পদপ্রার্থীরা। তাঁরা যেমন তাঁদের পরিকল্পনা-প্রতিশ্রুতি তুলে ধরলেন ভোটারদের সামনে। তেমনি ভোটাররাও খোলামেলা প্রশ্ন করে জানতে চাইলেন এখন যেমন তাঁরা কাঁড়ি কাঁড়ি প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন, নির্বাচিত হলে আদৌ কি এসব কথা মনে থাকবে? এখন তো তাঁরা জনগণের কাছে যাচ্ছেন, মেয়র হলে জনগণ কি মেয়রের কাছে গিয়ে নিজেদের সমস্যার কথা বলতে পারবে? নাকি তিনি ব্যস্ত থাকবেন দলবাজি, টেন্ডারবাজি নিয়ে?
গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা তিনটা থেকে শুরু হয়েছিল ঢাকার (দক্ষিণ) মেয়র পদপ্রার্থীদের নিয়ে ‘জনগণের মুখোমুখি’ নামের এই অনুষ্ঠান। কাকরাইলের ইনস্টিটিউট অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্সে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) ও নাগরিক অধিকার সংরক্ষণ ফোরাম (নাসফ)। দক্ষিণের ২০ জন মেয়র পদপ্রার্থীর মধ্যে ১৩ জন এতে অংশ নিয়ে তাঁদের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ও সিটি করপোরেশন নিয়ে তাঁদের কর্মপরিকল্পনা তুলে ধরেন। উপস্থিত নাগরিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন তাঁরা। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন নাসকের সভাপতি হাফিজুর রহমান। সঞ্চালনা করেন সুজনের সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার।
সঞ্চালক জানান, প্রত্যেক প্রার্থী পাঁচ মিনিট করে তাঁদের বক্তব্য উপস্থাপন করবেন। এরপর উপস্থিত ভোটাররা প্রার্থীকে প্রশ্ন করবেন। কার পর কে বক্তব্য দেবেন, তা নির্ধারণ করতে লটারি হয়ে গেল। প্রথম হলেন দিলীপ ভদ্র। তিনি বললেন, প্রতীক বরাদ্দের লটারিতেও তিনি প্রথম হয়েছিলেন। এবারও প্রথম হলেন। নির্বাচনেও প্রথম হবেন, এটা কি তারই ইঙ্গিত!
এরপর সাঈদ খোকন বললেন, জীবিকার প্রয়োজনে নিম্ন আয়ের মানুষ এই শহরে আসেন। ফুটপাতে ব্যবসা করেন। এতে পথচারীদের সমস্যা হয়। তাঁদের পুনর্বাসন করা হবে। চিতাবাঘ প্রতীক নিয়ে ভোটযুদ্ধে নামা মশিউর রহমান এসে বললেন, অর্থের জোরে যে নির্বাচনী ধারা চালু হয়েছে, সেই প্রথা ভাঙতে তিনি নির্বাচনে দাঁড়িয়েছেন। ময়ূর মার্কার মোহাম্মদ শফি উল্লাহ চৌধুরী বললেন, মাস্টার প্ল্যান করে ঢাকাকে জলাবদ্ধতা থেকে মুক্ত করবেন।
আবু নাসের মুহাম্মদ মাসুদ হোসাইন জানালেন, নির্বাচিত কাউন্সিলরদের নেতৃত্বে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে প্রতি ওয়ার্ডে কমিটি করে এলাকার সমস্যা চিহ্নিত করে গুরুত্বের ভিত্তিতে পর্যায়ক্রমে তা সমাধান করতে চান। মো. বাহারানে সুলতান বাহার জ্বালাময়ী বক্তৃতায় বললেন, নির্বাচিত হলে বাড়িওয়ালারা যেন আইনবহির্ভূতভাবে ভাড়া বাড়াতে না পারেন, সে ব্যাপারে কঠিন ব্যবস্থা নেবেন। তুমুল প্রতিবাদ করলেন বাড়ির মালিকেরা।
টেবিল প্রতীকের বজলুর রশীদ ফিরোজ বলেন, ‘আমি নিজের টাকায় ভোট করছি না। একটি দল করি। তারা দুই লাখ টাকা দিয়েছে। এই টাকা পাওয়া গেছে জনগণের একটা দুই টাকা করে দেওয়া চাঁদায়।’
মো. আকতারুজ্জামান ওরফে আয়াতুল্লাহর প্রতীক লাউ। তিনি বললেন, ‘আমি বহুদিন থেকে মেসে থাকি। ঢাকায় ব্যাচেলরদের থাকার খুবই সমস্যা। নির্বাচিত হলে প্রধান কাজ হবে নারী ও পুরুষের জন্য আদর্শ মেস তৈরি করা।’ বাস মার্কার শহিদুল ইসলাম বললেন, তিনি সারা শহরের মোড়ে মোড়ে সিসি টিভি বসাবেন। এতে অপরাধ কমবে। আংটি প্রতীকের প্রার্থী গোলাম মাওলা রনি বলেন, তিনি নগরবাসীর সঙ্গে সহজ ও সরাসরি সম্পর্ক গড়ে তুলবেন।
ক্রিকেট ব্যাট প্রতীকে ভোট করছেন এস এম আকরাম। তিনি বলেন, দুর্নীতি, যানজট, চাঁদাবাজি সব সমস্যার দায়িত্ব আপনারা মেয়রের কাঁধে দিতে চান। এসব সামলানো মেয়রের একার দায়িত্ব নয়। আইয়ুব হোসেনের প্রতীক ঈগল পাখি। তাঁর অভিযোগ গণমাধ্যমে সব প্রার্থী সমান সুযোগ পাচ্ছেন না। শেষ প্রার্থী ছিলেন রেজাউল করিম চৌধুরী। তাঁর প্রতীক টেবিল ঘড়ি। তিনি বলেন, এই নির্বাচনে ‘না ভোট’-এর বিধান থাকা দরকার।
আলোচনার শেষে স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ তোফায়েল আহমেদ সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে প্রার্থীদের যোগ্যতা, তাঁদের বিগত জীবনাচরণ দেখে যোগ্যদের নির্বাচিত করতে ভোটারদের আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠানে আয়োজকদের পক্ষ থেকে প্রার্থীদের অঙ্গীকারনামায় স্বাক্ষর করানো হয় এবং ভোটারদের যোগ্য ও সৎ ব্যক্তিদের ভোট দেওয়ার জন্য শপথ করানো হয়।