ক্রেতার মুখে হাসি, বিক্রেতারা হতাশ

রাজধানীর পশুর হাট। ফাইল ছবি
রাজধানীর পশুর হাট। ফাইল ছবি

আর কদিন পরেই পবিত্র ঈদুল আজহা। এ উপলক্ষে জমজমাট রাজধানীর পশুর হাটগুলো। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে রাজধানীর বিভিন্ন হাটে গরু এনেছেন ব্যবসায়ীরা। ক্রেতারাও যাচ্ছেন হাটে। তবে গরুর যে দাম উঠছে, তাতে ক্রেতারা খুশি হলেও খুশি হতে পারছেন না বিক্রেতারা। বেশির ভাগ বিক্রেতা হতাশা প্রকাশ করেছেন। তাঁরা বলছেন, যে দামে তাঁরা গরু বিক্রি করছেন, তাতে লাভ তো দূরের কথা লোকসানের হিসাব করতে করতে বাড়ি ফিরতে হবে।
আজ রোববার সকালে রাজধানীর বিভিন্ন পশুর হাট ঘুরে এমন চিত্র পাওয়া যায়। গাবতলী পশুর হাট ও পল্লবীর ইস্টার্ন হাউজিং হাটে গিয়ে দেখা যায়, দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে এই দুই হাটে প্রচুর গরু এনেছেন ব্যবসায়ীরা। সবাই এখন বিক্রির অপেক্ষায় রয়েছেন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গতকাল শনিবার বিকেল থেকে বেচাকেনা জমে উঠতে শুরু করেছে। আজও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তা বাড়ছে।
ঝিনাইদহ থেকে গাবতলী হাটে ২০টি গরু এনেছেন ব্যবসায়ী আবদুস সামাদ। ৩০ হাজার থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ এক লাখ টাকা দাম হাঁকছেন তিনি। তিনি জানান, ২০টির মধ্যে ১০টি গরু তাঁর ভাইয়ের। বাকি ১০টি নিজের। প্রতিটি গরু বড় করতে খরচ পড়েছে বছরে প্রায় ১০ হাজার টাকার মতো। তিনি আশা করেছিলেন, এর মধ্যে একটি বড় গরু এক লাখ টাকা বিক্রি করতে পারবেন। কিন্তু দাম উঠছে ৬০ হাজার টাকা। তিন বছর ধরে তিনি গরুটি লালন করেছেন। তিনি জানান, তিন বছর একটা গরুর পেছনে যে শ্রম গেছে বাজার দেখে মনে হচ্ছে তা বৃথা। লাভ তো চিন্তাই করতে পারছেন না; বরং কোনো রকমে পুঁজি নিয়ে ফিরতে পারলে সন্তুষ্ট তিনি। তবে ঈদের এখনো তিন দিন বাকি রয়েছে। কাঙ্ক্ষিত দামে বিক্রি করতে পারবেন বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

এদিকে ইস্টার্ন হাউজিং বাজারে একটি মাত্র ষাঁড় গরু নিয়ে এসেছেন চুয়াডাঙ্গার নাসির উদ্দিন। বড় আকৃতির সাদা রঙের ষাঁড় এটি। গরুটি এখন তাঁর গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে জানান নাসির। শুক্রবার ঢাকা এসেছেন তিনি। গত বছরও এই গরুটি নিয়ে এসেছিলেন আজিমপুর পশুর হাটে। দাম উঠেছিল ৯৫ হাজার টাকা। লোকসান গুনতে হবে দেখে বিক্রি না করে গরুটি বাড়ি ফিরিয়ে নিয়েছিলেন। এবারও বেশি দামে বিক্রির আশায় ঢাকায় এসেছেন। কিন্তু ৯৫ দূরে থাক, এর ধারেকাছেও কেউ দাম বলছেন না। দাম উঠেছে ৮২ হাজার টাকা। ৯৫ হাজারের কাছাকাছি গেলে বিক্রি করে দেবেন বলেও জানান তিনি।

একই হাটে আবদুর রশিদসহ কয়েকজন মিলে ১৪টি গরু নিয়ে এসেছেন। এখন পর্যন্ত মাত্র দুটি গরু বিক্রি হয়েছে। বাকি ১২টি গরু বিক্রি হওয়ার আশায় রয়েছেন তাঁরা।

মিরপুরের আবুল হাসান জানান, তিনি ২০ হাজার টাকা দিয়ে একটি ষাঁড় গরু কিনেছেন। গরুটিতে দেড় মণের মতো মাংস হবে বলে আশা করছেন। তিনি জানান, এবার গরু কেনার বাজেট ছিল ২৫ হাজার টাকা। কিন্তু পাঁচ হাজার টাকা কমে পেয়ে খুব খুশি তিনি।

ইস্টার্ন হাউজিং পশুর হাটের স্বত্বাধিকারী জামাল সারোয়ার বলেন, গতকাল এই হাটে প্রায় ৮০০টি গরু বিক্রি হয়েছে। একটি গরু সর্বোচ্চ পাঁচ লাখ টাকায় বিক্রি হয়েছে। তবে সার্বিকভাবে এখনো পর্যন্ত দাম সস্তা রয়েছে। নতুন করে কী পরিমাণ গরু আসে, তার ওপর আগামী দুই দিনের বাজার নির্ভর করছে বলে জানান তিনি।