বাঁধে জলকপাট না থাকায় জলাবদ্ধতায় মানুষ

জোয়ারের পানি থেকে রক্ষা করতে ভোলার চর কুকরি-মুকরি ইউনিয়নের চারপাশে দেওয়া বাঁধের মধ্যে থাকা এ ধরনের নয়টি খালে জলকপাট নেই। এতে বর্ষায় জলাবদ্ধ অবস্থায় থাকতে হচ্ছে ইউনিয়নের মানুষকে। ছবিটি গত বৃহস্পতিবার তোলা l প্রথম আলো
জোয়ারের পানি থেকে রক্ষা করতে ভোলার চর কুকরি-মুকরি ইউনিয়নের চারপাশে দেওয়া বাঁধের মধ্যে থাকা এ ধরনের নয়টি খালে জলকপাট নেই। এতে বর্ষায় জলাবদ্ধ অবস্থায় থাকতে হচ্ছে ইউনিয়নের মানুষকে। ছবিটি গত বৃহস্পতিবার তোলা l প্রথম আলো

জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হওয়া থেকে রক্ষা করতে ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার চর কুকরি-মুকরি ইউনিয়নের চারপাশে রিংবাঁধ দেয় পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। কিন্তু সেই সঙ্গে জলকপাট (স্লুইসগেট) নির্মাণ না করায় এখন বর্ষায় জলাবদ্ধতা ও লবণাক্ততার মধ্যে জীবন যাপন করছে ইউনিয়নের ১০ হাজার মানুষ।
ইউনিয়ন পরিষদ সূত্রে জানা যায়, জলবায়ু ট্রাস্ট ফান্ডের সাড়ে ১১ কোটি টাকা ব্যয় করে ২০১৩ সালে ইউনিয়নের চারপাশে প্রায় সাড়ে ১৪ কিলোমিটার রিংবাঁধ নির্মাণ করে পাউবো। কিন্তু বাঁধের মধ্যে ছোট-বড় নয়টি খালের মুখে জলকপাট নির্মাণ করেনি। আগে জোয়ারের পানিতে গ্রামগুলো প্লাবিত হয়ে ভাটার সময় পানি নেমে যেত। এখন আগের মতোই জোয়ারে পানি উঠছে ঠিকই, তবে সেই পানি আর নামতে পারছে না।
গত বৃহস্পতিবার সরেজমিনে দেখা যায়, বাঁধটি ইউনিয়নের পাঁচটি গ্রামের মানুষের প্রধান সড়ক হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। বিদ্যালয়গামী শিশুরা ওই পথ দিয়ে কিছু দূর যাওয়ার পর খালের মুখে পানিতে নামছে। এ ছাড়া লবণপানি ওঠায় খেতগুলোতে কোনো ফসল নেই। মানুষের উঠানে থাকা সবজি গাছের অনেকগুলোতে মড়ক লেগেছে।
আমিনপুর গ্রামের আমিনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির রাবেয়া, জোনাকি; দ্বিতীয় শ্রেণির আসমা, মৌসুমীসহ পাঁচজন বাঁধের ওপর দিয়ে হেঁটে আসছিল। ওদের কাছে জানতে চাইলে তারা বলে, বর্ষায় হাঁটুপানিতে ভিজে বিদ্যালয়ে যেতে হয়।
মোহাম্মদপুর গ্রামের রসুলপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বাদশা মিয়া ও আমিনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মিজানুর রহমান বলেন, বাঁধ দেওয়ার পরে স্থানীয় লোকজন আশা করেছিলেন, পানি উঠবে না। কিন্তু জলাবদ্ধতা দেখা দেওয়ায় লবণপানিতে ক্ষতির মাত্রা বেড়েছে।
বাবুগঞ্জ গ্রামের বাসিন্দা বিবি রহিমা বলেন, এখন বর্ষাকালে চারদিকে পানি জমেছে। শুকনোর সময় লবণপানির কারণে রান্নাবান্না, খাওয়া, কাপড়চোপড় ধোয়ায় সমস্যা হচ্ছে। খেত ও উঠানের গাছ মারা যাচ্ছে। পুকুরের পানিও লবণাক্ত হয়ে গেছে।
একই গ্রামের আবদুল লতিফ খাঁ, সলেমান ফরাজীসহ একাধিক কৃষক বলেন, লবণপানির কারণে রবি মৌসুমে কোনো ফসল ফলানো সম্ভব হয় না।
ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল হাশেম মহাজন বলেন, সাগরমোহনার এই ইউনিয়নটি পর্যটন এলাকা হিসেবে পরিচিত। প্রতিবছর শীতে শত শত মানুষ আসে। বাঁধটি নির্মাণ হওয়ায় পর্যটক ও কুকরি-মুকরিবাসীর যাতায়াতসহ যাবতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত ছিল। কিন্তু জলকপাট না থাকায় বাসিন্দারাই ভোগান্তিতে পড়েছেন।
পাউবো-২-এর নির্বাহী প্রকৌশলী কওসার আলম বলেন, পানি নিয়ন্ত্রণের জন্য বাঁধের মধ্যে খালগুলোর মুখে জলকপাট
দরকার। এ বিষয়ে একটি প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে প্রকল্প আকারে পাঠানো হয়েছে। সেটি পাস হলে এর বাস্তবায়ন করা হবে।