বন্দুক ও প্রহরী দিয়ে বন রক্ষা করা যাবে না

জনগণের অংশীদারত্ব ছাড়া আইন, বন্দুক ও প্রহরী দিয়ে বন রক্ষা করা যাবে না। বন ব্যবস্থাপনায় বননির্ভর মানুষকে সম্পৃক্ত করতে হবে। বন বিভাগের সঙ্গে সাধারণ মানুষের দূরত্ব কমাতে হবে। পার্বত্য চট্টগ্রামে বন ব্যবস্থাপনা ও সংরক্ষণবিষয়ক আঞ্চলিক পরামর্শ সভায় বক্তারা এসব কথা বলেছেন।
গতকাল রোববার সকালে রাঙামাটি জেলা পরিষদ সম্মেলন কক্ষে এ সভা হয়। ইউএনডিপির আওতায় পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন সহায়তা প্রকল্পের (সিএইচটিডিএফ) ‘চিটাগাং হিল ট্রাক্টস ওয়াটারশেড কো-ম্যানেজমেন্ট অ্যাক্টিভিটি’ প্রকল্প এ সভা ও কর্মশালার আয়োজন করে।
সভায় চাকমা সার্কেলপ্রধান রাজা দেবাশীষ রায় বলেন, আদিবাসীদের সম্মিলিত ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত প্রাকৃতিকভাবে গড়ে ওঠা গ্রামীণ সাধারণ বন থেকে গাছ চুরি হয় না। সেই অভিজ্ঞতা দিয়ে বন ব্যবস্থাপনার নীতিমালা প্রণয়ন করা যেতে পারে।
রাঙামাটি সার্কেলের বন সংরক্ষক মো. সামশুল আজম স্বীকার বলেন, বন বিভাগের কার্যক্রম সম্পর্কে সাধারণ মানুষের মনে বিরূপ ধারণা রয়েছে। তিনি বলেন, সামাজিক বনায়নে বাংলাদেশের অনেক সফলতা রয়েছে। তবে পার্বত্য চট্টগ্রামে সামাজিক বনায়ন হয়েছে খুবই কম।
পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের সদস্য গুণেন্দু বিকাশ চাকমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রধান সমস্যা ভূমি। পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন, ভূমি সমস্যার সমাধান ও উদ্বাস্তু পুনর্বাসন না হলে পার্বত্য চট্টগ্রামে বনায়ন কর্মসূচি সফল হবে না।
পার্বত্য চট্টগ্রাম বন ও ভূমি অধিকার রক্ষা আন্দোলনের সভাপতি গৌতম দেওয়ান বলেন, ব্রিটিশ আমল থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রাকৃতিক বন ধ্বংস করে বিদেশি প্রজাতির গাছ লাগানো হচ্ছে। উন্নয়নের নামে পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণকে বারবার ক্ষতিগ্রস্ত করা হয়েছে। উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণের আগে জনগণের মতামত নেওয়া হয়নি।
সভাপতির বক্তব্যে সিএইচটিডিএফের উপপরিচালক প্রসেনজিৎ চাকমা বলেন, দেশের ৪৩ শতাংশ বন পার্বত্য চট্টগ্রামে। পার্বত্য চট্টগ্রামে আরও বন সৃষ্টির মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তন রোধ ও পরিবেশ-প্রতিবেশ সংরক্ষণের উদ্যোগ অনেক আগেই শুরু করা উচিত ছিল।
কর্মশালায় মং সার্কেলের প্রধান সাচিং প্রু চৌধুরী, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের সদস্য সাধন মণি চাকমা, বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের সদস্য সিয়ং ইয়ং ম্রো, সাবেক প্রধান বন সংরক্ষক ও আইইউসিএনের দেশীয় পরিচালক ইশতিয়াক উদ্দিন আহমেদ, ইউএনডিপি-সিএইচটিডিএফ প্রকল্পের আওতায় জনগোষ্ঠী ক্ষমতায়ন প্রকল্পের প্রধান বিপ্লব চাকমা, আরণ্যক ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক ফরিদ উদ্দিন আহমেদসহ তিন পার্বত্য জেলার বন বিভাগীয় কর্মকর্তা, বননির্ভর জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধি, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, মৌজা ও গ্রামপ্রধানেরা উপস্থিত ছিলেন।