বাজার, ঘরবাড়ি বিলীন হওয়ার শঙ্কা

জামালপুরের ইসলামপুরে যমুনার ভাঙনে ধসে গেছে গুঠাইল বাঁধের কিছু অংশ। এতে গুঠাইল বাজারসহ অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, কার্যালয় ও বসতবাড়ি ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে। ছবিটি গত মঙ্গলবার তোলা l প্রথম আলো
জামালপুরের ইসলামপুরে যমুনার ভাঙনে ধসে গেছে গুঠাইল বাঁধের কিছু অংশ। এতে গুঠাইল বাজারসহ অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, কার্যালয় ও বসতবাড়ি ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে। ছবিটি গত মঙ্গলবার তোলা l প্রথম আলো

জামালপুরের ইসলামপুর উপজেলার গুঠাইল বাঁধের (হার্ড পয়েন্ট) বেশির ভাগ অংশ বন্যায় ধসে গেছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত ওই অংশ মেরামতের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। ফলে যমুনায় পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে গুঠাইল বাজার, কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, কার্যালয়সহ পাঁচ শতাধিক বসতবাড়ি বিলীন হওয়ার আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসী।
স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কিছুদিনের মধ্যে গুঠাইল বাঁধের মেরামত করা না হলে চিনাডুলি ইউনিয়ন ভূমি কার্যালয়, সরকারি খাদ্যগুদাম, গুঠাইল হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজ, গুঠাইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, গুঠাইল দাখিল মাদ্রাসা, গুঠাইল বাজারের চার পাশে অবস্থিত চারটি মসজিদ, গুঠাইল বাজারে থাকা প্রায় এক হাজার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, সড়ক ও কয়েক হাজার গাছপালা যমুনায় বিলীন হয়ে যেতে পারে। গত বছর ভাঙনের সময় পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কিছু বালুর বস্তা (জিও ব্যাগ) ফেলা ছাড়া গুরুত্বপূর্ণ এই বাঁধ রক্ষায় কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। কবে বাঁধের মেরামতের কাজ হবে তাও তাঁরা জানেন না।
পাউবোর জামালপুর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯৫ সালে একটি প্রকল্পের আওতায় ৪৪ কোটি টাকা ব্যয়ে গুঠাইল বাজারসহ ওই এলাকার বিস্তীর্ণ জনপদ রক্ষায় যমুনার ৬১০ মিটার তীর সংরক্ষণ বাঁধ নির্মাণ করা হয়। গত বছরের বন্যায় ওই বাঁধের প্রায় ২০০ মিটার নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। এ ছাড়া ২০০৩ সালে বাঁধের প্রায় দুই শ মিটার অংশ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। এলাকাবাসী বলছেন, এ পর্যন্ত ওই ৪০০ মিটার অংশ সংস্কারের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। তবে ভাঙন শুরু হলে কিছু বালুর বস্তা ফেলা হয় মাত্র।
গত মঙ্গলবার সরেজমিনে দেখা যায়, বাঁধের একটি অংশ ধসে গিয়ে ভাঙন গুঠাইল বাজারের কাছাকাছি চলে এসেছে। এ ছাড়া এই বাঁধের বিভিন্ন স্থানে বড় বড় ফাটল দেখা দিয়েছে। বাঁধের পাশে গড়ে ওঠা ব্যবসা প্রতিষ্ঠাগুলো সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। গুঠাইল সরকারি খাদ্যগুদাম থেকে ১০ থেকে ১৫ মিটার দূরেই ভাঙনস্থল।
এ সময় গুঠাইল বাজারের কীটনাশক ব্যবসায়ী শামীম আহম্মদ জানান, পানি বাড়তে শুরু করলে কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই আবার ভাঙন শুরু হবে। ইসলামপুর পশ্চিম অঞ্চলের কুলকান্দি, চিনাডুলি, বেলগাছা ও সাপধরীসহ ছয়টি ইউনিয়নের লক্ষাধিক মানুষ সর্বস্বান্ত হয়েছে যমুনা নদীর ভাঙনে। এসব মানুষের সর্বশেষ আশ্রয়স্থল এখন গুঠাইল বাজার। যমুনার ভাঙনের তীব্রতা এত বেশি সেখানে বালুর বস্তা ফেলে ভাঙন রোধ করা সম্ভব না। তাই পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বাজার নদীগর্ভে যেতে শুরু করবে।
চিনাডুলি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) এক নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য শাহজাহান কবীর জানান, ভাঙনকবলিত লক্ষাধিক মানুষের একমাত্র আশ্রয় ও কর্মস্থল গুঠাইল বাজার। সেখানে ব্যবসা, শ্রমিকের কাজ এবং চরাঞ্চলে চাষ হওয়া বিভিন্ন কাঁচামাল বিক্রি করে সংসার চালায় তারা। প্রতি সপ্তাহে এই বাজারে লক্ষাধিক মানুষ কেনাকাটা করতে আসে। চরাঞ্চলের লোকজন পাট থেকে শুরু করে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনাবেচা করে থাকেন। বাজারটি নদীগর্ভে চলে গেলে এসব লোকের দুঃখের সীমা থাকবে না। নদীতে পানি বাড়তে শুরু করেছে। ভাঙন শুরু হলে বালুর বস্তা ফেলে কোনো লাভ নেই। গতবারও তাই করেছে পাউবোর কর্মকর্তারা, তাতে কিছুই লাভ হয়নি। বাজার রক্ষায় দু-এক দিনের মধ্যে বাঁধ মেরামতের কাজ শুরু করার দাবি জানান তিনি।
পাউবো জামালপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী নবকুমার চৌধুরী জানান, বাঁধের ধসে যাওয়া ২০০ মিটার প্রতিরক্ষামূলক কাজের জন্য ১ কোটি ৫৮ লাখ টাকার অনুমোদন পাওয়া গেছে। আগামী সপ্তাহের মধ্যে কাজ শুরু হবে।