চোরাই পথে আসছে মিয়ানমারের আম, চাষিরা লোকসানে

মিয়ানমার থেকে চোরাই পথে আসা বিজিবির জব্দ করা আম। গত কয়েক দিনে টেকনাফের বিভিন্ন স্থান থেকে এসব আম জব্দ করা হয় l প্রথম আলো
মিয়ানমার থেকে চোরাই পথে আসা বিজিবির জব্দ করা আম। গত কয়েক দিনে টেকনাফের বিভিন্ন স্থান থেকে এসব আম জব্দ করা হয় l প্রথম আলো

কক্সবাজারের টেকনাফে এবার আমের ফলন ভালো হলেও চোরাই পথে মিয়ানমার থেকে আম আসায় লোকসানের আশঙ্কা করছেন স্থানীয় চাষিরা। একই সঙ্গে রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। ইতিমধ্যে কয়েক দিনে অভিযান চালিয়ে চোরাই পথে আসা ১৫ টন আম জব্দ করেছে বাংলাদেশ বর্ডার গার্ডের (বিজিবি) সদস্যরা।
টেকনাফ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবদুললতিফ জানান, টেকনাফ সীমান্তে বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে মিয়ানমার থেকে আম আসায় স্থানীয় বাগানমালিকেরা বিপাকে পড়েছেন। কারণ, মিয়ানমারের আম দামে সস্তা। ফলে ক্রেতার ওই সব আমের প্রতি ঝুঁকছেন।
উপজেলা কৃষি বিভাগ সূত্র জানায়, চলতি মৌসুমে টেকনাফে প্রায় পাঁচ হাজার একর বাগানে আমের ফলন ভালো হয়েছে, যা গত বছরের তুলনায় বেশি। কিন্তু মিয়ানমার থেকে চোরাই পথে আম আসার কারণে ভালো দাম পাওয়া যাচ্ছে না। অনেকে কম দামে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। এ নিয়ে হতাশায় ভুগছেন বাগানমালিকেরা।
সরেজমিনে বাসস্ট্যান্ড, বড়বাজার ও থানা মোড় এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, রাস্তার পাশে ফুটপাতে বসে পসরা সাজিয়ে বিভিন্ন ধরনের ফল বিক্রি করছেন বিক্রেতারা। তার মধ্যে মিয়ানমার থেকে চোরাই পথে আনা হলুদ রঙের পাকা আম ক্রেতাদের নজর কাড়ছে। মিয়ানমারের আম বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৬০ থেকে ৮০ টাকা। আর দেশি আম বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১৫০ টাকায়।
বাগানমালিকেরা জানান, টেকনাফের চৌধুরীপাড়া, ওয়াব্রাং, জাদিমুরা, দমদমিয়া, কানজরপাড়া, মিনাবাজার, খারাংখালী, ঝিমংখালী, লম্বাবিল, উনছিপ্রুং, উলুবনিয়া, মৌলভীপাড়া, নয়াপাড়া ও ঝিনাপাড়া দিয়ে প্রতিদিন চোরাই পথে মিয়ানমার থেকে আম আসছে।
সদর ইউনিয়নের রাজারছড়া গ্রামের বাসিন্দা ও বাগানমালিক আবদুল গফুর বলেন, ‘গত বছর এই সময়ে আম বিক্রি করে পেয়েছিলাম প্রায় ২১ লাখ টাকা। এবার পেয়েছি আট লাখ টাকার মতো। মিয়ানমারের আমে বাজার সয়লাব হয়ে যাওয়ায় ভালো দাম পাইনি। অনেক আম হাট থেকে ফেরত নিয়ে আসতে হয়েছে দাম না পাওয়ার কারণে। আবার কিছু বিক্রি করেছি লোকসান দিয়ে।’
বাসস্টেশন বাজারে আম বিক্রেতা মো. আলম জানান, দেশি আমের দাম বেশি, মিয়ানমারের আমের দাম কম। ফলে ক্রেতারা সস্তাটাই নিচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে টেকনাফ স্থলবন্দরের কাস্টমস সুপার হুমায়ুন কবির বলেন, বিগত বছরের তুলনায় এবার মিয়ানমার থেকে বৈধ পথে আম আমদানি কম হচ্ছে। কিন্তু চোরাই পথে আম আসায় স্থানীয় চাষিদের লোকসানের পাশাপাশি সরকার প্রচুর পরিমাণে রাজস্ব হারাচ্ছে।
টেকনাফ ৪২ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. আবু জার আল জাহিদ বলেন, টেকনাফের বিভিন্ন সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে পাচার হয়ে আসার সময় চলতি মৌসুমে কয়েক দিনে ১৫ টনের বেশি আম জব্দ করে শুল্ক বিভাগে জমা দেওয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, সীমান্তে চোরাচালান প্রতিরোধে বিজিবির জওয়ানদের টহল জোরদার করা হয়েছে।