বিদ্যুৎ-বৈষম্যের শিকার নাজিরহাট পৌরসভা!

ফটিকছড়ি উপজেলার নাজিরহাট পৌরসভায় প্রতিদিন ১২ ঘণ্টারও বেশি লোডশেডিং হচ্ছে। এই পৌরসভায় দৈনিক চার মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা থাকলেও সরবরাহ করা হচ্ছে এক থেকে দেড় মেগাওয়াট। ফলে পৌরসভায় অবস্থিত ৫০ শয্যার স্বাস্থ্যকেন্দ্র, খাদ্যগুদাম, কলেজ, মাদ্রাসা, বিদ্যালয়, চা–বাগান ও বিভিন্ন শিল্পকারখানায় বিদ্যুৎ–ঘাটতি মারাত্মক আকার ধারণ করেছে।
পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তারা জানান, ফটিকছড়ি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির দুটি উপকেন্দ্র থেকে ১০টি সঞ্চালন লাইনের মাধমে দৈনিক ১৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয় উপজেলার বিভিন্ন এলাকায়। এর মধ্যে ৫ নম্বর সঞ্চালন লাইনের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয় নাজিরহাট পৌরসভা, সুয়াবিল, বৈদ্যারহাট, উদালিয়া চা–বাগান, বারমাসিয়া চা–বাগান, ফরহাদাবাদ ও দৌলতপুর ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামে।
এলাকাবাসী জানান, এই সঞ্চালন লাইনের আওতায় উপজেলার ৫০ শয্যাবিশিষ্ট স্বাস্থ্যকেন্দ্র, উপজেলা খাদ্যগুদাম, বীজাগার, একটি কলেজ, সাতটি মাদ্রাসা, ১০টি উচ্চবিদ্যালয়, ছয়টি কিন্ডারগার্টেন, দুটি চা-বাগান এবং অন্তত ১০টি ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পপ্রতিষ্ঠান আছে। বিদ্যুৎ না পাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে প্রতিষ্ঠানগুলো। এই এলাকার ১০ হাজার গ্রাহক বিদ্যুৎ–বিভ্রাট থেকে মুক্তি চান।
চট্টগ্রাম পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ ফটিকছড়ির উপমহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) মো. গিয়াস উদ্দিন নাজিরহাট পৌরসভায় কম বিদ্যুৎ দেওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, লাইনটি চালু করতে বিদ্যুতের বেশি লোডের প্রয়োজন হয়, তাই গ্রাহকেরা কিছুটা কম বিদ্যুৎ পাচ্ছেন। আর সদরে একটু বেশি বিদ্যুৎ দিতে হচ্ছে।
সুয়াবিল ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মুহাম্মদ আবু তালেব চৌধুরী বলেন, দীর্ঘদিন ধরে এই ৫ নম্বর সঞ্চালন লাইনটিতে অধিকাংশ সময় বিদ্যুৎ থাকে না। অথচ পাশ্ববর্তী হাটহাজারী ও রাউজান উপজেলায় লোডশেডিং করা হয় খবুই কম।
ফটিকছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রের আবাসিক স্বাস্থ্য কর্মকর্তা (আরএমও) এইচ এস রাশেদুল আলম বলেন, বিদ্যুতের অভাবে রোগীদের সেবা দেওয়া অনেক সময় কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে। মোমবাতি কিংবা হারিকেন জ্বালিয়ে প্রসূতি সেবা দিতে হয়। বারমাসিয়া চা বাগানের আবাসিক ব্যবস্থাপক বাবুল বিশ্বাস প্রথম আলোকে বলেন, উপজেলায় ১৭ চা বাগানের মধ্যে এ সঞ্চালন লাইনের আওতায় দুটি চা বাগান রয়েছে। কিন্তু লোড বেশি লাগে এমন অজুহাতে এ লাইনটি অধিকাংশ সময় বন্ধ রাখা হয়। ফলে চা উৎপাদন নেমেছে অর্ধেকে।
পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ এর মহাব্যবস্থাপক (জিএম) মো. আবু বক্কর বলেন, এ উপজেলার দুটি উপকেন্দ্রের ১০টি সঞ্চালন লাইনে ২২ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদার বিপরীতে পাওয়া যাচ্ছে সর্বোচ্চ ১৪-১৫ মেগাওয়াট। অথচ নাজিরহাট সঞ্চালন লাইনটিতে সবচেয়ে বেশি বিদ্যুৎ সংযোগ এবং কলকারখানা থাকায় তা চালু করতেই প্রয়োজন হয় কমপক্ষে তিন থেকে চার মেগাওয়াট। বরাদ্দের অভাবে ওই লাইনটিতে অনেক সময় বিদ্যুৎ দেওয়া যায় না।