চকরিয়ায় নিহত 'ডাকাত'

লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলায় র্যাবের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ শীর্ষ সন্ত্রাসী নাছির উদ্দিন (৪৫) নিহত হয়েছেন। গত মঙ্গলবার দিবাগত রাতে তেওয়ারীগঞ্জ ইউনিয়নের ভবেরহাট এলাকার একটি ইটভাটায় ওই ‘বন্দুকযুদ্ধের’ ঘটনা ঘটে বলে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব-১১) দাবি করেছে। বন্দুকযুদ্ধে র্যাবের চার সদস্য আহত হয়েছেন।
নাছিরের বিরুদ্ধে ১৫টি হত্যা এবং ডাকাতি, চাঁদাবাজি, অপহরণসহ বিভিন্ন অপরাধের ৩৭টি মামলা রয়েছে। তিনি সন্ত্রাসী নাছির বাহিনীর প্রধান ছিলেন।
এদিকে সোমবার রাতে কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলায় পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ আলী আজগর (৩০) নামের এক ‘ডাকাত’ নিহত হয়েছেন।
র্যাব-১১ ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার রাত সাড়ে তিনটার দিকে ভবেরহাট এলাকার একটি ইটভাটায় ডাকাতির জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিল নাছির বাহিনী। খবর পেয়ে র্যাব সেখানে অভিযান চালায়। উপস্থিতি টের পেয়ে ডাকাত দল র্যাবকে লক্ষ্য করে কয়েকটি গুলি ছোড়ে। তখন র্যাবও পাল্টা গুলি ছোড়ে। এ সময় নাছির উদ্দিন গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান। বন্দুকযুদ্ধে র্যাবের এএসআই পরিমল চাকমা, র্যাব সদস্য শাকিল উদ্দিন, আবদুল করিম এবং ফরিদ উদ্দিন আহত হন। র্যাব ঘটনাস্থল থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, একটি এলজি, ১৫টি গুলি ও একটি ম্যাগাজিন উদ্ধার করেছে। নিহত সন্ত্রাসী নাছির লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার চন্দ্রগঞ্জের দেত্তপাড়া গ্রামের তোফায়েল আহমদের ছেলে।
স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, লক্ষ্মীপুরের পূর্বাঞ্চলের ত্রাস ছিলেন নাছির উদ্দিন। দীর্ঘদিন থেকে নাছির বাহিনী এলাকায় খুন, ডাকাতি, অপহরণ, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী তৎপরতা চালিয়ে আসছে। নাছির বাহিনীর সদস্যসংখ্যা শতাধিক। এই বাহিনীর অত্যাচারে অতিষ্ঠ লক্ষ্মীপুরের পূর্বাঞ্চল এবং নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ ও চাটখিল উপজেলার সীমান্তবর্তী অঞ্চলের হাজার হাজার মানুষ। ভয়ে স্থানীয় রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী, ঠিকাদার থেকে সাধারণ মানুষ নাছিরের বিরুদ্ধে কোনো কথা বলতে সাহস করতেন না। প্রায়ই নাছির বাহিনীর সঙ্গে প্রতিপক্ষ সোলায়মান উদ্দিন জিসান বাহিনী নামের আরেকটি সন্ত্রাসী বাহিনীর গোলাগুলি ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটত। এই দুই বাহিনীর বন্দুকযুদ্ধের সময় স্কুলছাত্রসহ ১২ জন মানুষ মারা যায়। পঙ্গু হয়েছে অনেকে। নাছির এবং জিসানকে ধরে দিতে লাখ টাকা পুরস্কারও ঘোষণা করেন লক্ষ্মীপুরের পুলিশ সুপার (এসপি) শাহ মিজান সাফিউর রহমান। সম্প্রতি র্যাবের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ কুমিল্লায় সোলায়মান উদ্দিন জিসানের মৃত্যু হয়। এরপর থেকে নাছির এলাকায় একক আধিপত্য বিস্তার শুরু করে।
চন্দ্রগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. হুমায়ুন কবির জানান, নাছিরের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে। নাছির পুলিশের তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী। তার বিরুদ্ধে চন্দ্রগঞ্জ ও সদরসহ বিভিন্ন থানায় ১৫টি হত্যা মামলাসহ ৩৭টি মামলা রয়েছে।
লক্ষ্মীপুরের এসপি শাহ মিজান সাফিউর রহমান বলেন, নাছির এবং জিসান ছিল পুলিশের তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী। তাদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলাসহ তিন ডজন করে মামলা রয়েছে।
কক্সবাজার সদর উপজেলার ইসলামাবাদ এলাকার অটোরিকশাচালক হুমায়ুন কবির বলেন, তিনি সোমবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে অটোরিকশা নিয়ে মেধাকচ্ছপিয়া এলাকায় শ্বশুরবাড়িতে বেড়াতে যাচ্ছিলেন। উত্তর মেধাকচ্ছপিয়া ঢালা এলাকায় পৌঁছালে ১৫-২০ জন ডাকাত তাঁর গতিরোধ করে মারধরের পর সর্বস্ব লুট করে। তাঁর চিৎকার শুনে আশপাশের লোকজন এসে আলী আজগর ও মো. শেখা নামের দুই ডাকাতকে অস্ত্রসহ আটক করে গণপিটুনি দেন। পরে পুলিশ গিয়ে তাদের উদ্ধার করে। কক্সবাজারের সহকারী পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল-চকরিয়া) মো. মাসুদ আলম বলেন, আটক ওই দুজনের তথ্যের ভিত্তিতে তাঁদের নিয়ে রাত দেড়টার দিকে উত্তর মেধাকচ্ছপিয়া পাহাড়ের ভেতরে অভিযান চালায় পুলিশ। এ সময় ডাকাতেরা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। পুলিশও পাল্টা গুলি ছোড়ে। বন্দুকযুদ্ধ চলাকালে ডাকাতদের ছোড়া গুলিতে আলী আজগর ও মো. শেখা গুলিবিদ্ধ হয়। তাদের চকরিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকেরা আলী আজগরকে মৃত ঘোষণা করেন এবং মো. শেখাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে দুটি অস্ত্র, ১৩টি গুলি, ২২টি গুলির খোসা ও দুটি লম্বা কিরিচ উদ্ধার করেছে।
চকরিয়া থানার ওসি প্রভাষ চন্দ্র ধর বলেন, ডাকাতি ও পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধের ঘটনায় উপপরিদর্শক (এসআই) সুকান্ত বসু বাদী হয়ে নয়জনের নাম উল্লেখ করে তিনটি মামলা করেছেন। অন্য ডাকাতদের ধরতে অভিযান চলছে।