'কয়েক হাজার' মানুষ পাচার করেছেন ধলু

ধলু হোসেন
ধলু হোসেন

কক্সবাজারের টেকনাফে গতকাল শুক্রবার পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত জলদস্যু ধলু হোসেন (৫৩) সাত বছরে কয়েক হাজার মানুষ মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ড পাচার করেছেন। সাগরে তাঁর তিনটি ট্রলার ডুবির ঘটনায় মারা গেছেন শতাধিক যাত্রী। পুলিশ ও স্থানীয় বিভিন্ন সূত্র এ কথা জানিয়েছে।
স্থানীয় লোকজন বলেন, রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়ায় থেকে ধলু দস্যুবাহিনী গড়ে তুলে টেকনাফ সমুদ্র উপকূলে মাছ ধরার ট্রলারে লুটপাট ও মানব পাচার করতেন।
স্থানীয় বিভিন্ন সূত্র জানায়, শাহপরীর দ্বীপের বাজারপাড়ার ধলু ২০ বছর আগে ট্রলারের শ্রমিক ছিলেন। একপর্যায়ে তিনি সাগরে দস্যুতা ও মানব পাচারের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। এলাকায় প্রচার আছে, আট বছর আগে ধলুর হাত ধরেই মালয়েশিয়ায় সমুদ্রপথে মানব পাচার শুরু হয়। এই পাচার করতে গিয়ে সাত বছর আগে মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর গুলিতে ধলু হোসেনের বড় ভাই নূর মোহাম্মদ, ছোট ভাই নবী হোসেন ও ভগ্নিপতি মো. ফারুক নিহত হন। এরপর ধলুর সঙ্গে যুক্ত হন তাঁর ছোট দুই ভাই নূর হোসেন ও মো. ইউনুস।
নূর হোসেন বলেন, ‘এক সময় সাংসদ আবদুর রহমান বদির সঙ্গে ধলু হোসেনের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। গত উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে সাংসদ বদি-সমর্থিত চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী জাফর আলমের জন্য এলাকায় কাজ করেছেন ধলু।’
টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুল বশর বলেন, ‘যে দল ক্ষমতায় আসে, সেই দলের নেতাদের চাঁদা দিয়ে মানব পাচার ও সাগরে দস্যু বাহিনী লালন করতেন দস্যু সম্রাট ধলু। গত সাত বছরে ধলু প্রায় পাঁচ হাজার মানুষ পাচার করেছেন। ধলুর সঙ্গে সাংসদ বদি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জাফর আলমের ভালো সম্পর্কের কথা এলাকার সবার জানা।’
পুলিশ ও স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, ২০১২ সালের ৭ নভেম্বর রাতে ধলুর লোকজন ১১০ জনকে মালয়েশিয়ায় পাচারের জন্য একটি ট্রলারে তুলে দেন। রাত তিনটার দিকে ৪০ জনের ধারণক্ষমতার ট্রলারটি সাগরে ডুবে যায়। সকালে তিনজনের লাশ ও ২৮ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়। নিখোঁজ হন ৭৯ যাত্রী। ওই ট্রলারের উদ্ধার হওয়া যাত্রী শাহপরীর দ্বীপের আবু বক্কর বলেন, ধলুর লোকজন ওই সময় প্রতিদিন ট্রলারে করে ৪০০ থেকে ৫০০ জনকে মালয়েশিয়ায় পাঠাতেন।
২০১২ সালের ৩০ অক্টোবর সেন্ট মার্টিন উপকূলে ধলুর সিন্ডিকেটের আরেকটি ট্রলার ডুবে যায়। এ ঘটনায় ছয় যাত্রীকে জীবিত উদ্ধার করা হয়। নিখোঁজ হন ১২২ জন। এই দুটি ট্রলারডুবির ঘটনায় ধলুর বিরুদ্ধে টেকনাফ থানায় মামলা হয়।
টেকনাফ মডেল থানার ওসি মো. আতাউর রহমান খন্দকার জানান, ধলু স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত শীর্ষ মানব পাচারকারী। মানব পাচারের অভিযোগে টেকনাফ থানায় তাঁর বিরুদ্ধে নয়টি মামলা আছে।
পুলিশের দেওয়া একটি তদন্ত প্রতিবেদনে মালয়েশিয়ার নারী মানাংকিসহ থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া ও মিয়ানমারের ১১ জন মানব পাচারকারীর নাম আছে। ওই তালিকায় বাংলাদেশের ২৩০ জন পাচারকারীর নামের মধ্যে ধলুর নামও আছে।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তোফায়েল আহমদ বলেন, দস্যু ও শীর্ষ মানব পাচারকারী ধলু প্রলোভন দিয়ে পাঁচ বছরে কয়েক হাজার মানুষকে মালয়েশিয়া পাঠানোর নামে সমুদ্রপথে ঠেলে দিয়েছেন। বন্দুকযুদ্ধে ধলুসহ তিন মানব পাচারকারীর মৃত্যুতে এলাকার মানুষ খুশি।