কাউন্সিলর প্রার্থীর মিছিলে গুলি

রাজধানীতে গতকাল শনিবার বিএনপি-সমর্থিত এক কাউন্সিলর প্রার্থীর মিছিলে গুলি এবং জামায়াত-সমর্থিত প্রার্থীর মিছিলে ককটেল হামলা হয়েছে। আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী এক কাউন্সিলর প্রার্থীর ওপর হামলায় তাঁর আঙুল কাটা পড়েছে।
এ ছাড়া বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে হামলার প্রতিবাদে ডাকা মানববন্ধন কর্মসূচিতেও হামলার ঘটনা ঘটেছে।
আক্রান্ত ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র জানায়, সব কটি হামলার ক্ষেত্রেই আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা জড়িত ছিলেন।
খিলগাঁওয়ের গোড়ানে গতকাল বিকেলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ২ নম্বর ওয়ার্ডের বিএনপি-সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী হাবিবা চৌধুরীর মিছিলে গুলির ঘটনা ঘটে। এতে ওয়ার্ড বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি নাজমুল হুদা ওরফে আরজু আহত হন। তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিকেল চারটার দিকে গোড়ান টেম্পো স্ট্যান্ড এলাকা থেকে হাবিবার সমর্থনে নাজমুল হুদার নেতৃত্বে মিছিল বের হয়। মিছিলটি বাগানবাড়ির দিকে যাওয়ার সময় কয়েকজন যুবক পর পর চারটি গুলি ছোড়েন। একটি গুলি নাজমুলের ডান পায়ে লাগে। এ সময় মিছিলে থাকা লোকজন আতঙ্কে ছোটাছুটি শুরু করেন।
হাবিবা চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের স্থানীয় কয়েকজন যুবক এ ঘটনা ঘটিয়েছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে খিলগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুস্তাফিজ ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘মিছিলে গুলিবর্ষণের ব্যাপারে তথ্য পাইনি। তবে আহত ব্যক্তি জানিয়েছেন, তিনি রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন। তখন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের ছোড়া একটি গুলি তাঁর পায়ে লাগে। কারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’
২০ নম্বর ওয়ার্ডে প্রার্থীর ওপর হামলা: বেলা তিনটার দিকে সেগুনবাগিচার দুর্নীতি দমন কমিশন কার্যালয়ের সামনে ২০ নম্বর ওয়ার্ডের স্বতন্ত্র প্রার্থী সারোয়ার ওয়াদুদ চৌধুরীর ওপর হামলা হয়।
সারোয়ারের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্যসচিব আশরাফ চৌধুরী জানান, তিনটার দিকে কর্মীদের নিয়ে তিনি সেগুনবাগিচায় গণসংযোগ করছিলেন। এ সময় ১০-১৫ জন ধারালো অস্ত্রধারী যুবক অতর্কিত তাঁদের ওপর হামলা চালান। অস্ত্রের আঘাতে সারোয়ারের বাঁ হাতের দুটি আঙুল কেটে যায়। দুটি পা মারাত্মক জখম হয়। তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনায় আরও ছয়-সাতজন কর্মী আহত হন।
পারিবারিক সূত্রের দাবি, সারোয়ার কেন্দ্রীয় কৃষক লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক। তিনি আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী। আওয়ামী লীগ-সমর্থিত প্রার্থী ফরিদ উদ্দিন ওরফে রতনের নির্দেশে তাঁর লোকজন এ ঘটনা ঘটিয়েছেন।
জানতে চাইলে ফরিদ উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘ওয়াদুদের লোকজনই আমার সমর্থকদের ওপর হামলা করেছেন। এখন নাটক সাজানোর জন্য হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।’
এ বিষয়ে রমনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মশিউর রহমান বলেন, ঘটনাস্থল, ঢাকা মেডিকেল ও কাকরাইলের ওই হাসপাতালে পুলিশ পাঠানো হয়েছে।
১৩ নম্বর ওয়ার্ডে মিছিলে ককটেল হামলা: ঢাকা দক্ষিণে ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদপ্রার্থী আঞ্জুমান আরা বেগমের কাঁটা চামচ প্রতীকের গণসংযোগ ও মিছিলের সময় সরকারি দলের নেতা-কর্মীরা ককটেল হামলা করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিকেল পাঁচটার দিকে শান্তিনগরে ইস্টার্ন প্লাস মার্কেটের কাছে রাজারবাগ পুলিশ লাইনসের ১ নম্বর গেটে এ হামলা হয়। এতে ইব্রাহিম খলিল, ইমতিয়াজ সুলতান, ফারুক, ওবায়দুল্লাহ, আসহান হাবীবসহ ১৫ জন আহত হন। পুলিশ মিছিল থেকে ১০ জনকে আটক করে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পল্টন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোরশেদ আলম ককটেল হামলা ও ১০ জনকে আটক করার কথা নিশ্চিত করেন। আটক ব্যক্তিরা হামলাকারী না মিছিলকারী জানতে চাইলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, এখনো বলা যাচ্ছে না। তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
আঞ্জুমান আরা প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ নেতা মোস্তফা জামানের ঘুড়ি প্রতীকের সমর্থকেরা এ হামলা করেন। এর আগে তাঁর ছয়জন কর্মীকে মারধর ও ১১ জনকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। ২২ এপ্রিল রাতে তাঁর পুরানা পল্টনের বাসায় হামলা চালিয়ে ভাঙচুর এবং তাঁকে নির্বাচনী প্রচার বন্ধ ও বাসা থেকে বের না হতে হুমকি দেওয়া হয়।
এ সম্পর্কে জানতে মোস্তফা জামানের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। গতকাল রাত সাড়ে আটটায় তাঁর মোবাইলে ফোন করলে অপর প্রান্ত থেকে বলা হয়, এটি মোস্তফা জামানের নম্বর না।
মানববন্ধনে হামলা: বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে হামলার প্রতিবাদে আয়োজিত মানববন্ধনে হামলা চালান মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিল লীগ নামের একটি সংগঠনের নেতা-কর্মীরা।
মানববন্ধনের আয়োজক সংগঠন স্বাধীনতা ফোরামের সভাপতি আবু নাসের মুহাম্মদ রহমতুল্লাহ অভিযোগ করেন, মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিল লীগের নেতা-কর্মীরা তাঁদের ওপর লাঠিসোঁটা নিয়ে অতর্কিতে হামলা চালান। এতে তিনিসহ বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আহমেদ আযম খান, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী পারভেজ আহমেদ, জাতীয় নাগরিক সংসদের সভানেত্রী খালেদা ইয়াসমিন আহত হয়েছেন।
৫ নম্বর ওয়ার্ডে মারধর: গত শুক্রবার রাতে ঢাকা দক্ষিণের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের স্বতন্ত্র কাউন্সিলর পদপ্রার্থী মো. ইসমত তাকির মিষ্টি কুমড়া প্রতীকের পক্ষে গণসংযোগের সময় বাসাবোর রাজারবাগ এলাকায় হামলা করেন আওয়ামী লীগ-সমর্থিত প্রার্থী আশরাফুজ্জামান ফরিদের (রেডিও) সমর্থকেরা। এতে ৫ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসানসহ পাঁচজন আহত হন। বর্তমানে তাঁরা মুগদা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আশরাফুজ্জামান বলেন, কিছু ছেলে দা-ছুরি নিয়ে এলাকায় মিছিল করে। এটা শুনে এলাকাবাসী ধাওয়া দেয়। তখন ছয়জন একটি বাড়িতে ঢোকে। সেখান থেকে তিনজন লাফ দিয়ে আহত হয়। এটাকে রং দিয়ে তারা এলাকায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করছে।