হিজড়া সেজে ১২ পুরুষ চাকরি করতে গেলেন

সমাজসেবা অধিদপ্তর হিজড়াদের পুনর্বাসন চায়। সে জন্যই দরখাস্ত আহ্বান করা হলো। সব প্রক্রিয়া শেষে ১২ জন মনোনয়নও পেলেন। কিন্তু ডাক্তারি পরীক্ষায় দেখা গেল, এঁরা আসলে হিজড়া নন। ১২ জনই পুরোদস্তুর পুরুষ। হিজড়া সেজে এসেছিলেন।
সমাজসেবা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক পারভীন মেহতাব প্রথম আলোকে বলেন, ‘সমাজসেবা অধিদপ্তর হিজড়াদের পুনর্বাসনের জন্য কাজ শুরু করেছে। সম্প্রতি আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি অধিদপ্তরের অধীনে যেসব প্রতিষ্ঠান আছে, সেগুলোয় হিজড়াদের চাকরি দেব। সে জন্যই দরখাস্ত আহ্বান করা হয়েছিল। কিন্তু পরে দেখা গেল মনোনয়ন পাওয়া ১২ জনের প্রত্যেকেই আসলে পুরুষ।’
পারভীন মেহতাব আরও জানান, তিনি চট্টগ্রামে দায়িত্ব পালনের সময় এমন ঘটনার মুখোমুখি হয়েছিলেন। সে কারণেই মন্ত্রণালয়ে যখন হিজড়াদের চাকরি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হলো, তখন তিনি ডাক্তারি পরীক্ষার সুপারিশ করেছিলেন। ঢাকার সিভিল সার্জন অফিস নিশ্চিত করেছে যে ১২ জনের কেউই প্রকৃত হিজড়া নন।
এ ঘটনায় হিজড়াদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। ‘সম্পর্কে নয়া সেতু’ নামের একটি সংগঠনের নেতা জয়া শিকদার বলেন, শুধু যৌনাঙ্গ পরীক্ষা করেই হিজড়া শনাক্ত করা উচিত নয়। হিজড়াদের সংজ্ঞা সরকার জানেই না। মানসিকভাবে যারা নিজেদের নারী মনে করে, তারাও এই সম্প্রদায়ভুক্ত। যে চিকিৎসক দল পরীক্ষা করেছে, সেখানে কোনো মনোবিজ্ঞানী ছিলেন না।
জাতীয় কিডনি ও ইউরোলজি ইনস্টিটিউটের পরিচালক কাজী রফিকুল আবেদীন বাংলাদেশের হাতে গোনা চিকিৎসকদের একজন, যিনি লিঙ্গ পরিবর্তনে অস্ত্রোপচার করে থাকেন। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় বহিরাঙ্গের নারী ও পুরুষ দুটি লিঙ্গেরই উপস্থিতি যাদের আছে, তারাই হারমোফ্রোরাইড বা হিজড়া। যারা মনে মনে নিজেদের অন্য লিঙ্গের অন্তর্ভুক্ত বলে মনে করে, তারা চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় হিজড়া নয়।
এদিকে, অনন্যা শিকদার, যিনি হিজড়া সম্প্রদায়ের উন্নয়নে কাজ করছেন, তিনি বলেছেন যে ঢাকার সিভিল সার্জন অফিস যে পরীক্ষা করেছে, সেটি যথেষ্ট নয়। আরও নিশ্চিত হওয়ার জন্য তাঁদের হরমোন পরীক্ষা করে দেখা দরকার।
২০০১ সালে হিজড়াদের নিয়ে একটি জরিপ করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। ওই জরিপে তত্ত্বাবধায়কের দায়িত্ব পালন করেছিলেন অনন্যা।