ধাক্কাধাক্কিতে একজনের মৃত্যু

নরসিংদীর শিবপুরে সাংসদের মেয়ের বিয়ে উপলক্ষে গতকাল শনিবার স্থানীয় বাজনাব আবুল ফায়েজ মোল্লা উচ্চবিদ্যালয় মাঠে প্রীতিভোজ হয়। অনুষ্ঠানের সাজসজ্জা ও প্যান্ডেল তৈরির জন্য পাঁচ দিন ধরে এই বিদ্যালয়ে পাঠদান বন্ধ রাখা হয়। এদিকে প্যান্ডেলে আসা-যাওয়ার সময় ধাক্কাধাক্কিতে অসুস্থ হয়ে একজন মারা গেছেন।
বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি স্থানীয় সাংসদ মো. সিরাজুল ইসলাম মোল্লা। তিনি কেন্দ্রীয় যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য। সম্প্রতি তাঁর বড় মেয়ে সায়মা ইসলামের বিয়ে সম্পন্ন হয়। এ উপলক্ষে গতকাল ওই বিদ্যালয় ভবনে এবং মাঠে প্রায় ১৫ হাজার লোকের ভোজের আয়োজন করা হয়। সেখানে রাজধানীর নিউ গুলশান ডেকোরেটরের কর্মীরা ১০ দিন আগে থেকে সাজসজ্জার কাজ শুরু করেন। ফলে পাঁচ দিন আগে থেকেই শিক্ষার্থীদের পাঠদান বন্ধ করে দেয় বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
গতকাল প্যান্ডেলের ভেতরে আসা-যাওয়ার সময় ধাক্কাধাক্কিতে কমপক্ষে ১০ জন অতিথি আহত হন। আহতদের একজন ফজলু মিয়াকে শিবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়ার পথে মারা যান।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক গোলাম ফারুক বলেন, মৃত অবস্থায় ফজলু মিয়া নামের একজনকে এবং অসুস্থ আরও কয়েকজনকে হাসপাতালে আনা হয়েছিল।
সরেজমিনে গতকাল দুপুরে দেখা যায়, বিদ্যালয়ের মাঠে বিশাল প্যান্ডেল। এর ভেতরে ২৫২টি টেবিল বসানো। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের জন্য বসার জায়গা করা হয়েছে বিদ্যালয় ভবনে। সেখানে ৩৫০ জন কর্মী খাওয়ানোর কাজে ব্যস্ত।
একজন অভিভাবক ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, ‘এমপি সাহেবের বাবার নামে স্কুল। তাই বলে যা ইচ্ছা তা তিনি করতে পারেন না। পরীক্ষার আগে শিক্ষার্থীদের পাঠদান বন্ধ করে নিজের মেয়ের বিয়ের অনুষ্ঠান করা খুবই দুঃখজনক।’
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবদুর রহিম মৃধা প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিদ্যালয় মাঠে অনুষ্ঠানের পক্ষে আমি ছিলাম না। এমপি সাহেবের স্কুল। তিনি চাইলে আমার কী করার আছে। শিক্ষার্থীরা স্কুলে এলেও চার-পাঁচ দিন ক্লাস করতে পারছে না।’
সাংসদ সিরাজুল ইসলাম মোল্লার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাঁকে পাওয়া যায়নি। তবে সাংসদের ঘনিষ্ঠ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুজ্জামান বলেন, গরমে ও ধাক্কাধাক্কিতে একজন অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।
জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. সৈয়দ উদ্দিন বলেন, একজন প্রধান শিক্ষক ইচ্ছে করলে সর্বোচ্চ এক দিন বিদ্যালয় বন্ধ রাখতে পারেন। সেটাও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি সাপেক্ষে। পাঠদান বন্ধ বা স্কুল বন্ধের বিষয়টি তাঁর জানা নেই। এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে সত্যতা পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।