মালয়েশিয়ায় ১৩৯ কবরে 'একটি করে লাশ'

মানব পাচার
মানব পাচার

বাংলাদেশি ও রোহিঙ্গা অভিবাসীদের নিয়ে সৃষ্ট সংকটের অন্যতম পক্ষ মালয়েশিয়া দাবি করেছে, সম্প্রতি যে ১৩৯টি কবরের সন্ধান তারা পেয়েছে, সেগুলোর প্রতিটিতে একজনের লাশ থাকতে পারে। সংকট সমাধানের প্রত্যাশায় থাইল্যান্ডে আজ শুক্রবার অনুষ্ঠিত হতে চলেছে এক দিনের শীর্ষ সম্মেলন। বঙ্গোপসাগর হয়ে আন্দামান সাগরে অভিবাসীদের ঢল নামাকে কেন্দ্র করে শুরু নজিরবিহীন এই সংকটের। সম্মেলনের দিকে আগ্রহের সঙ্গে তাকিয়ে আছে বিশ্বসম্প্রদায়। খবর এএফপি, রয়টার্স ও ব্যাংকক পোস্টের।
মালয়েশিয়ায় পাওয়া ১৩৯টি কবর গণকবর নয়, এগুলো এক একজনের কবর বলে দেশটির সরকার গতকাল বৃহস্পতিবার দাবি করেছে। থাইল্যান্ড সীমান্তবর্তী মালয়েশিয়ার উত্তরাঞ্চলীয় পারলিস প্রদেশের ঘন অরণ্যে সম্প্রতি সন্দেহভাজন বাংলাদেশি ও রোহিঙ্গাদের এই কবরগুলোর সন্ধান মেলে। এর কোনো কোনোটিতে একাধিক মানুষের লাশ থাকতে পারে বলে ইতিপূর্বে আশঙ্কা প্রকাশ করেছিল মালয়েশীয় সরকার।
মালয়েশিয়ার উপস্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়ান জুনাইদি তুয়ানকু জাফর গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেন, ‘সেখানে (মালয়েশিয়ার ওই অঞ্চলে) কোনো গণকবর নেই। সন্ধান পাওয়া কবরগুলো এক একজনের। সাদা কাফনে মুড়িয়ে ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা মেনেই মৃত ব্যক্তিদের দাফন করা হয়েছে।’
মালয়েশীয় উপমন্ত্রী আরও দাবি করেন, ‘যাঁদের কবর দেওয়া হয়েছে, মৃত্যুর আগে তাঁদের বিরুদ্ধে কোনো অপরাধ কর্মকাণ্ড বা নির্যাতন চালানো হয়েছে কি না, সেটা খতিয়ে দেখতেই কবরগুলো খুঁড়ে লাশ বের করা হচ্ছে।’
মালয়েশীয় সীমান্তের পার্বত্য জঙ্গলে মানব পাচারকারীদের পরিত্যক্ত বন্দিশিবিরে ওই ১৩৯ কবরের সন্ধান পাওয়ার পর এ সপ্তাহে পর্যায়ক্রমে এগুলো খোঁড়া শুরু করেন পুলিশের ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরা। এ পর্যন্ত কবর থেকে চারজনের লাশ তোলা হয়েছে জানিয়ে জুনাইদি বলেন, জুনের প্রথম সপ্তাহে কবরগুলো খোঁড়ার কাজ শেষ হবে।
১ মে মালয়েশিয়ার প্রতিবেশী ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় মানুষ পাচারের ট্রানজিট ভূমি থাইল্যান্ডের সংখলা প্রদেশের গহিন জঙ্গলে প্রথম একটি গণকবর ও পরে আরও কিছু কবরের সন্ধান মিলেছিল। গণকবরটি থেকেই উদ্ধার করা হয়েছিল পাচারের শিকার ২৬ বাংলাদেশি ও রোহিঙ্গার দেহাবশেষ ও কঙ্কাল। অভিবাসীদের গন্তব্যস্থল মালয়েশিয়াতেও পরে এ রকম গণকবর ও কবরের সন্ধান মেলে।
এই কবরগুলোর পাশাপাশি বেশ কিছু বন্দিশিবিরের সন্ধান এবং সাগরে ভাসমান কয়েক হাজার অভিবাসনপ্রত্যাশীকে কূলে ভিড়তে না দেওয়া নিয়ে সম্প্রতি উভয় দেশ আন্তর্জাতিক মহলের নানা সমালোচনা ও চাপের মুখে পড়ে। গণকবর, বন্দিশিবির ও অভিবাসী সংকট নিয়ে দেশ দুটির রাখঢাকের নীতিতে প্রশ্ন উঠেছে সরকারগুলোর ভূমিকা নিয়েও।
আজ শীর্ষ বৈঠক: থাইল্যান্ডের ডাকা আজকের সম্মেলনে বাংলাদেশ, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, মিয়ানমার, অস্ট্রেলিয়া, সুইজারল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্র, কম্বোডিয়া, লাওস, ভিয়েতনামসহ ১৭ দেশের প্রতিনিধিদের হাজির হওয়ার কথা। তবে সংকটের কেন্দ্রে থাকা মিয়ানমার আগেই বলে দিয়েছে, সম্মেলনে রোহিঙ্গা শব্দ ব্যবহার করলে এতে তার যোগ দেওয়ার আগ্রহ নেই।
সম্মেলনের গুরুত্ব সম্পর্কে গত মঙ্গলবার থাই পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একটি বিবৃতিতে বলেছে, ‘অনিয়মিত অভিবাসীদের আসার ঘটনা নজিরবিহীনভাবে বেড়ে যাওয়ায় যে সংকট দেখা দিয়েছে, তা মোকাবিলায় একত্রে কাজ করতেই এই অঞ্চলের দেশগুলোর প্রতি এই বৈঠকটি একটি জরুরি আহ্বান।’
থাই প্রধানমন্ত্রী প্রায়ুত চান-ওচা এই শীর্ষ সম্মেলন আহ্বান করেছেন। তবে মঙ্গলবার পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সরকারপ্রধানেরা এ ব্যাপারে সাড়া দেননি। তাই পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ব্যাংককে আয়োজিত এ সম্মেলনে ওই সব দেশের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা যোগ দেবেন।
এ ছাড়া জাতিসংঘের উদ্বাস্তুবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর, অভিবাসনবিষয়ক সংস্থা আইওএম, অফিস অন ড্রাগস অ্যান্ড ক্রাইমসহ অন্যান্য সংগঠনকে এ সম্মেলনে পর্যবেক্ষক পাঠানোর আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
মন্ত্রণালয় বলেছে, সংকট ক্রমেই জটিল হতে থাকায় এ ব্যাপারে বহুমুখী দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করা দরকার। সমস্যার মূল উদ্ঘাটন করে সমন্বিতভাবে সংকট মোকাবিলায় অভিবাসীদের উৎপত্তি, ট্রানজিট ও গন্তব্যস্থলের সঙ্গে জড়িত দেশগুলোকে অবশ্যই একসঙ্গে কাজ করতে হবে।