জালিয়াতির অভিযোগ বিএনপির

ফরিদপুরের নগরকান্দা পৌরসভার মেয়র পদে গতকাল উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ভোটার না হয়েও মিরাকান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভোটের সারিতে উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক কামরান হোসেন (শুরু থেকে তৃতীয়) এবং সদস্য আনিসুর রহমান (শুরু থেকে ষষ্ঠ) দাঁড়িয়ে আছেন। ছবিটি দুপুরে তোলা l প্রথম আলো
ফরিদপুরের নগরকান্দা পৌরসভার মেয়র পদে গতকাল উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ভোটার না হয়েও মিরাকান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভোটের সারিতে উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক কামরান হোসেন (শুরু থেকে তৃতীয়) এবং সদস্য আনিসুর রহমান (শুরু থেকে ষষ্ঠ) দাঁড়িয়ে আছেন। ছবিটি দুপুরে তোলা l প্রথম আলো

সকাল ৮টা ৫৩। ভোট শুরু হয়েছে মাত্র ৫৩ মিনিট। ওই সময়েই একটি বুথে ১৪৮টি ব্যালট পেপারে সিল পড়েছে। অথচ কেন্দ্রটি ফাঁকা। গতকাল বুধবার সকালে ফরিদপুরের নগরকান্দা পৌরসভার মেয়র পদে উপনির্বাচনে এটা ছিল ২ নম্বর ওয়ার্ডের মদিনাতুল উলুম মাদ্রাসা কেন্দ্রের চিত্র।
বুথে ভোটার নেই অথচ ৫৩ মিনিটে ১৪৮টি ব্যালটে সিল পড়ার বিষয়ে পোলিং কর্মকর্তা ইমরুল হাসান বলেন, ভোটাররা সবাই ব্যস্ত। তাই তড়িঘড়ি করে ভোট দিয়ে যার যার কাজে চলে গেছেন।
উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ-সমর্থিত প্রার্থী ও উপজেলা ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির আহ্বায়ক মো. রায়হান উদ্দীন (নারকেলগাছ) এবং বিএনপি-সমর্থিত প্রার্থী ও উপজেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক মো. আসাদুজ্জামান (জগ) প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। তবে ভোট গ্রহণ শুরুর দেড় ঘণ্টার মাথায় ব্যাপক অনিয়ম ও কারচুপির অভিযোগে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন আসাদুজ্জামান।
সরেজমিনে নয়টি কেন্দ্রের কোনো বুথেই বিএনপির প্রার্থীর এজেন্ট দেখা যায়নি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইমরুল হাসান বলেন, ‘তারা না এলে আমি কী করব।’
মদিনাতুল উলুম মাদ্রাসা কেন্দ্রে দেখা গেছে, আওয়ামী লীগ-সমর্থিত প্রার্থীর পোলিং এজেন্টের বসার জায়গা করা হয়েছে গোপন কক্ষের সঙ্গে। সেখান থেকে উঁকি দিলেই ভোটার কোন প্রতীকে ভোট দিচ্ছেন, তা বোঝা যায়।
কাসিমপুর উলুম মাদ্রাসা, মিরেরকান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সরকারি নগরকান্দা মহাবিদ্যালয় ও মদিনাতুল উলুম মাদ্রাসা কেন্দ্রে উপজেলা ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাদের নেতৃত্বে ব্যালট পেপারে সিল মারতে দেখা গেছে।
নগরকান্দা মহাবিদ্যালয় কেন্দ্রে বিএনপির প্রার্থীর পোলিং এজেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে আসা এক তরুণ বলেন, ‘সকাল সোয়া আটটার দিকে সন্ত্রাসীরা আমাকে হুমকি দিয়ে বলে, তুই নিজে থেকে চলে যাবি, না তোর চোখ উপড়ে দেব?’

উপনির্বাচন বর্জন করে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির নির্বাহী সদস্য শামা ওবায়েদ নগরকান্দায় নিজ বাসভবনে গতকাল সংবাদ সম্মেলন করেন l প্রথম আলো
উপনির্বাচন বর্জন করে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির নির্বাহী সদস্য শামা ওবায়েদ নগরকান্দায় নিজ বাসভবনে গতকাল সংবাদ সম্মেলন করেন l প্রথম আলো


সকাল সোয়া ১০টার দিকে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় কেন্দ্রে কয়েকজন তরুণকে ভোট দেওয়ার জন্য সার বেঁধে দাঁড়াতে দেখা যায়। তাঁদের হাত পরীক্ষা করে বাঁ হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলে অমোচনীয় কালি দেখে সংশিষ্ট কর্মকর্তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তরুণেরা পালিয়ে যান। এ ব্যাপারে কেন্দ্রের বাইরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত এক কর্মকর্তার দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমাদের দায়িত্ব কেন্দ্রের বাইরের শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষা করা। ভেতরে কী হচ্ছে, তা দেখার কাজ আমাদের নয়।’
সকাল আটটা থেকে ভোট গ্রহণ শুরু হলেও সোয়া নয়টা পর্যন্ত নির্বাহী হাকিমদের অধিকাংশ কেন্দ্রে দেখা যায়নি। সংশ্লিষ্ট দুই হাকিমের মুঠোফোনে ফোন করে জানা যায়, তাঁরা উপজেলা পরিষদে সভা করছেন। জানতে চাইলে ইউএনও আবদুল আজিজ বলেন, গাড়ি নষ্ট হওয়ায় কোনো কোনো হাকিমের কেন্দ্রে পৌঁছাতে দেরি হয়েছে। তবে সাড়ে নয়টা পর্যন্ত কোনো ম্যাজিস্ট্রেট কেন্দ্রে যাননি—এ অভিযোগ ঠিক নয়।
সকাল সাড়ে নয়টায় এমএন একাডেমি কেন্দ্রের সামনে সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন বিএনপি-সমর্থিত প্রার্থী আসাদুজ্জামান। পরে দুপুর ১২টার দিকে লস্করদিয়াস্থ বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য শামা ওবায়েদের বাড়িতে সংবাদ সম্মেলনে আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেওয়া হয়।
সংবাদ সম্মেলনে শামা ওবায়েদ অভিযোগ করেন, নগরকান্দায় ভোটের নামে প্রহসন করে গণতন্ত্রকে হত্যা করা হয়েছে। এর ফলে অপমান করা হয়েছে নগরকান্দা পৌরবাসীকে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ-সমর্থিত প্রার্থী পৌরসভার বাইরে থেকে দলীয় মাস্তান নিয়ে এসে জাল ভোট দিয়েছেন।
তবে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বেলায়েত হোসেন বলেন, বিএনপি সমর্থিত-প্রার্থী পূর্বপরিকল্পনার অংশ হিসেবে কারচুপি ও নির্বাচন বর্জনের একটি সাজানো নাটক করেছেন।
রিটার্নিং কর্মকর্তা ফরিদুল ইসলাম বলেন, ‘ভোট শুরুর আগে আমি বিএনপি-সমর্থিত প্রার্থীর এজেন্টদের কেন্দ্রে দেখেছি। তারপর কী হয়েছে আমি বলতে পারব না।’
এদিকে সন্ধ্যা ছয়টার দিকে উপনির্বাচনের বেসরকারি ফল ঘোষণা করা হয়। ইউএনও আবদুল আজিজ জানান, আওয়ামী লীগের প্রার্থী রায়হান উদ্দিন মিয়া ৫ হাজার ৪৮৫ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। বিএনপি-সমর্থিত প্রার্থী পেয়েছেন ১৫৭ ভোট। পৌরসভার মোট ভোটার ৭ হাজার ৫১৯ জন।
নগরকান্দা পৌরসভার সাবেক মেয়র জাহিদ হোসেন ওরফে খোকন যুদ্ধাপরাধী মামলায় দণ্ডিত হলে মেয়র পদটি শূন্য হয়।