প্রকল্পের কাজ না করেই টাকা তুলে নেওয়ার অভিযোগ

বান্দরবানের আলীকদম উপজেলায় প্রাথমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান উন্নয়নের তিনটি প্রকল্পে অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। ইউএনডিপির অর্থায়নে পরিচালিত এসব প্রকল্পের কাজ না করেই টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে। তিন মাস আগে কাজ শেষ করার কথা থাকলেও অনেক প্রকল্পের কাজ এখনো শুরুই হয়নি।

জাতিসংঘের উন্নয়ন সংস্থা ইউএনডিপির পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন তহবিলের অর্থায়নে পরিচালিত হচ্ছে সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা নামের কর্মসূচি। এই কর্মসূচির অধীনে গোটা পার্বত্য চট্টগ্রামেই প্রথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামো উন্নয়ন করা হচ্ছে। প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্ব পেয়েছেন স্থানীয় বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকেরা। আর কাজ তদারকির দায়িত্বে আছেন উপজেলার চেয়ারম্যান। আলিকদম উপজেলায় চারটি প্রকল্প বাস্তবায়নের কথা থাকলেও এ পর্যন্ত একটি প্রকল্পের কাজ হয়েছে। সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়গুলোর শিক্ষকদের অভিযোগ, উপজেলার চেয়ারম্যান প্রকল্পের টাকা নিয়ে গেলেও কাজ করেননি। বিষয়টি স্বীকার করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাও।

তিন মাস আগে কাজ শেষ করার কথা থাকলেও অনেক প্রকল্পের কাজ এখনো শুরুই হয়নি

এ ব্যাপারে আলীকদম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আল আমিন বলেন, প্রকল্পের প্রথম কিস্তির কাজের অগ্রগতি না হওয়ায় দ্বিতীয় কিস্তির টাকা আটকে দেওয়া হয়েছে। কাজের অগ্রগতি দেখে টাকা দেওয়া হবে।
আলীকদম উপজেলার পরিষদের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, ইউএনডিপি চারটি প্রকল্পের জন্য আলিকদম উপজেলা পরিষদকে গত নভেম্বরে ১৫ লাখ ৩৫ হাজার টাকা দিয়েছে। এই টাকায় চারটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবকাঠামো উন্নয়নের কাজ হওয়ার কথা ছিল। প্রকল্প কমিটির মাধ্যমে এই বছরের ফেব্রুয়ারিতে কাজ শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু উপজেলা চেয়ারম্যান নিজে কাজ করবেন জানিয়ে প্রকল্প কমিটি থেকে প্রকল্পের প্রথম কিস্তির টাকা নিয়ে যান। অথচ প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর তিন মাস কেটে গেলেও কেবল একটি বিদ্যালয়ে কিছু কাজ হয়েছেন।
রোয়াম্ভু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিিক্ষকা অঞ্জলি রাণী শীল একটি প্রকল্পের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি বলেন, তাঁর অধীনে প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য তিন লাখ ৩৫ হাজার টাকা বরাদ্দ হয়েছে। প্রকল্পের প্রথম কিস্তির এক লাখ ৫০ হাজার টাকা এলে উপজেলা চেয়ারম্যান তা নিয়ে যান। কেবল তাই নয়, একটি বিদ্যালয়ের মাঠে মাটি ফেলা ছাড়া প্রকল্পের আর কোনো কাজ হয়নি বলে তিনি জানান।
রেফারপাড়া কিন্ডারগার্ডেনের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ রুবেল বলেন, তাঁর বিদ্যালয়ে সৌচাগার নির্মাণের কথা থাকলেও এখনো করা হয়নি। একইভাবে ডুপ্রুপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কক্ষ সংস্কারও হয়নি। নোয়াপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মেনকিউপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা জানিয়েছেন তাঁদের বিদ্যালয়ে দেওয়াল ও শৌচাগার নির্মাণ এবং শিক্ষা উপকরণ বিতরনের কাজ হয়নি।
এ ব্যাপারে উপজেলা চেয়ারম্যান আবুল কালাম জানান, কাজ যাতে ভালো হয় সে কারণেই প্রকল্পের দায়িত্ব নিয়েছেন তিনি। তবে ঠিকাদারেরা সময় মতো কাজ না করায় বিলম্ব হচ্ছে। সব প্রকল্পের কাজ বরাদ্দের চেয়ে বেশি টাকা দিয়ে করা হবে বলে জানান তিনি। নিয়ম না থাকলেও কাজের মান ভালো করার জন্য প্রকল্প কমিটির কাজ ঠিকাদার দিয়ে করা হচ্ছে বলে চেয়ারম্যান জানিয়েছেন।
ইউএনডিপি বান্দরবান জেলা কার্যালয়ের গভর্ন্যান্স কর্মকর্তা চারু বিকাশ ত্রিপুরা বলেন, প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হলেও উপজেলা চেয়ারম্যান ক্রমান্বয়ে সব কাজ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এ জন্য নিবিড়ভাবে কাজ তত্ত্বাবধান করা হচ্ছে।