প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাব নাকচ বিএনপির

নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করবে বিএনপি। পাল্টা প্রস্তাব দিতে পারে দলটি। এ ছাড়া দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে বাধা দিলে হরতাল ও অবরোধের মতো কর্মসূচির কথা ভাবা হচ্ছে।
গতকাল শনিবার রাত আটটার দিকে গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে দলটির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটির বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্বাচনকালীন সরকারের প্রস্তাব ও ২৫ অক্টোবরের ঢাকায় সমাবেশ নিয়ে আলোচনা হয়। সেখানে এসব সিদ্ধান্ত হয় বলে জানা গেছে।
বৈঠকে নির্বাচনকালীন সরকারের প্রধান ব্যক্তি ‘নির্দলীয়’ হওয়ার ব্যাপারে কোনো ছাড় না দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। আজ রোববার ১৮ দলের বৈঠকে বিএনপির এই অবস্থানের কথা শরিকদের জানানোরও সিদ্ধান্ত হয়।
গত শুক্রবার জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনকালে সর্বদলীয় সরকার গঠনের প্রস্তাব দেন। এ জন্য তিনি বিরোধীদলীয় নেতার কাছে বিরোধীদলীয় সাংসদদের নাম চান।
বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাব নাকচ করার সিদ্ধান্ত হলেও নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে পাল্টা রূপরেখা চূড়ান্ত করতে পারেনি দলটি। গতকালের বৈঠকে ২৫ অক্টোবর ঢাকায় সমাবেশ করতে দেওয়া না হলে অবরোধ দেওয়ার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানা গেছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যদের কয়েকজন বলেছেন, নির্বাচনকালীন সরকারের প্রধানকে অবশ্যই ‘নির্দলীয়’ হতে হবে। এ থেকে বিএনপি সরবে না। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ওই সরকারের প্রধান হিসেবে মানার কোনো প্রশ্নই আসে না। তাই প্রধানমন্ত্রী যে প্রস্তাব দিয়েছেন, তা মানবে না বিএনপি।
তাঁরা বলেছেন, প্রধান ব্যক্তি নির্দলীয় হলে অন্যদের ব্যাপারে ছাড় দিতে বিএনপির কোনো আপত্তি নেই। সে ক্ষেত্রে নির্বাচনকালীন সরকারের উপদেষ্টা বা ব্যক্তিরা বর্তমান জাতীয় সংসদের সদস্য হতে পারেন। প্রয়োজনে তাঁরা সাংসদ পদ থেকে পদত্যাগ করে সরকারে অংশ নিতে পারেন।
প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাবের বিপরীতে বিএনপির প্রস্তাব দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে তুলে ধরবেন। রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলে কাল সোমবার এই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে পারে।
স্থায়ী কমিটির বৈঠকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য এম কে আনোয়ার, খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মাহবুবুর রহমান, আ স ম হান্নান শাহ, আবদুল মঈন খান, মির্জা আব্বাস প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এম কে আনোয়ার প্রথম আলোকে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে তাঁদের আস্থা নেই। তিনি একেকবার একেক কথা বলেন। প্রস্তাব দেওয়ার পর ঢাকায় সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করে প্রধানমন্ত্রী পুরোনো অবস্থায় ফিরে গেছেন। তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী অতীত অপকর্মকে ভয় পান। তিনি রংহেডেড ও মস্তিষ্কবিকৃত।’ ২৫ অক্টোবর সমাবেশ করতে দেওয়া না হলে কর্মসূচি দেওয়ার কথাও বলেন তিনি। সুশীল সমাজের কোনো কোনো প্রতিনিধির সমালোচনাও করেন এম কে আনোয়ার।
গতকালের বৈঠকে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী যে প্রস্তাব দিয়েছেন, তা বর্তমান সংবিধানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। সংবিধানে ‘সর্বদলীয় সরকার’ বলে কোনো কথা নেই। নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করতে হলে সংবিধানে সংশোধনী আনতে হবে।
গতকালের বৈঠকে সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের নিষেধাজ্ঞার প্রতিবাদে আজ রোববার সারা দেশে জেলায় জেলায় বিক্ষোভ-সমাবেশ ও মিছিল অনুষ্ঠিত হবে বলে বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়।
গতকালের বৈঠকে প্রবীণ আইনজীবী রফিক-উল হক ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা আকবর আলি খানের সমালোচনা করা হয়। বৈঠকে ‘তথাকথিত’ সুশীল সমাজ পরিস্থিতি বিবেচনা না করেই নিজস্ব যে মতামত দেয়, তাতে রাজনৈতিক পরিস্থিতি ক্ষতিগ্রস্ত হয় বলে মন্তব্য করা হয়। এ ছাড়া সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের আজকের কনভেনশনে খালেদা জিয়াকে যেতে বাধা দেওয়া হলে হরতাল বা অন্য কোনো কর্মসূচি দেওয়া হতে পারে বলে জানা যায়।
শুক্রবার প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাবের পর বিশিষ্ট নাগরিকেরা গণমাধ্যমের কাছে তাঁদের নিজস্ব মতামত ব্যক্ত করেন। এতে রফিক-উল হক বলেন, বিএনপির এই প্রস্তাব গ্রহণ করা উচিত। আর আকবর আলি খান বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ভাষণে গঠনমূলক উপাদান আছে, যা নিয়ে আলোচনা হতে পারে।