নেতারা মামলায় কাবু, কর্মীরা হতাশ

আন্দোলন থেকে গুটিয়ে যাওয়ার পর ঘরোয়া সভা আর জাতীয় ও দলীয় দিবস পালনেই আটকে আছে ঠাকুরগাঁও জেলা বিএনপি।
দলটির নেতারা বলছেন, গ্রেপ্তার ও মামলায় বিপর্যস্ত জেলার নেতারা তৃণমূল কর্মীদের দিকনির্দেশনা দিতে পারছেন না। আবার কেন্দ্র থেকেও কোনো নির্দেশনা পাচ্ছেন না তাঁরা। এ অবস্থায় থমকে আছে দলের সাংগঠনিক কার্যক্রম। নেতা-কর্মীদের মধ্যে হতাশাও ভর করেছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ঠাকুরগাঁও জেলা বিএনপির সভাপতি। গত ৬ জানুয়ারি থেকে প্রায় পাঁচ মাস ধরে তিনি কারাবন্দী। নেতারা জানান, ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের নির্দেশনা মেনে দলের স্থানীয় কার্যক্রম চলত। তাঁর অবর্তমানে এখন নেতা-কর্মীরা কিছুটা হতোদ্যম। এর ওপর বিগত আন্দোলনে স্থানীয় নেতা-কর্মীদের নামে ৮৩টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় দলের বিভিন্ন পর্যায়ের প্রায় চার হাজার নেতা-কর্মী আসামি। ফলে নেতা-কর্মীদের বড় একটি অংশের সময় কাটছে আদালত আর আইনজীবীর চেম্বারে ঘুরে ঘুরে।
বিএনপির ঠাকুরগাঁও জেলা কমিটির যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক আনছারুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘এখন স্বাভাবিক রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার পরিবেশ নেই। নেতা-কর্মীরা আদালতে হাজিরা দিয়েই কূল পাচ্ছেন না।’ নিজের নামে দ্রুত বিচার আইনে সাতটি মামলার উল্লেখ করে তিনি বলেন, মাসে অন্তত চার-পাঁচবার আদালতে হাজিরা দিতে হচ্ছে।
জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক তৈমুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘সরকারি দল পুলিশ দিয়ে যেভাবে বিএনপির নেতা-কর্মীদের ওপর নির্যাতন চালিয়েছে, তাতে ঘুরে দাঁড়াতে সময় লাগবে। হামলা-মামলার কারণে স্বাভাবিকভাবে রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করতে পারছি না। দিবস পালনের মধ্য দিয়ে হলেও সাংগঠনিক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি।’
মাঠপর্যায়ের নেতা-কর্মীরা জানান, নেতাদের কেউ কেউ ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে সমঝোতা করে চলছেন। হরতালের সময় বিএনপির নেতা ও তাঁদের আত্মীয়-স্বজনদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান চালু রেখেছেন। এভাবে সমঝোতা করে সরকারবিরোধী আন্দোলন সফল করা যায় না। তা ছাড়া আন্দোলনে জেলার শীর্ষস্থানীয় নেতারা মাঠে না থেকে আত্মগোপন করেন। নেতারা মাঠে না থাকায় তৃণমূলের কর্মীরা কর্মসূচিতে অংশ নিতে ভরসা পাননি।
সর্বশেষ দলটি কম পরিসরে দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী পালন করে। দলের সহযোগী সংগঠন জাতীয়তাবাদী সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংস্থা জাসাস জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মবার্ষিকীর পালন করেছে। এসব কর্মসূচির মাধ্যমে নেতা-কর্মীদের দলমুখো রাখার চেষ্টা চলছে।
আনোয়ার হোসেন নামে বিএনপির এক কর্মী বলেন, মামলা ও হয়রানির মধ্যেও সক্রিয় আন্দোলনে নামার মনোবল আছে তাঁদের। কিন্তু নেতারা পুলিশের ভয় দেখিয়ে নিষেধ করছেন।
অবশ্য এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঠাকুরগাঁও পৌরসভা শ্রমিক দলের সভাপতি মো. শাহাদাত হোসেন বলেন, নেতা-কর্মীরা সব সময় গ্রেপ্তার আতঙ্কে থাকেন। জেলাপর্যায় থেকে কোনো নির্দেশনা না থাকায় মাঠের নেতা-কর্মীরা নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছেন।
যদিও দলীয় কর্মকাণ্ডে স্থবিরতা এসেছে, এ কথা মানতে রাজি নন জেলা বিএনপির সহসভাপতি মির্জা ফয়সাল আমীন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিএনপিতে স্থবিরতা এসেছে, এ কথা বলা যাবে না। বাধা-প্রতিবন্ধকতার মধ্যেও আমরা কাজ করে যাচ্ছি। নতুন কর্মসূচি ঘোষণা হলে নেতা-কর্মীরা আবার মাঠে নেমে আসবেন।’