ব্লগার হত্যার বিচার না হওয়া রাষ্ট্রের জন্য বিপজ্জনক: আইনমন্ত্রী

আইনমন্ত্রী আনিসুল হক
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক

আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, তিন ব্লগার হত্যার বিচার না হওয়া রাষ্ট্রের জন্য বিপজ্জনক। তবে সরকার এই হত্যাগুলোর সঙ্গে যুক্তদের গ্রেপ্তার ও বিচারের জন্য খুবই আন্তরিকভাবে কাজ করছে। এদের হত্যার বিচার হবেই।

আজ মঙ্গলবার রাজধানীর একটি হোটেলে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন-২০০৬ ও অনলাইনে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিয়ে একটি গোলটেবিল আলোচনা সভায় আইনমন্ত্রী এ কথা বলেন। আর্টিকেল-১৯ নামে একটি সংগঠন এই আলোচনা সভার আয়োজন করে।

আইনমন্ত্রী বলেন, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) আইনে কিছু সীমাবদ্ধতা আছে। এ জন্য এগুলোর সমাধান হওয়া উচিত। সরকার নতুন করে সাইবার নিরাপত্তা আইন করছে। এটা এখন ওয়েবসাইটে আছে। এই আইন হলে আইসিটি আইনের সংস্কার নিয়ে যত আলোচনা হচ্ছে, তার সমাধান হয়ে যাবে। 

সভায় ব্রিটিশ হাইকমিশনের রাজনৈতিক শাখার প্রধান আদ্রিয়ান জোনস ব্লগার ও সাংবাদিকদের মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে তাদের নিরাপত্তা দিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। মুক্তচর্চার পরিবেশ যেন বাধাগ্রস্ত না হতে পারে সে ব্যাপারে এ দেশের সব মহলের জোরালো ভূমিকা প্রত্যাশা করেন তিনি।

আলোচনা সভায় বক্তারা তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের ৪৬ ও ৫৭ ধারার সমালোচনা করেন। তাঁরা বলেন, ৪৬ ধারায় নিয়ন্ত্রককে অপরাধের ব্যাখ্যা করার যে ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে তা স্পষ্ট নয়। আর ৫৭ ধারায় অললাইনে লেখা কোনটি অপরাধ বলে গণ্য হবে তাও অস্পষ্ট। ফলে এ ক্ষেত্রে আইনের অপব্যবহারের সুযোগ আছে। তা ছাড়া এই দুটি ধারাকে সংবিধান, ব্যক্তি স্বাধীনতা ও মত প্রকাশের অধিকারের পরিপন্থী বলে উল্লেখ করে বক্তারা তা বাতিলের দাবি জানান।

অনুষ্ঠানে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক বলেন, গত ৭ বছরে ইন্টারনেট ব্যবহার দ্রুত গতিতে বেড়েছে। ২০০৮ সালে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ছিল ১০ লাখের নিচে। আর এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে সাড়ে চার কোটিতে। দেশের প্রায় ৩০ শতাংশ মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করছে। প্রতি ১২ সেকেন্ডে একজন বাংলাদেশি ফেসবুকে অ্যাকাউন্ট করছে। তিনি বলেন, ইন্টারনেট ব্যবহারের পরিমান বাড়ছে। অপরাধও বাড়ছে। অপরাধীরা অপরাধের ধরনও পাল্টাচ্ছে। তাই প্রয়োজন অনুযায়ী আইনের সংশোধন হবে।

আইসিটি বিশেষজ্ঞ মোস্তফা জব্বার বলেন, সরকারের ডিজিটাল প্রচার ও তা বাস্তবায়নের সঙ্গে আইনটি যায় না। এ দেশে বেশির ভাগ আইনই ১৫০-২০০ বছরের পুরোনো। এই আইনগুলোর পরিবর্তন হওয়া উচিত বলে তিনি মত দেন। বিশেষ করে অপরাধ মোকাবিলায় আইসিটি আইনে পরিবর্তন আনা উচিত।
সাংসদ রুস্তম আলী ফারাজি বলেন, এ দেশের ৯০ ভাগ মানুষ মুসলিম। বাক স্বাধীনতার কথা বলে তাদের অনুভূতিতে আঘাত করা ঠিক না। রাষ্ট্রের নিরাপত্তা বা সামাজিক অস্থিরতা তৈরি হতে পারে এমন কোনো কথা ব্লগে না লেখাই ভালো। কেননা অনলাইনে সবকিছু দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন আর্টিকেল-১৯ এর পরিচালক তাহমিনা রহমান। এতে সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন, হোসনে আরা বেগম, টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক কমিশনের কমিশনার সালেহ আহমেদ হাকিম, আইন কমিশনের সদস্য শাহ আলম, আইনজীবী জেড আই খান, প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক মিজানুর রহমান খান প্রমুখ বক্তব্য দেন।