৩৭টি পদ ছাড়লেন ৩৫ শিক্ষক

বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৭টি প্রশাসনিক পদ থেকে সরে দাঁড়ালেন সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) আওয়ামী ও বামপন্থী শিক্ষকদের একটি ফোরামের ৩৫ জন শিক্ষক। ‘উপাচার্যের কাছে অপমানিত’ হওয়ার জের ধরে তাঁরা পদত্যাগ করেছেন বলে জানা গেছে।
গতকাল সোমবার বেলা ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারের কাছে ওই শিক্ষকেরা পদত্যাগপত্র জমা দেন। তবে বিকেল ছয়টা পর্যন্ত পদত্যাগপত্রগুলো গৃহীত হওয়ার খবর জানা যায়নি।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও পদত্যাগকারী শিক্ষকদের ফোরাম সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী ও বামপন্থী শিক্ষকদের দুটি ফোরামের ‘মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ শিক্ষকবৃন্দ’ নামের অংশটির ৩৫ জন শিক্ষক ওই সব পদ থেকে পদত্যাগ করেন। তাঁদের মধ্যে ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর, লাইফ সায়েন্স অনুষদের ডিন, ছাত্র উপদেশ ও নির্দেশনা পরিচালক, পাঁচটি আবাসিক হলের প্রাধ্যক্ষ, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ইনস্টিটিউটের (আইআইসিটি) পরিচালকও রয়েছেন।
পদত্যাগপত্রে শিক্ষকেরা ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক পরিস্থিতিতে দায়িত্ব পালন করতে সম্মানিত বোধ করছি না’ বলে উল্লেখ করেন। কেন সম্মানিত বোধ করছেন না-সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে ওই শিক্ষক ফোরামের আহ্বায়ক ও পদত্যাগকারী শিক্ষকদের নেতা সৈয়দ সামসুল আলম মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে সার্বিক পরিস্থিতি বলতে কী বোঝাচ্ছেন-এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটি ১২ এপ্রিল শিক্ষকদের উপাচার্যের অপমান করা ও আগের আরও কয়েকটি ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট।
এদিকে ওই শিক্ষক ফোরামেরই সদ্য সাবেক আহ্বায়ক ও শিক্ষক সমিতির বর্তমান সভাপতি মো. কবির হোসেন একটি প্রশাসনিক দায়িত্বে থাকলেও তিনি সেটি থেকে পদত্যাগ করেননি।
আওয়ামী ও বামপন্থী শিক্ষকদের অন্য ফোরাম ‘মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মুক্তচিন্তা চর্চায় ঐক্যবদ্ধ শিক্ষকবৃন্দ’ নামে পরিচিত। বিশ্ববিদ্যালয়ে উভয় ফোরাম সক্রিয় থাকলেও গতকাল পদত্যাগ করা ফোরামের শিক্ষকেরাই মূলত বিভিন্ন প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন।
পদত্যাগের প্রেক্ষাপট: বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও পদত্যাগকারী শিক্ষকদের একাধিক সূত্রে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন বিভাগ শিক্ষকদের বসার জন্য কতটি কক্ষ ও কতটি শ্রেণিকক্ষ বরাদ্দ পাবে, তা নিয়ে ওই দুই ফোরামের দুই শিক্ষকের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলছিল। এ দুজনের একজন পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের ও অন্যজন পুর ও পরিবেশ কৌশল বিভাগের।
পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষকের পক্ষ হয়ে পদার্থবিজ্ঞান এবং ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের কয়েকজন শিক্ষক ওই দ্বন্দ্ব নিয়ে উপাচার্যের সঙ্গে আলোচনা করতে সম্প্রতি তাঁর সাক্ষাতের অনুমতি চান। কিন্তু তা মেলেনি। পরে ১২ এপ্রিল এ পক্ষের ১১ জন শিক্ষক আকস্মিকভাবে তাঁর সঙ্গে দেখা করতে যান। এ সময় উপাচার্য তাঁর স্ত্রীর অসুস্থতার খবর পাওয়ায় তাঁদের বেশি সময় দেননি। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে কয়েকজন শিক্ষক তাঁর সঙ্গে তর্কে জড়িয়ে পড়েন। তখন উপাচার্য সবাইকে সংযত আচরণ করতে বলেন। এর জের ধরেই গতকাল পদত্যাগপত্র জমা দিলেন ওই ৩৫ শিক্ষক।
উপাচার্যের বক্তব্য: উপাচার্য মো. আমিনুল হক ভূইয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘১২ এপ্রিল আমার সঙ্গে দেখা করতে আসা পদার্থবিজ্ঞান এবং ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের কয়েকজন শিক্ষককে আমার স্ত্রীর অসুস্থতার খবর পাওয়ার কারণে হয়তো বেশি সময় দিতে পারিনি। তাঁদের সামনেই আমি চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলেছি। তার পরও আমি কম সময় দেওয়ার জন্য যদি তাঁরা ব্যথিত হয়ে পদত্যাগপত্র জমা দেন, তবে সেটা নিতান্তই অনিচ্ছাকৃত।’
উপাচার্য আরও বলেন, ‘আমিও বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক। আমি সব শিক্ষকের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি আমার যেমন দায়বদ্ধতা রয়েছে, তেমনি আমার পরিবারের প্রতিও দায়বদ্ধতা রয়েছে। আশা করি শিক্ষকেরা বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করে বিশ্ববিদ্যালয়কে এগিয়ে নিতে সহযোগিতা করবেন।’