লাখ লাখ টাকা আদায় করছেন সরকারদলীয় নেতা ও প্রভাবশালীরা

সরকারি ব্যবস্থাপনায় সম্প্রতি মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলার ১১টি গ্রামে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়েছে। এই সুযোগে প্রভাবশালী ব্যক্তি ও সরকারদলীয় নেতারা সুবিধাভোগী পরিবার থেকে লাখ লাখ টাকা আদায় করছেন।
এলাকার কয়েকজন বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রাজধানীর কাছে হলেও সাটুরিয়ার অনেক গ্রামে এখনো বিদ্যুৎ পৌঁছায়নি। বছরের পর বছর সরকারদলীয় নেতা, জনপ্রতিনিধি ও পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষের কাছে ধরনা দিয়েও তাঁরা বিদ্যুতের ব্যবস্থা করতে পারেননি। এমনকি অনেক এলাকার লোকজন নিয়ম অনুযায়ী পল্লী বিদ্যুতের টাকা জমা দেওয়ার পরও বিদ্যুৎ পাচ্ছেন না। অবশেষে স্থানীয় সাংসদ ও স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী জাহিদ মালেকের হস্তক্ষেপে সম্প্রতি সরকারি ব্যবস্থাপনায় ১১টি গ্রামে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়েছে।
মানিকগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সাটুরিয়া উপমহাব্যবস্থাপকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সরকারি ব্যবস্থাপনায় উপজেলার বাছট, বৈলতলা, মখদমপাড়া, শেখরীনগর, ছনকা, ঘুনা, আগসাভার, শিমুলিয়া, উত্তর শিমুলিয়া, পাতিলাপাড়া ও রাজইর গ্রামে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়েছে। এসব গ্রামে এক হাজারের বেশি পরিবার রয়েছে। এর মধ্যে ৫৫৪টি পরিবারে ইতিমধ্যে বিদ্যুতের সংযোগ দেওয়া হয়েছে। বাকি পরিবারগুলোতেও পর্যায়ক্রমে সংযোগ দেওয়া হবে। প্রতি কিলোওয়াট সংযোগের জন্য একজন গ্রাহককে জামানত বাবদ ৬০০ টাকা আর সদস্য ফি বাবদ ২০ টাকা জমা দিতে হবে।
বিদ্যুৎ পাওয়া কয়েকটি পরিবারের সদস্যরা অভিযোগ করেন, স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তি ও কতিপয় সরকারদলীয় নেতা বিদ্যুৎ সরবরাহের কথা বলে তাঁদের কাছ থেকে ছয় হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত চাঁদা আদায় করছেন।
শেখরীনগর গ্রামের নজরুল ইসলাম জানান, তাঁদের গ্রামে এ পর্যন্ত ৫৫টি পরিবারে বিদ্যুতের সংযোগ দেওয়া হয়েছে। এসব পরিবার থেকে সংযোগপ্রতি আট হাজার টাকা আদায় করা হয়েছে। স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ নেতার কথা বলে ওই গ্রামের আবদুল মজিদের ছেলে মোহসিনসহ আরও তিন ব্যক্তি তাঁদের কাছ থেকে ওই টাকা আদায় করেন।
জানতে চাইলে মোহসিন জানান, বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য আওয়ামী লীগের এক নেতাকে তিনি চাঁদা তুলে দিয়েছেন। আদায় করা চাঁদা পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষকে দেওয়া হয়েছে বলে ওই নেতা তাঁকে জানিয়েছেন। তবে কে সেই নেতা, তা তিনি বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন।
বিদ্যুৎ-সংযোগের জন্য পল্লী বিদ্যুতের ঠিকাদার ও স্থানীয় বাসিন্দা সোনা মিয়াকে কয়েক দফায় প্রায় নয় হাজার টাকা দিয়েছেন বরাইদ ইউনিয়নের পাতিলাপাড়া গ্রামের রমজান আলী। একই গ্রামের রাজা মিয়া ছয় হাজার ও খোরশেদ আলী দিয়েছেন পাঁচ হাজার টাকা। এ ব্যাপারে সোনা মিয়া জানান, তিনি খরচ বাবদ ওই টাকা নিয়েছেন। রাজৈর গ্রামের সাগর শেখ জানান, তাঁদের গ্রামের ৩৮টি পরিবার বিদ্যুতের সংযোগ পেয়েছে। এ জন্য তাঁদের প্রায় সাড়ে তিন লাখ টাকা দিতে হয়েছে। ওই এলাকারই মামুন হোসেন নামের এক ব্যক্তি তাঁদের কাছ থেকে ওই টাকা আদায় করেছেন।
এদিকে বাছট, বৈলতলা ও মখদমপাড়া গ্রামে বিদ্যুতের জন্য টাকা নিয়েছেন সাটুরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আনোয়ার হোসেন। এ ব্যাপারে আনোয়ার জানান, তিনি বাছট ও মখদমপাড়া থেকে কিছু টাকা আদায় করেছেন এ কথা সত্যি। তবে তিনি ওই টাকা থেকে বিদ্যুৎ লাইন নির্মাণকাজের দায়িত্বে থাকা ঠিকাদারকে দিয়েছেন ৭০ হাজার টাকা। বাকি টাকা সরঞ্জাম ক্রয়সহ পল্লী বিদ্যুতের কতিপয় কর্মকর্তাকে ঘুষ দিয়েছেন। উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গোলাম হোসেন জানান, বিদ্যুতের জন্য প্রতি পরিবারের কাছ থেকে আওয়ামী লীগের নেতারা সাত-আট হাজার টাকা নিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। কিন্তু বিভিন্ন কারণে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যাচ্ছে না।
মানিকগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির এজিএম ইউসুফ আলী জানান, বিদ্যুৎ দেওয়ার নাম করে টাউট প্রকৃতির কিছু নেতা ও প্রভাবশালী লোকজন সুবিধাভোগীদের কাছ থেকে ছয় হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত আদায় করেছে। অনেক গ্রাহক বেসরকারি সংস্থা থেকে ঋণ করেও ওই সব নেতাকে টাকা দিয়েছেন।