জ্যোতির্বিজ্ঞানী এ আর খান আর নেই

এ আর খান
এ আর খান

দেশে বিজ্ঞানচর্চার প্রসারের অন্যতম পথিকৃৎ ও বিশিষ্ট জ্যোতির্বিজ্ঞানী ড. আনোয়ারুর রহমান খান (এ আর খান) আর নেই। আজ সোমবার বাংলাদেশ সময় ভোর পাঁচটার দিকে যুক্তরাজ্যের সেন্ট মেরি হাসপাতালে তিনি ইন্তেকাল করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৩ বছর।
এ আর খানের পরিবারের সূত্রে জানা গেছে, ছোট মেয়ে নিশাত শরীফকে দেখতে গত ৯ মে লন্ডনে এসেছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের এই অধ্যাপক। গত ২১ মে তিনি লন্ডনের একটি পাতাল রেলওয়ে স্টেশনে মাথা ঘুরে পড়ে যান। তারপর থেকেই তিনি লন্ডনের পেডিংটনের সেন্ট মেরিস হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। বাবার দুর্ঘটনার খবর পেয়ে বড় মেয়ে ইরফাত খান শনিবার যুক্তরাষ্ট্র থেকে লন্ডনে এসেছেন।
এ আর খানের ছোট মেয়ে নিশাত শরীফ প্রথম আলোকে জানান, গত ২১ মে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তাঁর বাবাকে নিয়ে লন্ডনের সাইথ ব্যাংকে একটি অনুষ্ঠান দেখতে গিয়েছিলেন। অনুষ্ঠান শেষে সাইথ ব্যাংক থেকে এমবেঙ্কমেন্ট স্টেশনে এসে তাঁরা অন্য একটি ট্রেনে উঠতে যাচ্ছিলেন। তখন প্রায় রাত পৌনে এগারোটা রাজে। এ সময় কিছুটা পেছনে থাকা নিশাত দেখেন, তাঁর বাবা ট্রেনে উঠতে গিয়ে পেছনের দিকে পড়ে গেলেন। কিছুক্ষণের মধ্যে অ্যাম্বুলেন্সযোগে তাঁকে নিকটস্থ পেডিংটনের সেন্ট মেরিস হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। মস্তিষ্কে প্রচণ্ড আঘাত পেয়ে তিনি অজ্ঞান হয়ে যান। 

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রোববার লন্ডনের স্থানীয় সময় রাত ১১টা ৫০ মিনিটে (বাংলাদেশ সময় ভোর পাঁচটা) তাঁকে মৃত ঘোষণা করা হয়।
নিশাত শরীফ জানান, আগামী শুক্রবার সাউথ হলের সেন্ট্রাল জামে মসজিদে জুম্মার নামাজের পর এ আর খানের জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। লন্ডনের পাওয়ার মিল লেন কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হবে।
নিশাত শরীফ জানান, বড় মেয়ে ইরফাত খানকে দেখতে ১০ জুন থেকে ২৫ জুন পর্যন্ত তাঁর যুক্তরাষ্ট্রের নিউ জার্সিতে থাকার কথা ছিল। সেখান থেকে আবার লন্ডন হয়ে ২৬ সেপ্টেম্বর ঢাকায় ফেরার কথা ছিল জ্যোতির্বিজ্ঞানী ড. আনোয়ারুর রহমান খানের।
এ আর খানের জন্ম ১৯৩২ সালে, ঢাকার বিক্রমপুরে। তিনি ১৯৫৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে স্নাতকোত্তর করেন। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর কর্মজীবন শুরু হয়। ১৯৬০ সালে কলম্বো পরিকল্পনার ফেলো হিসেবে যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল ফিজিক্যাল ল্যাবরেটরি ও কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের কেভেন্ডিস ল্যাবরেটরিতে গবেষক হিসাবে কাজ করেন। পরে ১৯৬২ সালে লন্ডনের ইমপেরিয়াল কলেজে যোগ দেন এবং সেখান থেকে পিএইচডি ডিগ্রি করে দেশে ফেরেন। এরপর প্রথমে পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ ও পরে ফলিত পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে (অধুনা তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক কৌশল বিভাগ) অধ্যাপনা করেন।
দেশে বিজ্ঞান চর্চা ও বিশেষ করে জ্যোতির্বিজ্ঞান চর্চার প্রসারে ড. খান আমৃত্যু কাজ করে গেছেন। ১৯৭৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর বাসভবনের গ্যারেজে প্রতিষ্ঠা করেন অনুসন্ধিৎসুচক্র বিজ্ঞান সংগঠন। তিনি গড়ে তোলেন বাংলাদেশ অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটি। ১৯৯৫ ও ২০১১ সালে বাংলাদেশের হিরণ পয়েন্ট ও পঞ্চগড় থেকে পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণ পর্যবেক্ষণ দলের নেতৃত্ব দেন। গ্রামীণ বিজ্ঞান শিক্ষকদের মানোন্নয়নের জন্য বাংলাদেশ বিজ্ঞান জনপ্রিয়করণ সমিতি ও বাংলাদেশ ফ্রিডম ফাউন্ডেশনের যৌথ আয়োজন সত্যেন বসু বিজ্ঞান শিক্ষক ক্যাম্পের সূচনা করেন। ১৯৭৬ সাল থেকে বিভিন্ন দৈনিকের জন্য রাতের আকাশ চিত্র তৈরি করে দিতেন।
সর্বশেষ তিনি হাইস্কুলের শিক্ষার্থীদের জন্য সিটি ব্যাংক ও প্রথম আলো আয়োজিত বিজ্ঞান জয়োৎসবের উপদেষ্টা পরিষদের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন।
ড. খানের মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটির সভাপতি অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী, বাংলাদেশ অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক এফ আর সরকার, বাংলাদেশ বিজ্ঞান জনপ্রিয়করণ সমিতির সভাপতি ও ড. খানের ছাত্র অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল প্রমুখ।