ল্যাবএইড হাসপাতালের সামনে বিক্ষোভ

ভুল চিকিৎসার অভিযোগ এনে গতকাল বুধবার রাজধানীর ল্যাবএইড হাসপাতালের সামনে তিন ঘণ্টা অবরোধ কর্মসূচি পালন করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা। পরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর পরিবারের সঙ্গে বৈঠক করার আশ্বাস দিলে শিক্ষার্থীরা অবরোধ তুলে নেন।
গতকাল পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থী প্রথমে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করেন। এরপর মিছিল নিয়ে বেলা একটার দিকে অবরোধ করেন ল্যাবএইড হাসপাতাল। শিক্ষার্থীদের দাবি, চিকিৎসকের ভুলে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র মোস্তাফিজুর রহমান এখন মৃত্যুপথযাত্রী। তাঁরা অভিযুক্ত চিকিৎসকের সনদ বাতিল ও ক্ষতিপূরণ দাবি করেছেন।
মোস্তাফিজের সহপাঠীরা জানান, ২০১০ সালে মোস্তাফিজের বাঁ পায়ের গোড়ালিতে টিউমার ধরা পড়লে চিকিৎসার জন্য ল্যাবএইড হাসপাতালের অর্থোপেডিকস বিভাগের প্রধান আমজাদ হোসেনকে দেখান। আমজাদ এই রোগকে ‘জেনথোমা’ হিসেবে চিহ্নিত করেন। তাঁর পরামর্শে ২০১২ সালের ১ ফেব্রুয়ারি অস্ত্রোপচার করা হয়। এরপর ৬ তারিখে ‘বায়োপসি’ রিপোর্ট দেখে একই রোগ বলে উল্লেখ করেন এবং কোনো সমস্যা নেই মন্তব্য করে তাঁর কথামতো ওষুধ চালিয়ে যেতে বলেন। এরপর মোস্তাফিজের অবস্থা খারাপ হলে জুলাই মাসে আমজাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ওষুধের পাশাপাশি লবণ ও গরম পানি দিয়ে সেক দিতে বলেন। অবস্থার উন্নতি না হলে চলতি বছরের ৮ এপ্রিল আমজাদ পুনরায় অস্ত্রোপচার করতে বলেন।
পরবর্তী সময়ে মোস্তাফিজের পরিবারের পক্ষ থেকে পঙ্গু হাসপাতাল ও লালমাটিয়ার অনকোলজি সেন্টারের চিকিৎসকের কাছে যান। তাঁরা বলেন, মোস্তাফিজ ক্যানসারে আক্রান্ত।
মোস্তাফিজের পরিবারের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে তাঁকে কলকাতার টাটা মেডিকেল সেন্টারে পাঠায় ল্যাবএইড কর্তৃপক্ষ। সেখান থেকে জানানো হয়, ক্যানসার পুরো শরীরে ছড়িয়ে পড়েছে। আর চিকিৎসা সম্ভব নয়।
সহপাঠীদের দাবি, ল্যাবএইডের চিকিৎসকের ভুল চিকিৎসার কারণেই মোস্তাফিজুর এখন মরণাপন্ন। তাঁরা চিকিৎসকের সনদ বাতিল ও মোস্তাফিজের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবি তুলেছেন।
এ বিষয়ে আমজাদ হোসেন গতকাল সাংবাদিকদের বলেন, অস্ত্রোপচারের পর মোস্তাফিজ প্রায় এক বছর পর তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। সময়ক্ষেপণ করার কারণে সমস্যা হয়েছে।
মোস্তাফিজের বড় ভাই মাহবুবুর রহমান বলেন, আমজাদ অস্ত্রোপচারের পর আর কোনো সমস্যা নেই বলায়ই তাঁরা যোগাযোগ করেননি।
ল্যাবএইডের পরিচালক মাহবুবুল ইসলাম বলেছেন, তাঁরা মোস্তাফিজকে চিকিৎসার জন্য বাইরে পাঠিয়েছিলেন এবং এখনো চিকিৎসার ব্যয় বহন করতে রাজি আছেন।
ল্যাবএইড কর্তৃপক্ষ কাল শুক্রবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও মোস্তাফিজের পরিবারের সঙ্গে আলোচনায় বসার লিখিত আশ্বাস দিলে বিকেল চারটার দিকে শিক্ষার্থীরা ঘেরাও কর্মসূচি প্রত্যাহার করেন।