এ জরিপ এখনো কাজে লাগানোর সুযোগ আছে

মঞ্জুরুল হক

ব্যবস্থাপনা পরিচালক, ওআরজি-কোয়েস্ট রিসার্চ লিমিটেড (অরকোয়েস্ট)

‘২০০৯ সাল থেকে এই জনমত জরিপ আমরা ধারাবাহিকভাবে করে আসছি। সর্বশেষ আদমশুমারি অনুসারে দেশের জনবিন্যাসের অনুপাতে আমরা নিয়েছি পাঁচ হাজার উত্তরদাতার মতামত। ফলে আমরা বলতে পারি, এতে দেশের মানুষের সাধারণ মনোভাব উঠে এসেছে।’ প্রথম আলোর জনমত জরিপ পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান ওআরজি-কোয়েস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মঞ্জুরুল হক এভাবে জরিপটির বস্তুনিষ্ঠতা ও গ্রহণযোগ্যতার প্রেক্ষাপট তুলে ধরেন।

জরিপ পরিচালনায় ৩২ বছরের অভিজ্ঞতার আলোকে তিনি বলেন, ইউরোপিয়ান সোসাইটি ফর অপিনিয়ন অ্যান্ড মার্কেট রিসার্চের (ইসোমার) সদস্য হিসেবে তাদের দিকনির্দেশনা বজায় রেখে তাঁরা এ জরিপে আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য গবেষণাপদ্ধতি ও নৈতিক মানদণ্ড অনুসরণ করেছেন।

মঞ্জুরুল হক আরও বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বহুস্তরবিশিষ্ট প্রণালিবদ্ধ দৈবচয়ন নমুনায়নের ভিত্তিতে জরিপ চালানো হয়। তাঁরাও একই পদ্ধতি অনুসরণ করেছেন।

পাঁচ হাজার মানুষের মতামত থেকে দেশবাসীর জনমত বোঝা সম্ভব কি না—এর জবাবে মঞ্জুরুল হক বলেন, এ প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক। কেননা এ ধরনের জরিপ বাংলাদেশে তুলনামূলকভাবে নতুন। যুক্তরাষ্ট্রে অনেক জরিপ করা হয় ১,১০০ থেকে ১,২০০ মানুষের মধ্যে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির ওপর যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী প্রতিষ্ঠান ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনালর একটি জরিপ সম্প্রতি দেশের একটি ইংরেজি দৈনিক প্রকাশ করেছে। তাতে মতামত নেওয়া হয়েছিল আড়াই হাজার মানুষের। আমাদের উত্তরদাতা ছিল পাঁচ হাজার, যা যেকোনো মানদণ্ডে যথেষ্ট।

বর্তমান জরিপে নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ নির্বাচনী সরকারের পক্ষে জনমত এ বছর এপ্রিলে পরিচালিত জরিপের তুলনায় ৮ পয়েন্ট কমে যাওয়ার কারণ সম্পর্কে মঞ্জুরুল হক বলেন, জনমত নানা কারণে জনমত বদলাতে পারে। দেখতে হবে, সর্বশেষ ও বর্তমান জরিপের মাঝখানে জনমত প্রভাবিত করার মতো কোনো বড় ঘটনা ঘটেছে কি না। এই সময়ে পাঁচটি সিটি করপোরেশনে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হয়েছে। তাতে মানুষের এমন ধারণা হয়ে থাকতে পারে যে দলীয় সরকারের অধীনেও অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব।

জরিপে জাতীয় পার্টি (এরশাদ) ও জামায়াতে ইসলামীর সমর্থন কমে গিয়ে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের জনসমর্থন বেড়ে যাওয়ার কারণ সম্পর্কে মঞ্জুরুল হক বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর সমর্থন কেন বাড়ল বা কমল তার কারণ জরিপে জানতে চাওয়া হয়নি। তবে প্রেক্ষাপট বিশ্লেষণ করলে মনে হয়, গত জরিপ চলাকালে মানুষ রাজনৈতিক সহিংসতার কারণে প্রধান দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রতি বিরক্ত ছিল। অনেকেই হয়তো এই দুই দলের বাইরে এরশাদকে ভোট দেবেন বলে ভাবছিলেন। এ কারণে তখন জাতীয় পার্টির জনপ্রিয়তা বেড়ে গিয়ে থাকতে পারে। আগের ও বর্তমান জরিপের মধ্যবর্তী সময়ে রাজনৈতিক সহিংসতা বেশ কমেছে। এ ছাড়া এরশাদের দোদুল্যমান আচরণেও মানুষ বিভ্রান্ত হয়ে থাকতে পারে। যে কারণে গত এক বছরে তাদের নিজস্ব জনসমর্থন কমেছে বলে ধারণা করা যায়। আর জামায়াতের বেলায় যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও শাস্তি হয়তো মানুষের মনে প্রভাব ফেলে থাকতে পারে। জামায়াত ও জাতীয় পার্টি থেকে যেসব ভোটার সরে গেছেন, তাঁরা বিএনপি ও আওয়ামী লীগের দিকে ঝুঁকে পড়েছেন বলে অনুমান করা যায়।

মঞ্জুরুল হক বলেন, গত পাঁচ বছর ধারাবাহিকভাবে জরিপ করার ফলে এ সরকারের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত জনমতের গতিপথ পরিবর্তনের রূপরেখাটি স্পষ্টভাবে বোঝা যায়। সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলো তাদের প্রকৃত অবস্থা ও তাদের সম্পর্কে মানুষের ধারণা এ থেকে জানতে পারবে। এটাই এ ধরনের জরিপের মূল উদ্দেশ্য। নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক দলগুলোর ত্রুটিবিচ্যুতি সংশোধনের এখনো কিছুটা সুযোগ আছে।