সাংসদপুত্রকে আবার রিমান্ডে নেওয়ার চিন্তা

বখতিয়ার আলম রনি
বখতিয়ার আলম রনি

সাংসদপুত্র বখতিয়ার আলম রনির গুলিতেই যে দুই ব্যক্তি নিহত হয়েছেন, তা প্রমাণ করার মতো যথেষ্ট তথ্য-প্রমাণ পুলিশ পেয়ে গেছে। জোড়া খুনে ব্যবহৃত সংসদের স্টিকার লাগানো প্রাডো গাড়িটিও জব্দ করা হয়েছে। তবে বখতিয়ারকে আবারও রিমান্ডে নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম গতকাল সোমবার সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেছেন। এ সময় জব্দ করা গাড়িটি পুলিশের মিডিয়া সেন্টারের সামনে আনা হয়। ডিবি কর্মকর্তারা জানান, গত রোববার সন্ধ্যায় মানিক মিয়া অ্যাভিনিউর ন্যাম ভবন থেকে গাড়িটি জব্দ করে ডিবি কার্যালয়ে নেওয়া হয়।
গত ১৩ এপ্রিল গভীর রাতে নিউ ইস্কাটনে ওই গাড়ি থেকে এলোপাতাড়ি গুলি ছুড়ে রিকশাচালক ও জনকণ্ঠ পত্রিকার অটোরিকশাচালককে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় ডিবি পুলিশ বখতিয়ার ও তাঁর গাড়িচালক ইমরান ফকিরকে গ্রেপ্তার করে। বখতিয়ারকে দায়ী করে গাড়িচালক ইমরান ইতিমধ্যে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। তিনি বলেন, ইস্কাটনে যানজটে আটকা পড়ে নেশাগ্রস্ত বখতিয়ার লাইসেন্স করা পিস্তল বের করে গাড়ির জানালা দিয়ে এলোপাতাড়ি চার-পাঁচটি গুলি ছোড়েন। বখতিয়ারের মা পিনু খান সরকারদলীয় সাংসদ ও মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।
সাংসদপুত্র হিসেবে বখতিয়ার সুবিধা পাচ্ছেন বলে গণমাধ্যমে আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে। এ বিষয়টিকে খণ্ডন করে মনিরুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, মামলাটি ছিল সূত্রবিহীন। নিজেদের পেশাগত দায়িত্ববোধ থেকে তদন্ত করে ঘটনার সঙ্গে সাংসদপুত্রের সংশ্লিষ্টতা নিশ্চিত হয়ে ডিবি তাঁকে গ্রেপ্তার করে। এরপরই ঘটনাটি গণমাধ্যমে আসে। এখন পর্যন্ত যে সাক্ষ্য-প্রমাণ এসেছে তাতে পুলিশের তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে যে বখতিয়ার ওই প্রাডো গাড়ির আরোহী ছিলেন এবং তাঁর লাইসেন্স করা অস্ত্র থেকে গুলি করা হয়েছে। সেই গুলিতেই দুজন মারা গেছেন। ব্যালাস্টিক প্রতিবেদন ও অন্যান্য প্রত্যক্ষদর্শীর বর্ণনা তথ্য-প্রমাণকে আরও জোরালো করবে। ডিবি জানতে পেরেছে, যানজটের কারণে অতিষ্ঠ হয়ে বখতিয়ার গুলি ছুড়েছিলেন। এটা বখাটেপনা, উগ্র মেজাজ থেকে তিনি কাজটি করেছেন।

সাংসদ পিনু খানের এই গাড়ি থেকে গুলি ছুড়েছিলেন তাঁর ছেলে বখতিয়ার আলম। গাড়িটি জব্দ করে গতকাল রাজধানীর মিন্টো রোডে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয়ে নেওয়া হয় l ছবি: প্রথম আলো
সাংসদ পিনু খানের এই গাড়ি থেকে গুলি ছুড়েছিলেন তাঁর ছেলে বখতিয়ার আলম। গাড়িটি জব্দ করে গতকাল রাজধানীর মিন্টো রোডে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয়ে নেওয়া হয় l ছবি: প্রথম আলো

তাঁকে আবার রিমান্ডে না আনা প্রসঙ্গে মনিরুল বলেন, জিজ্ঞাসাবাদের পরে তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনার সময় বখতিয়ারের গাড়িতে থাকা অন্য দুজন প্রত্যক্ষদর্শীকে শনাক্ত করা হয়েছে। তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদের পর ও জব্দ করা অস্ত্রের ব্যালাস্টিক প্রতিবেদন পাওয়ার পর বখতিয়ারকে আবারও রিমান্ডে আনার পরিকল্পনা রয়েছে তদন্ত কর্মকর্তার।
১৬৪ ধারায় জবানবন্দি গ্রহণের আবেদন না করা প্রসঙ্গে মনিরুল বলেন, ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় একজন আসামি স্বেচ্ছাপ্রণোদিত হয়ে আদালতে জবানবন্দি দেন। আর বখতিয়ার শুরু থেকেই বলছিলেন, তিনি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেবেন না। একপর্যায়ে তিনি বলেন, ‘আমি আপনাদের কাছে ঘটনা স্বীকার করছি, কিন্তু আদালতে করব না।’ এ অবস্থায় তাঁকে আদালতে নেওয়ার পর তিনি ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ততা অস্বীকার করলে মামলা দুর্বল হয়ে যেত। ফলে তাঁকে রিমান্ডে নেওয়ার আর কোনো সুযোগও থাকত না। সে কারণেই ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তি নেওয়ার আবেদন করা হয়নি।
মনিরুল ইসলাম জানান, ঘটনার পর গুলিবিদ্ধ দুজনের শরীর থেকে যে গুলি পাওয়া গেছে, তা সংরক্ষণ করে গত ২৮ মে সিআইডিতে ব্যালাস্টিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়। বখতিয়ারকে গ্রেপ্তারের পর তাঁর কাছ থেকে অস্ত্রটি জব্দ করে সেটিও ৬ জুন ব্যালাস্টিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়। বখতিয়ারের গাড়িচালক জবানবন্দিতে বলেছেন, ওই অস্ত্র দিয়ে গাড়িতে বসেই বখতিয়ার গুলি করেছেন। বখতিয়ারও একপর্যায়ে তা স্বীকার করেছেন। তবে পরীক্ষার প্রতিবেদন পেলে এ বিষয়গুলো সুনিশ্চিত হবে। আর জব্দ করা গাড়িটিই যে ব্যবহৃত হয়েছে, তা সিসিটিভির ফুটেজের সঙ্গে মিলিয়ে দেখা হয়েছে।
অবশ্য মামলার এজাহারে লেখা রয়েছে, সাদা মাইক্রোবাস থেকে গুলি করা হয়েছে। এর ব্যাখ্যা দিয়ে মনিরুল বলেন, ঘটনার পরপরই এত বিস্তারিত জানতেন না বাদী। কোনো প্রত্যক্ষদর্শীও পাননি। তাই প্রাথমিকভাবে এজাহারে ওই বর্ণনা লেখা হয়েছে।