মাইক্রোবাসে গণধর্ষণ: ধর্ষকদের শাস্তির দাবি

রাজধানীতে চলন্ত মাইক্রোবাসে গারো তরুণীকে গণধর্ষণের ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। আজ শনিবার একাধিক সংগঠন মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে, নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন অনেকেই।

‘ঢাকার রাস্তায় নারী ধর্ষণের প্রতিবাদে’ বিকেল পাঁচটার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের (টিএসসি) রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে মানববন্ধন ও আলোক প্রজ্বালন করেছে যৌন নিপীড়নবিরোধী নির্দলীয় ছাত্রজোট। এই মানববন্ধনে সংহতি জানিয়েছে গারো স্টুডেন্ট ইউনিয়ন। মানববন্ধনে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ছাড়াও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নেন।

মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারীরা মুখে কালো কাপড় বেঁধে এ ঘটনার প্রতিবাদ জানান। এ সময় তাঁরা ‘হে রাষ্ট্র নারীর নিরাপত্তা কোথায়? ’, ‘আর কত নারীর সম্ভ্রম দিলে রাষ্ট্র তুমি জাগবে? ’, ‘ধর্ষণকারীদের ফাঁসি চাই’, ‘নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত কর’—ইত্যাদি লেখা সংবলিত প্ল্যাকার্ড বহন করেন। ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধন শেষে সন্ধ্যায় মোমবাতি জ্বেলে তাঁরা শহীদ মিনারে যান।

গত বৃহস্পতিবার রাতে কুড়িল বাসস্ট্যান্ড থেকে এক আদিবাসী তরুণীকে জোর করে মাইক্রোবাসে তুলে ধর্ষণ করে একদল দুর্বৃত্ত। ওই তরুণী যমুনা ফিউচার পার্কে একটি পোশাকের দোকানে কাজ করেন। এ ঘটনায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে ধর্ষণের অভিযোগে গতকাল শুক্রবার ভাটারা থানায় মামলা হয়েছে। নারী লাঞ্ছনা ও যৌন নির্যাতনের বিরুদ্ধে দেশব্যাপী যখন বিভিন্ন কর্মসূচি পালিত হচ্ছে, সেই সময়ে ধর্ষণের ঘটনা ঘটল।

এদিকে, বিকেলে প্রায় একই সময়ে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে বাংলাদেশ নারীমুক্তি কেন্দ্র। আয়োজক সংগঠনের সভাপতি সীমা দত্তের সভাপতিত্বে সমাবেশে সাধারণ সম্পাদক মর্জিনা খাতুন, বাংলাদেশ হিল উইমেন ফেডারেশনের সভাপতি নিরূপা চাকমা প্রমুখ বক্তব্য দেন। তাঁরা বলেন, ঘরে-বাইরে সর্বত্রই নারী নিরাপত্তাহীন। নির্যাতনের ধরনগুলো মধ্যযুগীয় বর্বরতাকেও হার মানায়।

ধর্ষণের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ, থানা কর্তৃপক্ষের গাফিলতির নিন্দা ও বিচারের দাবি জানিয়েছে নারীপক্ষ। সংগঠনের আন্দোলন সম্পাদক ফিরদৌস আজীমের সই করা এক বিবৃতিতে বলা হয়, নারীর প্রতি সহিংসতার ঘটনায় সরকারের উদাসীনতা, দায়িত্ব-কর্তব্যহীনতা এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতার অভাবে নারীর ওপর যৌন আক্রমণকারীরা এখন অনেক বেশি বেপরোয়া।

নারী সংহতির দপ্তর সম্পাদক নাসরিন আক্তারের সই করা এক বিবৃতিতে বলা হয়, নারীর ওপর নির্যাতনের ঘটনাগুলোর যথাযথ বিচার না হওয়ার কারণে যৌন সন্ত্রাস ও নির্যাতন বেড়েই চলেছে।

এ ছাড়া ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে এক বিবৃতিতে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি আয়শা খানম, সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু নারী নির্যাতন প্রতিরোধে আশু কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রধানমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের কাছে জোর দাবি জানান।

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) বলেছে, রাষ্ট্রের উসকানি ও মদদে ধর্ষকেরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। সংগঠনের সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম ও সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবু জাফর আহমেদের যৌথ এক বিবৃতিতে বলা হয়, পুলিশপ্রধান যৌন নিপীড়নকে দুষ্টুমি বলে চিহ্নিত করে ধর্ষক-যৌন নিপীড়কদের উসকে দিয়েছেন। ধর্ষক-নিপীড়কদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে সরকার দেশকে তাঁদের অভয়ারণ্যে পরিণত করতে চায়?

বেসরকারি সংগঠন নারীপক্ষ এক বিবৃতিতে বলেছে, ধর্ষণের শিকার সেই নারীকে ধর্ষণকারীরা উত্তরার জসীম উদ্দিন রোডে ফেলে রেখে যায়। সারা রাত মেয়েটিকে নিয়ে তাঁর পরিবারের সদস্যরা উত্তরা, খিলক্ষেত ও গুলশান থানায় গেলেও ঘটনাস্থল ওই থানা এলাকায় নয় বলে থানা কর্তৃপক্ষ কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। অথচ ‘ধর্ষণের শিকার নারী প্রাথমিকভাবে যে থানায় গিয়ে অভিযোগ করবে সে থানাই এ সংক্রান্ত আইনি প্রক্রিয়া শুরু করতে বাধ্য’-আইনে এমন বিধান থাকার পরও থানা কর্তৃপক্ষ দায়িত্বে অবহেলা করেছে। তা ছাড়া ধর্ষণ উত্তর ডাক্তারি পরীক্ষা জরুরি সেবার আওতাধীন হওয়া সত্ত্বেও অযথা বিলম্ব করা হয়েছে। এতে ধর্ষণের শিকার নারী তাৎক্ষণিক সেবা থেকে বঞ্চিত হয়েছে। অবশেষে ১৬ ঘণ্টা পরে ভাটারা থানা অভিযোগ গ্রহণ করে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ধর্ষণের শিকার নারীকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ‘ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টার’ অথবা তেজগাঁও থানায় ‘ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে’ পাঠানোরও ব্যবস্থা করেনি।