তলদেশের কাঠ খুলে গিয়েছিল, ছিল না চলাচলের অনুমোদনও

ভোলার মনপুরায় ডুবে যাওয়া ট্রলারটির তলদেশের কাঠ খুলে যাওয়ার কারণেই এটি ডুবে গেছে বলে ট্রলারটির একাধিক যাত্রী জানিয়েছেন। এ ছাড়া ওই ট্রলারটির রামনেওয়াজ-কলাতলি নৌপথে চলাচলের অনুমোদন ছিল না বলেও জানিয়েছে নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)।

আজ বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে প্রায় ৭০ জন যাত্রী নিয়ে ট্রলারটি ডুবে যায়। এ দুর্ঘটনায় এখন পর্যন্ত ছয় যাত্রীর লাশ উদ্ধার হয়েছে। স্থানীয়রা বলছেন, কমপক্ষে ২০ জন যাত্রী এখনো নিখোঁজ। তবে পুলিশের দাবি, আর কোনো যাত্রী নিখোঁজ নেই।

বেঁচে যাওয়া যাত্রীদের কয়েকজন জানান, আজ বেলা ১১টার দিকে মনপুরা উপজেলার কলাতলী আবাসন ঘাট থেকে রামনেওয়াজ ঘাটের উদ্দেশে রওনা হয় ট্রলারটি। এরপর ঢালচর ঘাট থেকে যাত্রী নিয়ে ছেড়ে যাওয়ার ১০ মিনিটের মাথায় ট্রলারের তলার কাঠ ছুটে ট্রলারটি ডুবে যায়। যাত্রীদের দাবি, ওই সময় কোনো ঝড়-তুফান ছিল না। ট্রলারটি ভাঙাচোরা হওয়ার কারণেই ডুবে যায়।

পুলিশ জানায়, নিহতদের মধ্যে চার শিশু রয়েছে। তারা হলো রুপা, রনি, তানজু ও তাহমিনা। তাদের বয়স তিন বছরের মধ্যে। আর অন্য দুই নারী হলেন আয়েশা (৬৫) ও জেসমিন (২২)।

এদিকে বিআইডব্লিউটিএ বলছে ট্রলারটির ওই নৌপথে চলার অনুমোদন ছিল না। বিআইডব্লিউটিএর নৌ-নিরাপত্তা বিভাগের ভোলার পরিদর্শক নাসিম আহমেদ বলেন, মনপুরা উপজেলার সব নৌপথকে ১৫ মার্চ থেকে ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত ‘মৌসুমি অশান্ত নৌপথ’ ঘোষণা করা হয়েছে। এ সময় ওই পথে যাত্রীবাহী ট্রলার ও ছোট নৌযান চলাচল নিষিদ্ধ। শুধুমাত্র বে-ক্রসিং সনদধারী নৌযান এখন চলাচল করতে পারবে। আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকেও ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে অবৈধ চলাচল বন্ধ করতে ওপর থেকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু চলতি বছর এ পথে কোনো অভিযান হয়নি।

এদিকে দুর্ঘটনার নয় ঘণ্টা পরও প্রায় ২০ জন যাত্রীকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। রামনেওয়াজ ঘাটের একাধিক ব্যক্তি বলেন, নৌকায় ৫০ জনের বেশি নারী ও শিশু ছিল। তাঁদের অধিকাংশ উদ্ধার হয়নি।
তবে মনপুরা উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা এরশাদ আলী ও মনপুরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হানিফ শিকদার বলেন, শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ছয়টি লাশ পাওয়া গেছে এবং আর কেউ নিখোঁজ নেই।

কিন্তু দুর্ঘটনার শিকার একাধিক যাত্রী জানিয়েছেন, তাঁরা স্বজনদের খুঁজে পাচ্ছেন না। এমন একজন হলেন, মনপুরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন নুরুন্নাহার বেগম। তিনি তাঁর স্বামী বিল্লাল হোসেন (৩৮) ও ছেলে জনিকে (৫) খুঁজে পাচ্ছেন না। আমেনা বেগম নামে আরেক নারী তাঁর ছেলে সাগরকে, আব্দুল বারেক তাঁর দুই নাতিকে, নশু তাঁর ছেলে স্বপ্নাকে ও রোকেয়া বেগম তাঁর মেয়ে লিমাকে খুঁজে পাচ্ছেন না।