অবৈধ দখলদারদের বিদ্যুৎ বিল গুনছে রেল

গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার বোনারপাড়া রেলওয়ের ৩০১টি কোয়ার্টারের মধ্যে ৭৮টি বেদখল হয়ে গেছে। আওয়ামী লীগের নেতা, স্কুলশিক্ষকসহ স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা এগুলো দখল করে আছেন। এমনকি তাঁরা অবৈধভাবে বিদ্যুৎও ব্যবহার করছেন। এ কারণে প্রতি মাসে গড়ে প্রায় দুই লাখ টাকার অতিরিক্ত বিল পরিশোধ করতে হচ্ছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষকে।
বোনারপাড়া রেলস্টেশন সূত্র জানায়, সান্তাহার-লালমনিরহাট রেলপথের বোনারপাড়া জংশন স্টেশন চত্বরে ৩০১টি কোয়ার্টার রয়েছে। এর মধ্যে ২২৩টি স্টেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নামে বরাদ্দ। বাকি ৭৮টি বেদখল হয়ে গেছে।
বোনারপাড়া এলাকার ব্যবসায়ী তৌহিদুজ্জামান বলেন, দল ক্ষমতায় আসার পর আওয়ামী লীগের স্থানীয় কয়েকজন নেতা নিজের পাকা বাড়ি থাকতেও এসব কোয়ার্টারে বাস করছেন। তাঁদের ছত্রচ্ছায়ায় কোয়ার্টারে এসে উঠেছেন বিদ্যালয়ের শিক্ষকসহ স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা। দখলদারদের মধ্যে কারও কারও সঙ্গে রেল কর্তৃপক্ষেরও যোগসাজশ আছে।
গাইবান্ধা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি কার্যালয় সূত্র জানায়, বোনারপাড়া রেলস্টেশনের নামে একটি সংযোগ রয়েছে। এটি থেকে স্টেশন ও রেলের কোয়ার্টারগুলোতে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়ে থাকে। এ জন্য মাসিক গড়ে তিন লাখ টাকার বিল পরিশোধ করে রেল কর্তৃপক্ষ।
কোয়ার্টারগুলোতে বিদ্যুৎ সরবরাহব্যবস্থা তদারকির দায়িত্বে থাকা উপসহকারী প্রকৌশলী (বিদ্যুৎ) শফিউল আলম বলেন, ‘কোয়ার্টারে বসবাসকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন থেকে বিদ্যুৎ বিল বাবদ মাসে এক লাখ ২০ হাজার টাকা কাটা হয়। অবশিষ্ট এক লাখ ৮০ হাজার টাকা অবৈধ সংযোগের কারণে রেল কর্তৃপক্ষকে গচ্চা দিতে হচ্ছে। এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কাছে জবাবদিহি করতে আমাদের নাভিশ্বাস উঠে যাচ্ছে।’ তিনি আরও জানান, প্রভাবশালীদের কারণে অবৈধ সংযোগগুলো বিচ্ছিন্ন করা যাচ্ছে না। এ কাজ করতে গেলেই লাঞ্ছিত হতে হচ্ছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, সাঘাটা উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ওয়ারেছ আলী ও বোনারপাড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সম্পাদক কমল চন্দ্র বর্মণ দলীয় প্রভাব খাটিয়ে কোয়ার্টারে থাকছেন। তবে ওয়ারেছ আলী প্রভাব খাটিয়ে কোয়ার্টারে বসবাসের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘আমি রেল বিভাগে র্দীঘদিন চাকরি করেছি। সেই সুবাদে কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে বরাদ্দ নিয়েই এখানে আছি।’
দীর্ঘদিন ধরে কোয়ার্টারে বসবাস করছেন উপজেলার বাটি কমিউনিটি রেজিস্টার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবদুল মান্নান ও কলোনি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আনোয়ার হোসেন। আবদুল মান্নান বলেন, ‘রেলের উপসহকারী প্রকৌশলী (ওয়ার্কস) হাসান আলীর অনুমতি নিয়েই থাকছি।’ অপর শিক্ষক আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘কোয়ার্টারগুলো পড়ে ছিল, জানালা-দরজা চুরি হচ্ছিল। আমরা থাকছি বলে এগুলো রক্ষা পাচ্ছে।’
বোনারপাড়া রেলস্টেশনের প্রকৌশলী হাসান আলী যোগসাজশ ও অনুমতি প্রদানের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘অবৈধ দখল উচ্ছেদের দায়িত্ব আমার নয়, বাংলাদেশ রেলওয়ের লালমনিরহাট বিভাগের।’
বাংলাদেশ রেলওয়ের লালমনিরহাটের বিভাগীয় রেলওয়ে ব্যবস্থাপক (ডিআরএম) মুরাদ হোসেন বলেন, ‘অবৈধ দখলদারদের কারণে অতিরিক্ত বিদ্যুৎ বিল প্রদানের কথা শুনেছি।’