বিশিষ্ট নাগরিকদের প্রতিক্রিয়া

আনিসুজ্জামান
আনিসুজ্জামান

বিচার ও শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে
আনিসুজ্জামান
নববর্ষের দিনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বারপ্রান্তে নারী নিগ্রহের যে ঘটনা ঘটেছে, তার বিবরণ জেনে ক্ষোভে-দুঃখে বিমূঢ় ও হতবাক হয়ে গেছি। আমি কিছুদিন আগে ভারতীয় বন্ধুদের কয়েকজনকে বলেছিলাম, নববর্ষে এত নারী-পুরুষের সমাগম হয়, কিন্তু কোনো দুর্ঘটনা ঘটে না। বাঁধনের কথা আমি ভুলে গিয়েছিলাম কিংবা ভেবেছিলাম, তা ছিল একেবারেই নিয়মের ব্যতিক্রম। এখন কী বলব!
বিশ্ববিদ্যালয়ের যে ছাত্র একদিন প্রাণ দিয়েও সহপাঠিনীর সম্ভ্রম রক্ষা করতে এগিয়ে আসত, সে কোথায় হারিয়ে গেল! এই শ্বাপদদের ভিড়ে লিটনের মতো যুবককে ব্যতিক্রমই মনে হয়। আমাদের সমাজের অনেক উন্নতি ঘটেছে নানা ক্ষেত্রে, কিন্তু নারীর প্রতি আচরণের বিষয়ে আমরা কোন অন্ধকারে পড়ে আছি। সংবাদপত্রে প্রায়ই ধর্ষণের বা গণধর্ষণের খবর বেরোয়, যৌতুকের দাবিতে নারীর প্রতি অত্যাচারের সংবাদ পড়ি।
গত ষাট-সত্তর বছরে আমাদের সবচেয়ে বড় অর্জন নারীর অগ্রগতি। অগ্রগমনের সেই অভিযাত্রীদের সঙ্গে কী আচরণ করছি আমরা! ধিক আমাদের শিক্ষা—সে শিক্ষা পরিবারের হোক, আর বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের হোক।
অপরাধীদের বিচার ও শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। যাঁরা এমন ঘটনার জন্য মেয়েদের চলাফেরা-পোশাক-আচরণকে দায়ী করেন, তাঁদেরও কঠোর নিন্দা করতে হবে। রাষ্ট্র, সমাজ ও পরিবারকে এগিয়ে আসতে নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে।

পারভীন হাসান
পারভীন হাসান

কোথায় যাচ্ছে আমাদের দেশ?
পারভীন হাসান
পয়লা বৈশাখ একটি সর্বজনীন অনুষ্ঠান। সেই অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো জায়গায় যদি এ ঘটনা ঘটে, তাহলে আমাদের প্রশ্ন—কোথায় যাচ্ছে আমাদের দেশ?
পুলিশ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ভূমিকা আমাদের উদ্বেগ আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে। ঘটনার ছবি আছে, ভিডিও দেখা যাচ্ছে, কিন্তু তাঁরা প্রথমে বলছিলেন কিছুই হয়নি।
পত্রিকায় দেখলাম, তিন স্তরের নাকি নিরাপত্তা ছিল। তাহলে এটা হলো কী করে? এই ক্যাম্পাসেই কয়েক দিন আগে অভিজিৎ খুন হলো—তাদের তো (পুলিশের) আরও বেশি সতর্ক হওয়ার কথা ছিল। তারা হলো না কেন? এর দায়দায়িত্ব কার?
ছবিতে দেখাই যাচ্ছে কারা ঘটনা ঘটিয়েছে। পুলিশ খুঁজছে না কেন? মনমানসিকতা হয়তো রাতারাতি পরিবর্তন হবে না। কিন্তু এভাবে যদি অস্বীকার করতে থাকি, তা হলে তো কিছুই হবে না।
এখনই এ ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে কঠোর শাস্তি দিতে হবে। পাশাপাশি নারীদের চলাফেরা যেন নিরাপদ হয়, তার জন্য পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নিতে হবে।
পারভীন হাসান, উপাচার্য, সেন্ট্রাল উইমেন্স ইউনিভার্সিটি

এএসএম শাহজাহান
এএসএম শাহজাহান

পুলিশের গাফিলতি থাকলে ব্যবস্থা নিন
এএসএম শাহজাহান
পয়লা বৈশাখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় যা ঘটেছে সেটা আমি কাগজে পড়েছি, টিভিতেও দেখেছি। টিভিতে যেসব ফুটেজ দেখানো হলো সেটা দেখে আমি স্তম্ভিত, ব্যথিত। এ কোন সমাজে বাস করছি আমরা?
জীবনের এই বয়সে এসে মনে হয়েছে, দেশ ও দেশের মানুষ অনেক দূর এগিয়ে গেছে। দুনিয়ার অনেক কিছুর সঙ্গে তাল মেলানোর যোগ্যতা অর্জন করেছি আমরা। কিন্তু টিভির ছবিগুলো দেখে মনে হলো, নীতি-নৈতিকতার দিক থেকে আমরা এখনো অনেক পিছিয়ে। এতটুকু এগোতে পারিনি।
নারীদের নিগ্রহ করার ঘটনায় কেউ কেউ প্রতিবাদ করেছে, কিন্তু তারা সংখ্যায় কম বলে অন্যায়কারীদের কাছে টিকতে পারেনি। যারা প্রতিবাদী তারা সাহসী, এরাই আমাদের সম্পদ। আর এত বড় অন্যায় দেখেও যারা প্রতিবাদ করেনি তারা অন্যায়কে সমর্থন করেছে। এরা ভীরু, জাতির বোঝা।
আমার মনে হয়েছে, এ ঘটনার দায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এড়াতে পারে না। এত বড় আয়োজন, এত মানুষের সমাগম; শুধু পুলিশ দিয়ে হয় না। আগে এ ধরনের বড় বড় আয়োজনে স্বেচ্ছাসেবী থাকত। এখন আমরা সরকারি বাহিনীনির্ভর হয়ে গেছি। তরুণ-যুবকদের শক্তি ভুলে গেছি। হয়তো এ ঘটনা থেকে শিক্ষা পাব।
এখন পুলিশের উচিত এ ঘটনাকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়ে অপরাধীদের দ্রুত খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনা। পুলিশের কারও গাফিলতি থাকলে তার শাস্তির ব্যবস্থা করা। না হলে পুলিশের ওপর মানুষের আস্থাহীনতা তৈরি হবে, সেটা হবে সবার জন্য অমঙ্গলের।