মনু নদের ৩৮ স্থান ভাঙনের ঝুঁকিতে

মৌলভীবাজারের তিনটি উপজেলায় মনু নদের দুই পাড়ের বাঁধের ৩৮টি স্থান ঝুঁকিতে রয়েছে। এসব স্থানের কিছু অংশের মাটি ইতিমধ্যে ধসে পড়েছে। পানি বাড়লেই আংশিক ধসে পড়া বাঁধের অবশিষ্ট অংশও ভেঙে বন্যার আশঙ্কা করছেন স্থানীয় লোকজন। এতে নদী তীরবর্তী বিভিন্ন গ্রামের লোকজনের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
স্থানীয় লোকজন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা গেছে, গত বর্ষা মৌসুম থেকে বিভিন্ন সময়ে মনু নদের দুই পাড়ের বাঁধের ওই ৩৮টি স্থান ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে। সেসব স্থান মেরামত না করায় পানি বাড়লেই আংশিক ধসে পড়া বাঁধের অবশিষ্ট অংশ ভেঙে বিস্তীর্ণ এলাকা তলিয়ে যাবে। এতে ফসল, বাড়িঘর ও রাস্তাঘাটের ক্ষতির আশঙ্কা করছেন স্থানীয় লোকজন। সীমান্তের ওপার থেকে বয়ে আসা মনু নদ জেলার কুলাউড়া, রাজনগর ও সদর উপজেলার ওপর দিয়ে কুশিয়ারা নদীর সঙ্গে মিলেছে।
মনু নদের কুলাউড়ার চাতলাপুর, নিশ্চিন্তপুর, সুলতানপুর, রনচাপ, মাদানগর, হাসিমপুর, বেলেরতল, কলিরকোনা, রাজাপুর, আশ্রয়গ্রাম, কটারকোনা, জালালপুর, খন্দকারগ্রাম, আলীনগর, সুজাপুর, চক সালন, মনু রেল সেতুর নিচের অংশ, গাজীপুর, তাজপুর, মিয়ারপাড়া, সন্দ্রাবাজ ও বালিয়া, রাজনগর উপজেলার চাটিকোনাগাঁও, উত্তরচাটি, কাকির চক, উজিরপুর, কাঞ্জিরপুল, একামধু, আদিনাবাদ, শ্বাসমহাল, কালাইকোনা, ভোলানগর, কামারচাক, প্রেমনগর ও খাস-প্রেমনগর ও সদর উপজেলার নৈয়ারাই, চানপুর, বাসুদেবশ্রী এলাকায় বাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। সম্প্রতি কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে উজান থেকে আসা পাহাড়ি ঢলের তোড়ে এসব স্থান আরও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে।
কুলাউড়ার হাজীপুর ইউনিয়নের সাধনপুর গ্রামের আবদুল বাছিত বলেন, ‘আমাদের এলাকায় বাঁধের কয়েকটি স্থানে মাটি ধসে পড়েছে। স্রোত বাড়লে বাঁধ ভেঙে যাবে। আগে পাউবো প্রতিবছর যে মেরামত কাজ করত, তা এখন করে না। আমরা ঝুঁকির মধ্যে আছি।’
রাজনগরের কামারচাক ইউনিয়নের মশাজান গ্রামের জয়নাল আবেদীন জানান, তাঁদের এলাকার বাঁধের কয়েকটি স্থানে অনেক দিন ধরেই ভাঙন দেখা দিয়েছে। কিন্তু তাঁরা ওই স্থানগুলো মেরামতের স্থায়ী কোনো উদ্যোগও দেখতে পাচ্ছেন না।
কুলাউড়ার পৃথিমপাশা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আবদুল লতিফ জানান, সম্প্রতি পাউবোর উদ্যোগে আলীনগর এলাকায় সামান্য মাটি ফেলে কিছু কাজ করা হয়েছে। তাতে ঝুঁকি কাটেনি। ঢলের তোড়ে যেকোনো মুহূর্তে ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলো ধসে গেলে উপজেলার টিলাগাঁও, রাউৎগাঁও, কাদিপুর ইউনিয়নসহ ব্যাপক এলাকা বন্যাকবলিত হয়ে পড়বে। এ কারণে লোকজন আতঙ্কে রয়েছেন। পাউবোকে অনেকবার বলা হয়েছে। কিন্তু তারা স্থায়ীভাবে কোনো কাজ করছে না।
পাউবোর মৌলভীবাজার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বাঁধের বেশি ঝুঁকিপূর্ণ চক সালন, চাতলাপুর, নিশ্চিন্তপুর, আলীনগর, মিয়ারপাড়া ও ভোলানগরে কিছু কাজ হয়েছে। চাটি কোনাগাঁওয়ে কাজের জন্য সম্প্রতি দরপত্র হয়েছে। কিছুদিনের মধ্যে কোনাগাঁওয়ে কাজ শুরু হবে।
এ ব্যাপারে পাউবোর মৌলভীবাজার কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী ফয়জুর রব প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাজেট যা পেয়েছি, তা দিয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে কাজ শুরু করা হয়েছে। তিনি জানান, ঝুঁকিপূর্ণ স্থানসমূহ মেরামতের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঁচ কোটি টাকা বরাদ্দ চাওয়া হয়েছিল। এর মধ্যে এখন পর্যন্ত পাওয়া গেছে ৬০ লাখ টাকা।’