ছয় শতাধিক কারখানায় তৈরি হচ্ছে কারেন্ট জাল

মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলার পঞ্চসার ইউনিয়নের ছয় শতাধিক কারখানায় তৈরি করা হচ্ছে কারেন্ট জাল। আইনত নিষিদ্ধ হলেও উচ্চ আদালতে রিট করে এসব জাল তৈরি করে রাজধানীর চকবাজারসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে।
গত বৃহস্পতিবার সরেজমিনে দেখা যায়, পঞ্চসার ইউনিয়নের নয়াগাঁও, মিরেশ্বরাই ও মুক্তারপুরসহ কয়েকটি গ্রামের মাঠ-ঘাট, বাড়ির উঠান ও ঘরের বারান্দায় কারখানা বসিয়ে কারেন্ট জাল (মনোফিলামেন্ট) তৈরি করা হচ্ছে। বেশির ভাগ কারখানার সামনেই কোনো সাইনবোর্ড নেই।
স্থানীয় সূত্র জানায়, মুক্তারপুর, নয়াগাঁও, মিরেশ্বরাই ও দুর্গাবাড়ি ছাড়াও ইউনিয়নের ফিরিঙ্গিবাজার, বিনোদপুর, মালিরপাথর, চন্দনতলা, দয়ালবাজার, বিসিক, সরকারপাড়া, গোসাইবাগ, হাতিমারা ও সিপাহীপাড়ায় এমন ছয় শতাধিক জাল তৈরির কারখানা রয়েছে।
সদর উপজেলা মৎস্য কার্যালয় সূত্র জানায়, ২০০২ সালের সংশোধিত আইনের ৪ (এ) ধারায় বলা হয়েছে, কারেন্ট জাল উৎপাদন, পরিবহন, বাজারজাতকরণ, সংরক্ষণ বা ব্যবহার নিষিদ্ধ। কিন্তু অসাধু জাল ব্যবসায়ীরা আইনকে পাশ কাটানোর জন্য বিভিন্ন সময়ে হাইকোর্টে ৫৬টি রিট আবেদন করেন। রিটের কারণে ব্যবস্থা নেওয়া যাচ্ছে না। অবশ্য সরকারও এসব রিটের বিরুদ্ধে আপিল করেছে। সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ৫৬টি রিটের ৪৯টি খারিজ করে দিয়েছেন। এখনো সাতটি রিট নিষ্পত্তির অপেক্ষায় আছে।
মুক্তারপুরের জাল ব্যবসায়ী সামান উদ্দিন বলেন, একই মেশিনে সব ধরনের জাল বানানো যায়। তবে চাহিদা বেশি থাকায় কারেন্ট জালই বেশি উৎপাদন করা হয়। নয়াগাঁও গ্রামের হালাদার ফিশিং নেটের মালিক আরিফ হোসেন বলেন, ‘কারেন্ট জাল উৎপাদন অবৈধ—এটা সত্য। কিন্তু এই কাজ আমি একা করছি না। আরও অনেকেই করছেন।’ মুক্তারপুরের তন্ময় ফিশিং নেটের মালিক ও সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘সব রিট খারিজ হয়ে গেলেও কারেন্ট জাল তৈরি বন্ধ হবে না। কারণ, জাল তৈরি বন্ধ হলে মানুষ মাছ খাবে কোত্থেকে।’
জানতে চাইলে সদর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. এমদাদুল হক প্রথম আলোকে জানান, ‘বাকি সাতটি রিট আবেদনের নিষ্পত্তি হলেই আমরা অবৈধ কারখানাগুলো বন্ধ করে দেব।’ তিনি জানান, রিটের সুযোগ নিয়ে ইউনিয়নে ব্যাঙের ছাতার মতো সাইনবোর্ডবিহীন কারখানা গড়ে উঠেছে। এসব কারখানায় অন্যান্য জালসহ কারেন্ট জাল উৎপাদন করা হচ্ছে। তবে কারখানাগুলোর জাল তৈরির পরিবেশের ছাড়পত্র নেই।
পরিবেশ অধিদপ্তর মুন্সিগঞ্জ কার্যালয়ের পরিদর্শক তানজিলা আহমেদ জানান, কারেন্ট জাল উৎপাদন নিষিদ্ধ। কাজেই এ ধরনের কারখানাগুলোকে পরিবেশের ছাড়পত্র দেওয়ার প্রশ্নই আসে না।
জেলা মৎস্য অধিদপ্তর সূত্র জানায়, গত বছরের নভেম্বর থেকে চলতি বছরের মে মাস পর্যন্ত মুন্সিগঞ্জে পদ্মা ও মেঘনাসহ বিভিন্ন নদী থেকে প্রায় ২৭ টন জাটকা জব্দ করা হয়েছে। এসব ঘটনায় ৮৬ হাজার মিটার কারেন্ট জালও জব্দ করা হয়। জেলে ও ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ২১টি মামলা হয়। আটজনকে সাজা দেওয়া হয়েছে।
জেলা প্রশাসক মো. সাইফুল হাসান জানান, বাকি রিট আবেদনগুলো খারিজ হওয়ার পর এসব অবৈধ জাল তৈরির কারখানার বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হবে।