মহেশপুরে চাঁদাবাজদের দৌরাত্ম্য

ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার মাইলবাড়িয়ায় চাঁদা না পেয়ে কুপিয়ে এক ঠিকাদারের আঙুল কেটে ফেলা হয়েছে। এ ঘটনায় আদালতে মামলা করায় কালভার্ট নির্মাণের কাজও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে আহত ঠিকাদার আশরাফুজ্জামান যশোরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
আশরাফুজ্জামান বলেন, তাঁরা কয়েকজন বন্ধু একসঙ্গে ঠিকাদারি কাজ করেন। মহেশপুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কার্যালয় মাইলবাড়িয়া গ্রামে একটি কালভার্ট নির্মাণের দরপত্র আহ্বান করে। মেসার্স রাশেদুল ইসলাম নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নামে তাঁরা দরপত্র দাখিল করেন। কাজটি তাঁরাই পান। গত মার্চের মাঝামাঝি তাঁরা কাজ শুরু করেন। গত ১৩ এপ্রিল মাইলবাড়িয়া গ্রামের ওমর ফারুকের নেতৃত্বে প্রায় ১০ জন সাইটে (প্রকল্প এলাকা) আসে। ওমর নিজেকে আওয়ামী লীগের সাংসদ নবী নেওয়াজের এপিএস (সহকারী একান্ত সচিব) দাবি করে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করে। চাঁদা দিতে রাজি না হলে তারা কাজ বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দেয়। পরিস্থিতি সামাল দিতে তখন ফারুককে ১০ হাজার টাকা দেওয়া হয়। ২৬ এপ্রিল কালভার্টের ঢালাই চলাকালে তারা (ফারুক ও তাঁর সহযোগীরা) আবারও এসে চাঁদার বাকি ৪০ হাজার টাকার দাবি করে। টাকা না পেয়ে ফারুক রামদা দিয়ে তাঁর (আশরাফুজ্জামান) মাথায় আঘাত করে। তিনি হাত দিয়ে ঠেকাতে গেলে তাঁর বাঁ হাতের বুড়ো আঙুল কেটে পড়ে যায়। এ সময় ফারুকের সহযোগীরা লাঠি দিয়ে সাইটের লোকজনকে পেটাতে থাকে। পরে এলাকার লোকজন তাঁকে উদ্ধার করে মহেশপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। সেখান থেকে তাঁকে ঢাকার জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে (পঙ্গু হাসপাতাল) পাঠানো হয়। বর্তমানে তিনি যশোরের ওই হাসপাতালে রয়েছেন।
আশরাফুজ্জামানের সহকর্মী তুহিঙ্গীর আলম ওরফে তপন জানান, ৩০ এপ্রিল এ ঘটনায় তাঁরা ঝিনাইদহের আদালতে ওমর ফারুককে প্রধান আসামি করে নয়জনের নামে মামলা করেছেন। আদালত মামলাটি এজাহার হিসেবে গ্রহণ করে আইনগত ব্যবস্থা নিতে মহেশপুর থানাকে নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি আরও বলেন, মামলা করার পরদিন থেকে কাজটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। গত শুক্রবার তাঁদের সব শ্রমিককে সাইট থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে কাজটি বন্ধ রয়েছে।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোছা. মেহেরুন নেছা বলেন, চাঁদাবাজেরা তাঁকেও লাঞ্ছিত করেছে। সন্ত্রাসীরা সরকারি কাজ বাধাগ্রস্ত করছে। এলাকার কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, ওমর ফারুক নিজেকে সাংসদের এপিএস দাবি করে। সাংসদের বাসায় যাবতীয় কাজ করে। এ কারণে কেউ ফারুকের অন্যায় কাজের প্রতিবাদ করার সাহস পাচ্ছে না।
ওমর ফারুকের মুঠোফোনে ফোন করলেও সে ধরেনি। সাংসদ নবী নেওয়াজ বলেন, ‘ওমর ফারুক আমার এপিএস নয়। ছাত্রলীগ করার সুবাদে সে আমার বাসায় যাতায়াত করে। তবে এ ঘটনার পর তা-ও বন্ধ করে দিয়েছি।’
মহেশপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহিদুল ইসলাম শাহিন জানান, আদালতের নির্দেশে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।