বগুড়ার নন্দীগ্রামে মাদক ব্যবসায় ক্ষমতাসীনেরা!

বগুড়ার নন্দীগ্রাম উপজেলায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠন এবং যুবদলের স্থানীয় কয়েকজন নেতার বিরুদ্ধে মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণের অভিযোগ উঠেছে। তাঁদের কেউ কেউ ব্যবসার পাশাপাশি মাদক সেবনও করছেন। পুলিশ তাঁদের কয়েকজনকে একাধিকবার গ্রেপ্তারও করেছে।
গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার ২০ থেকে ২২টি স্থানে ইয়াবা, হেরোইন, গাঁজা ও ফেনসিডিল বিক্রি হয়। এর মধ্যে রনবাঘা ও ওমরপুরহাট, গুন্দইল এবং কদমা এলাকায় বেশি আড্ডা হয় গাঁজাসেবীদের। চলে ইয়াবা ও হেরোইনের ব্যবসাও। এই চারটি এলাকার মাদক ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ করেন নন্দীগ্রাম সদর ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহফুজুর রহমান ওরফে মাফু। থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু হায়দার মো. ফয়েজুর রহমান বলেন, পুলিশের অভিযানে মাহফুজুরকে একাধিকবার মাদকসহ গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
স্থানীয় লোকজন জানান, নন্দীগ্রাম পৌর শহরের কলেজপাড়া, হাইস্কুল মোড়, কচুগাড়ি, ফোকপাল, রহমাননগর এবং শেরপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় অবাধে ইয়াবা, হেরোইন ও গাঁজা বিক্রি হচ্ছে। এর মধ্যে কলেজপাড়া এলাকার মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করেন পৌর যুবদলের সহসভাপতি আইয়ুব আলী এবং হাইস্কুল মোড়ের মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করেন উপজেলা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক কমিটির সাবেক সদস্য গোলাপ হোসেন।
অন্যদিকে উপজেলার কুন্দারহাট এলাকায় ইয়াবার ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করেন উপজেলা যুবলীগের কর্মী রফিকুল ইসলাম। সম্প্রতি ইয়াবাসহ পুলিশের হাতে ধরা পড়েন তিনি।
এ ব্যাপারে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জাহেদুর রহমান বলেন, ‘কতিপয় ব্যক্তির কারণে এখন আমরা বিব্রত। তাঁদের ব্যক্তিগত অপকর্মের দায় দলের ঘাড়ে এসে চাপছে।’ তিনি বলেন, ‘কোনো মাদকসেবী ও মাদক ব্যবসায়ীর জন্য দল থেকে বিন্দুমাত্র সুপারিশ বা অনুকম্পা দেখানো হবে না বলে আমি ব্যক্তিগতভাবে পুলিশকে জানিয়ে দিয়েছি।’
নন্দীগ্রাম থানার ওসি আবু হায়দার মো. ফয়েজুর রহমান বলেন, কাহালু উপজেলা সীমান্তে চলে ফেনসিডিলের জমজমাট কারবার। আবার রনবাঘা বা ওমরপুরহাট এলাকায় গড়ে উঠেছে হেরোইনের আখড়া। উপজেলা সদরের আখড়াগুলোতে বেশি বিক্রি হয় ইয়াবা ও গাঁজা।
ওসি আরও বলেন, ‘পাঁচ মাস আগে এখানে যোগদানের পর নিশ্চিত হলাম, এখানকার মাদকের আখড়াগুলো নিয়ন্ত্রণ করছেন রাজনৈতিক দলের কয়েকজন নেতা। এখন পর্যন্ত ছাত্রলীগ, যুবলীগ, কৃষক লীগ ও যুবদলের নেতাকে মাদক সেবনকালে হাতেনাতে গ্রেপ্তার করেছি। গত পাঁচ মাসে থানায় মাদকের মামলা হয়েছে ২৫টির মতো।’
নন্দীগ্রাম থানার পুলিশের রেকর্ড অনুযায়ী, গত বৃহস্পতিবার রাত নয়টার দিকে উপজেলা সদরের নন্দীগ্রাম পাইলট উচ্চবিদ্যালয়ের নির্মাণাধীন ভবনের ভেতরে একটি মাদকের আখড়ায় অভিযান চালায় পুলিশ। এ সময় হেরোইন সেবনকালে হাতেনাতে আটক হন উপজেলা কৃষক লীগের সভাপতি শাহজাহান আলী এবং কৃষক লীগের কর্মী রাঙ্গা। একই এলাকা থেকে ফেনসিডিলসহ আটক হন প্লাবন ও সঞ্জয় নামের দুই যুবক। তাঁরা উপজেলা প্রজন্ম লীগের কর্মী বলে পুলিশকে জানিয়েছেন। রাতেই ওই চারজনকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এবং নির্বাহী হাকিম আনোয়ার ইমামের ভ্রাম্যমাণ আদালতে হাজির করা হলে প্রত্যেককে তিন মাস করে কারাদণ্ড দেন তিনি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে নন্দীগ্রাম থানার পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, গত বছরের ২৯ ডিসেম্বর রাতেও কৃষক লীগের নেতা শাহজাহান আলীসহ ছাত্রলীগ ও যুবলীগের চার নেতাকে ২১ পুরিয়া হেরোইনসহ হাতেনাতে আটক করা হয়েছিল। পরে ওপর মহলের তদবিরে শাহজাহান আলী এবং উপজেলা যুবলীগের সদস্য আবু তাহেরকে পুলিশ ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়। একই সঙ্গে আটক উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সদস্য সুলতান মাহমুদ এবং যুবলীগের কর্মী রফিকুল ইসলামকে ২১ পুরিয়া হেরোইনসহ গ্রেপ্তার দেখিয়ে জেলহাজতে পাঠানো হয়।
কৃষক লীগের নেতাকে আটকের পর থানা থেকে ছেড়ে দেওয়া নিয়ে গত ৩০ ডিসেম্বর প্রথম আলোয় একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
ওসি জানান, ৮ ডিসেম্বর রাতে ২১টি ইয়াবা বড়িসহ উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক আহ্বায়ক আনন্দ কুমার, তাঁর সহযোগী পুলক কুমার এবং পৌর যুবদলের সহসভাপতি আইয়ুব আলীকে গ্রেপ্তার করা হয়। যুবদলের নেতা আইয়ুব অবশ্য আগেও ইয়াবাসহ গ্রেপ্তার হয়েছিলেন।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জাহেদুর রহমান বলেন, কয়েক দিন আগে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মমতাজ উদ্দিন নন্দীগ্রামের প্রশাসনের সঙ্গে মতবিনিময়কালে স্পষ্ট করে বলেছেন, ‘মাদকের বিরুদ্ধে দলের কোনো ছাড় নেই। অপরাধী যে-ই হোক, ব্যবস্থা নিন।’