১৪ বছর পর বসছে সিনেট অধিবেশন

দীর্ঘ প্রায় ১৪ বছর পর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট অধিবেশন হতে যাচ্ছে। ১৮ মে এ অধিবেশন হওয়ার কথা। অধিবেশন আহ্বান করে সিনেটের সচিব ইতিমধ্যে সদস্যদের চিঠি দিয়েছেন। অধিবেশনের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সিনেটের সভাপতি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যও। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বশেষ সিনেট অধিবেশন হয়েছিল ২০০১ সালের জুনে।
১৯৭৩ সালের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ অনুযায়ী, উপাচার্য বছরে অন্তত একবার সিনেটের সভা আহ্বান করবেন, যা বার্ষিক সভা হিসেবে অভিহিত হবে। উপাচার্য চাইলে এর বাইরেও বিশেষ সভা আহ্বান করতে পারেন। সিনেটের সভাতেই বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নির্বাচন, বাজেট অনুমোদন, আইন সংশোধনসহ যেকোনো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। কিন্তু গত ১৪ বছরে সিনেটের অধিবেশন হয়নি।
দীর্ঘদিন ধরে নির্বাচন না হওয়ায় সিনেটে রেজিস্টার্ড গ্র্যাজুয়েট ক্যাটাগরির ২৫টি পদ এখন মেয়াদোত্তীর্ণ। রাকসু নির্বাচন না হওয়ায় শূন্য রয়েছে ছাত্র প্রতিনিধির পাঁচটি পদও। স্পিকার কর্তৃক মনোনীত পাঁচজন সাংসদ সিনেটের সদস্য থাকার কথা থাকলেও তাও শূন্য। তবে দীর্ঘ বিরতির পর হলেও বর্তমান প্রশাসন সিনেট অধিবেশন আহ্বান করায় সাধুবাদ জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ও সিনেটের সচিব মু. এন্তাজুল হক বলেন, গত সংসদের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় সিনেটে আগের সংসদ সদস্যদের সদস্যপদ বিলুপ্ত হয়। নতুন সংসদ সদস্যরা নির্বাচিত হওয়ার পর স্পিকারের কাছে মনোনয়ন চেয়ে চিঠি পাঠানো হয়। কিন্তু স্পিকার এখনো মনোনয়ন না দেওয়ায় সংসদ সদস্যদের পদগুলো শূন্য রয়েছে।
রেজিস্টার্ড গ্র্যাজুয়েটদের বিষয়ে এন্তাজুল হক বলেন, দীর্ঘদিন সিনেট না বসায় তাঁদের মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। কিন্তু পরবর্তী নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত আগের গ্র্যাজুয়েটরাই সদস্য হিসেবে থাকবেন। তাঁরা এই সিনেট অধিবেশনে অংশগ্রহণ করবেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার দপ্তর সূত্রে জানা যায়, সিনেটের গুরুত্বপূর্ণ ২৫টি পদ রয়েছে রেজিস্টার্ড গ্র্যাজুয়েটদের। রেজিস্টার্ড গ্র্যাজুয়েট ক্যাটাগরিতে সর্বশেষ নির্বাচন হয়েছিল ১৯৯৪ সালের ৩১ মে। মেয়াদ শেষ হয় ১৯৯৭ সালের ৩০ মে। এর পরও ২০০১ সালে অনুষ্ঠিত সিনেট অধিবেশনে এসব সদস্যই অংশগ্রহণ করেন। এরপর দীর্ঘ সময় অতিক্রম হলেও গ্র্যাজুয়েট ক্যাটাগরির নির্বাচন হয়নি। সিনেটে শিক্ষকদের ৩৩টি পদের নির্বাচন হয় ২০১৪ সালের ২৪ এপ্রিল।
বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তর থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ১০৪ সদস্যের সিনেট বডির মধ্যে সাংসদদের পাঁচটি পদ, শিক্ষা পরিষদ মনোনীত কলেজ অধ্যক্ষের তিনটি, কলেজশিক্ষকদের একটি, রেজিস্টার্ড গ্র্যাজুয়েটদের চারটি, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের একটি ও ছাত্র প্রতিনিধিদের পাঁচটি পদ শূন্য রয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, এবারের অধিবেশনটি বার্ষিক অধিবেশন হিসেবেই অনুষ্ঠিত হবে। এতে একটি নতুন ইনস্টিটিউট, একটি ইনস্টিটিউটে স্নাতক কোর্স চালু, বাজেট ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চাকরির বয়সসীমা ৬২ থেকে বাড়িয়ে ৬৫ করার আইনসহ বেশ কয়েকটি আইন অনুমোদন করা হবে।
এক যুগের বেশি সময় ধরে সিনেট অধিবেশন না বসা নিয়ে ২০১৩ সালের ১৯ জুন প্রথম আলোয় ‘সিনেট অকার্যকর এক যুগ’ শিরোনামে একটি বিশেষ প্রতিবেদন ছাপা হয়। ওই সময় দায়িত্ব নিয়ে বর্তমান উপাচার্য মুহম্মদ মিজানউদ্দিন প্রথম আলোকে বলেছিলেন, ‘আমরা সবে দায়িত্ব নিয়েছি। আমরা যত দ্রুত সম্ভব সিনেট অধিবেশন ডাকতে চাই।’
জানতে চাইলে উপাচার্য মুহম্মদ মিজানউদ্দিন বলেন, বর্তমান প্রশাসন দায়িত্ব নেওয়ার পর সিনেট কার্যকরের উদ্যোগ নেওয়া হয়। ২০১৪ সালে সিনেটে শিক্ষক প্রতিনিধিদের নির্বাচন হলেও নানা জটিলতার কারণে রেজিস্টার্ড গ্র্যাজুয়েটদের নির্বাচন করা সম্ভব হয়নি। তার পরও সিনেট অধিবেশন হচ্ছে। আগামী বছর থেকে নিয়মিত সিনেট অধিবেশন হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।