কেন জরিপ, কীভাবে জরিপ

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে এ নিয়ে প্রথম আলোর উদ্যোগে ষষ্ঠবারের মতো জনমত জরিপের উদ্যোগ নেওয়া হলো। চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে মাঠপর্যায়ে এ জরিপের কাজ চলে। প্রতিবছর সরকারের বর্ষপূর্তিতে প্রথম আলো এ জরিপ করে এসেছে। এর বাইরে এ বছরের এপ্রিলেও একটি বিশেষ জরিপ করা হয়।

প্রথম আলোর উদ্যোগে ওআরজি-কোয়েস্ট পরিচালিত জনমত-জরিপ ২০১৩
প্রথম আলোর উদ্যোগে ওআরজি-কোয়েস্ট পরিচালিত জনমত-জরিপ ২০১৩

আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাজোট যে সরকার গঠন করেছিল, সেটি তার শাসনামলের শেষভাগে এসে পৌঁছেছে। নির্বাচনী অনিশ্চয়তার মুখে বিএনপির নানা কর্মসূচি আর যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের প্রেক্ষাপটে ধর্মীয় উগ্রপন্থীদের সহিংসতায় বিগত সময়ে দেশ এগিয়েছে টালমাটাল পায়ে।
দেশের ভবিষ্যৎ নিয়েও মানুষের মনে প্রশ্নের শেষ নেই। আসলে যতটা না প্রশ্ন, তার চেয়ে বেশি দুশ্চিন্তা। আগামী নির্বাচন কি আদৌ হবে? কেমন হবে নির্বাচনী সরকার? বিএনপি কি সে নির্বাচনে আসবে? যদি না আসে তাহলে? এরপর আর প্রশ্ন নেই, নিকষ অন্ধকার। প্রথম আলো জনমত জরিপের উদ্যোগ নিয়েছে এই পটভূমিতে। জরিপ পরিচালনা করেছে এ কাজে অভিজ্ঞ প্রতিষ্ঠান ওআরজি-কোয়েস্ট, গত সেপ্টেম্বরে।
২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগে প্রথম আলো জরিপ শুরু করেছিল। এর পর থেকে সরকার গঠনের বর্ষপূর্তিকে ঘিরে সরকার, রাজনৈতিক দল ও রাষ্ট্রীয় পরিস্থিতি নিয়ে প্রতিবছর জরিপ করে আসছে। এ বছরের এপ্রিলে অস্থির রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে নাগরিকদের মনের অবস্থা তুলে ধরার জন্য একটি বিশেষ জরিপও পরিচালনা করা হয়েছিল। সেটি প্রকাশিত হয় ১১ মে ২০১৩ তারিখে। আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে একাধিক জনমত জরিপের যে পরিকল্পনা প্রথম আলো করেছে, এই জরিপটি তারই অংশ। এতে মে মাসে প্রকাশিত জরিপের চেয়ে অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা আরও দুই হাজার বাড়িয়ে পাঁচ হাজার করা হয়েছে। জরিপের প্রান্তিক বিচ্যুতি ধরা হয়েছে কমবেশি ১ দশমিক ৩৯ শতাংশ।
পাঁচ হাজার মানুষের মতামত সারা দেশের মানুষের মনোভাব কতটা প্রতিফলিত করতে পারে? ওআরজি-কোয়েস্ট রিসার্চ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মঞ্জুরুল হক বলেন, ‘জনমতের আন্দাজ পাওয়ার জন্য এ সংখ্যা সন্তোষজনক। দেশের আদমশুমারি অনুযায়ী মানুষের ভৌগোলিক অবস্থান, লিঙ্গভেদ, জাতি ও বয়সের অনুপাতে আমরা উত্তরদাতা নির্বাচন করেছি। এতে মানুষের প্রতিনিধিত্বশীল মতামত সঠিকভাবে উঠে এসেছে। বিচ্যুতির হার কমবেশি ৩-এর মধ্যে থাকলেই জনমত জরিপকে সাধারণত যথাযথ বলে ধরে নেওয়া হয়। সে জন্য ১,১০০ থেকে ১,২০০ উত্তরদাতাই যথেষ্ট। যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশেও বহু জরিপ চলে ১,১০০ উত্তরদাতার ওপর, যদিও তাদের জনসংখ্যা ৩৪ কোটি।’

দেশের সাতটি বিভাগের ৩০টি জেলার উত্তরদাতার ১,২৫০ জন শহর ও ৩,৭৫০ জন গ্রামবাসী এবং ২,৫০৪ জন নারী ও ২,৪৯৬ জন পুরুষ। মঞ্জুরুল হক বলেন, ‘পুরো দেশের সাতটি বিভাগকে শহর ও গ্রামে ভাগ করে প্রতিটি স্তর থেকে আমরা পর্যাপ্ত উত্তরদাতার মত নিয়েছি। এর পরিমাণ আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য নমুনা-সংখ্যার চার গুণের চেয়েও বেশি। এর চেয়ে বেশি উত্তরদাতা নিলেও জরিপের ফলাফলে তেমন তারতম্য হতো না।’

রাষ্ট্র বা সমাজের গুরুত্বপূর্ণ প্রসঙ্গ নিয়ে মানুষের মনোভাব জানতে বিভিন্ন দেশের সরকার, রাজনৈতিক দল, প্রভাবশালী প্রতিষ্ঠান ও তথ্যমাধ্যম জরিপ চালিয়ে থাকে। তার তথ্যের আলোয় সরকার, রাজনৈতিক দল বা প্রতিষ্ঠান তাদের নীতি, পরিকল্পনা ও কর্মসূচি পরিমার্জনও করে থাকে। যুক্তরাষ্ট্রের পিউ রিসার্চ সেন্টার বা গ্যালাপের মতো প্রভাবশালী চিন্তাশালা বা থিংকট্যাংক শুধু জরিপ পরিচালনা ও প্রকাশ করে থাকে। আমরা লক্ষ করছি, জনমত জরিপ নিয়ে এ দেশেও মানুষের আগ্রহ বাড়ছে। এমনকি বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং প্রভাবশালী প্রতিষ্ঠান জনমত জরিপ করছে।

প্রথম আলোর জনমত জরিপের উদ্দেশ্য রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ প্রসঙ্গ সম্পর্কে নাগরিকদের মতামত নীতিনির্ধারক, গবেষক ও পাঠকদের জানানো।

কারণ মানুষের মনের কথা বুঝতে পারলে দেশের ভবিষ্যৎ পথরেখাটি আরও সুষ্ঠুভাবে পরিকল্পনা করা সম্ভব।