উদ্ধার হয়নি কার্গো, সুন্দরবনের পানিতে মিশছে সার

পূর্ব সুন্দরবনের মরা ভোলা নদীর ডুবোচরে আটকে পড়া সারবোঝাই কার্গো এমভি জাভা লেমুরকে এখনো উদ্ধার করা হয়নি। এর মধ্যে কার্গোটির তলা ফেটে যাওয়ায় এটি কাত হয়ে কিছুটা ডুবে গেছে। এতে কার্গোতে থেকে যাওয়া সার জোয়ারের পানিতে গলে মিশে যাচ্ছে।

ঘটনা তদন্তে দুটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। একই সঙ্গে পরিবেশের ক্ষতির আশঙ্কায় সুন্দরবন পূর্ব বিভাগ শরণখোলা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে।

৩ মে মংলা বন্দর থেকে কার্গোটি অন্তত ৩০০ টন সার নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যায়। কার্গোটি ওই দিন বিকেল পাঁচটার দিকে মরাভোলার ডুবো চরে আটকা পড়ে। গত সোমবার কার্গোর সার সরিয়ে নিতে এবং আটকে পড়া কার্গোটি উদ্ধারের জন্য মালিক পক্ষ অন্য দুটি কার্গো ঘটনাস্থলে পাঠায়। গতকাল দুপুরে উদ্ধার কাজ শুরু হয়।সন্ধ্যার দিকে আটকা পড়া কার্গোটির তলা ফেটে এক দিকে হেলে পড়লে এর আংশিক পানিতে ডুবে যায়। আজ বুধবার কার্গোটির আশপাশে কাউকে দেখা যায়নি।

আজ সকালে বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মুহা. জাহাংগীর আলম, সুন্দরবন বিভাগের বন সংরক্ষক সুনীল কুমার কুণ্ডু, সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আমীর হুসাইন চৌধুরী ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের বাগেরহাট কার্যালয়ের উপপরিচালক জয়নুল আবেদীন আজ সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।

সাংবাদিকদের সুনীল কুমার কুণ্ডু জানান, কার্গোডুবির ঘটনায় বনের পরিবেশের ক্ষতির আশঙ্কায় শরণখোলা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক কামাল উদ্দিন আহমেদ গতকাল সংশ্লিষ্ট থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছেন। সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আমীর হুসাইন চৌধুরীকে প্রধান করে চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। কমিটিকে আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

সুনীল জানান, বনকর্মীরা ওই কার্গো থেকে নিজস্ব তত্ত্বাবধানে বেশ কিছু সার অপসারণ করেছেন।

বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মুহা. জাহাংগীর আলম বলেন, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসককে (রাজস্ব) প্রধান করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তিন কার্যদিবসের মধ্যে তাঁদের প্রতিবেদন দিতে হবে।

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক দিলীপ দত্ত বলেন, এমওপি একটি রাসায়নিক সার। এটি পানিতে সহজে গলে যায়। বিপুল পরিমাণ এই সার একটি ছোট এলাকায় একসঙ্গে দ্রবীভূত হলে জলজ প্রাণী সম্পদের ওপর মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে। সুন্দরবন একটি স্পর্শকাতর এলাকা। তাই বিষয়টি মাথায় রেখে নিবিড় পর্যবেক্ষণ ও প্রতিরোধ ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।

তবে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের বাগেরহাট কার্যালয়ের উপপরিচালক জয়নুল আবেদীন বলেন, এই সার কৃষি ও মৎস্য চাষে ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হয়। ফলে এই সার জলজ প্রাণীর জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হবে না।

গত বছরের ডিসেম্বর পূর্ব সুন্দরবনের জয়মনির ঘোল এলাকায় শেলা নদীতে জ্বালানি তেলবাহী একটি কার্গো জাহাজ (ট্যাঙ্কার) ডুবে গিয়েছিল। ট্যাঙ্কারে তিন লাখ ৫৭ হাজার ৬৬৪ লিটার জ্বালানি তেল ছিল। ওই তেল নদীতে ছড়িয়ে পড়ায় সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়ে।