ভেজাল দুধের ৯টি কারখানা বন্ধ

ভ্রাম্যমাণ আদালত গতকাল পাবনার ফরিদপুর উপজেলার ডেমরা গ্রামে অভিযান চালিয়ে নকল দুধ ও ঘি জব্দ করেন। পরে সেগুলো কারখানার আঙিনা ও আশপাশের পুকুরে ফেলে দেওয়া হয় l ছবি: প্রথম আলো
ভ্রাম্যমাণ আদালত গতকাল পাবনার ফরিদপুর উপজেলার ডেমরা গ্রামে অভিযান চালিয়ে নকল দুধ ও ঘি জব্দ করেন। পরে সেগুলো কারখানার আঙিনা ও আশপাশের পুকুরে ফেলে দেওয়া হয় l ছবি: প্রথম আলো

পাবনার বেড়া উপজেলায় ভ্রাম্যমাণ আদালত একটি কারখানায় গতকাল সোমবার অভিযান চালিয়ে প্রচুর ভেজাল দুধ ও এ দুধ তৈরির নানা উপকরণ উদ্ধার করেছেন।
এ দিন জেলার ফরিদপুর উপজেলার ডেমরা এলাকায় আটটি নকল দুগ্ধজাত পণ্য তৈরির কারখানার সন্ধান পেয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। এসব কারখানা সিলগালা (বন্ধ) করে দিয়েছেন এবং ১ লাখ টাকা জরিমানা আদায় করেছেন।

ননির পানিতে পাওয়া যায় বড় বড় পোকা
ননির পানিতে পাওয়া যায় বড় বড় পোকা

আদালতসংশ্লিষ্ট তিন-চারজন কর্মকর্তা বলেন, বেড়া উপজেলার হাটুরিয়া গ্রামের আমিরুল ইসলাম দীর্ঘদিন ধরে ভেজাল দুধ তৈরি করে আসছিলেন। এ জন্য তিনি তাঁর বাড়িতে গোপন কারখানা তৈরি করেন। সেখানে তিনি খামারিদের কাছ থেকে দুধ সংগ্রহ করে প্রথমে তা থেকে আসল ননি তুলে নিতেন। এরপর ননিবিহীন দুধে নকল ননি মিশিয়ে ভেজাল দুধ তৈরি করতেন। নকল ননি তৈরি করার জন্য আধা লিটার নিম্নমানের পাম অয়েলের সঙ্গে আধা লিটার ভালো দুধ মিশিয়ে ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করা হতো।
গোপন তথ্যের ভিত্তিতে বেড়া উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) এস এম ফেরদৌস ইসলামের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালত গতকাল সোমবার সকাল নয়টার দিকে আমিরুলের কারখানায় অভিযান চালান। আদালত সেখানে নয়টি ক্যান (প্রতি ক্যানে ৪০ লিটার) ও তিনটি প্লাস্টিকের ড্রামভর্তি (প্রতিটিতে ২০ লিটার) ভেজাল দুধ পান। এ ছাড়া সেখান থেকে প্রায় ২৫ লিটার পাম অয়েল, দুটি ব্লেন্ডার, দুধ থেকে ননি বের করার দুটি মেশিন উদ্ধার করা হয়। ভেজাল দুধ ঘটনাস্থলে নষ্ট করা হয়। অন্যান্য সামগ্রী আটকে থানায় সোপর্দ করা হয়।
গত বছরের ১১ ডিসেম্বর ভ্রাম্যমাণ আদালত আমিরুল ইসলামের কারখানায় অভিযান চালিয়ে প্রচুর ভেজাল দুধসহ দুধ তৈরির উপকরণ জব্দ করেন।
ভ্রাম্যমাণ আদালতে অন্যান্য কর্মকর্তার মধ্যে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ফজলুল হক ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্যানিটারি ইন্সপেক্টর আবদুস সালাম।
সহকারী কমিশনার (ভূমি) এস এম ফেরদৌস ইসলাম বলেন, যে জায়গাটিতে ভেজাল দুধ তৈরির কারখানা স্থাপন করা হয়েছিল, সেখানে গাড়িতে তো দূরের কথা, হেঁটে পৌঁছানোও কঠিন। ফলে সেখানে পৌঁছানোর আগেই কারখানার লোকজন পালিয়ে যান। তবে তাঁদের ধরা না গেলেও এ ব্যাপারে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বেড়া ও সাঁথিয়া উপজেলাসহ পাবনার কয়েকটি উপজেলা থেকে পাঁচ-ছয়টি দুগ্ধ প্রক্রিয়াজাতকারী প্রতিষ্ঠান দুধ সংগ্রহ করে থাকে। দুধে কী পরিমাণ ননি আছে, তার ওপর ভিত্তি করেই প্রতিষ্ঠানগুলো দুধের মান ও দাম নির্ধারণ করে। এই সুযোগে অসাধু দুধ ব্যবসায়ীরা আসল দুধের সঙ্গে নকল ননিযুক্ত ভেজাল দুধ মিশিয়ে কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে সরবরাহ করে থাকে বলে অভিযোগ রয়েছে। রমজান মাস ও ঈদুল ফিতর সামনে রেখে সম্প্রতি বেড়া ও সাঁথিয়া উপজেলায় ভেজাল দুধের উৎপাদন ব্যাপক বেড়ে গেছে। এ নিয়ে গত শনিবার প্রথম আলোয় একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ছাপা হয়।
জেলার ফরিদপুর উপজেলার ডেমরা এলাকায় ছানার পানিতে রাসায়নিক পদার্থ ও ময়দা মিশিয়ে দুধ তৈরি করা হচ্ছে। দুধের উচ্ছিষ্টের সঙ্গে রাসায়নিক পদার্থ ও পাম অয়েল মিশিয়ে তৈরি করা হচ্ছে ঘি। এ ছাড়া ময়লা আবর্জনার মধ্যে তৈরি হচ্ছে দুদ্ধজাত পণ্য। পাবনার দুগ্ধ সমৃদ্ধ এমন আটটি নকল দুগ্ধজাত পণ্য তৈরির কারখানার সন্ধান পেয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। গতকাল ফরিদপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহ মোমিনের নেতৃত্বে পরিচালিত ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান চালিয়ে এসব কারখানা সিলগালা ও ১ লাখ টাকা জরিমানা আদায় করেছেন।
ইউএনও শাহ মোমিন বলেন, দাম ও চাহিদা বাড়ায় একশ্রেণির ব্যবসায়ী নকল দুধ ও ঘি তৈরি শুরু করেছে। গোপন তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে ডেমরা গ্রামের রবিউল হোসেনের কারখানায় ভেজাল দুধ ও ঘি তৈরির প্রায় আড়াই লাখ টাকার ছানা, নাগ ডেমরা গ্রামের মুকুল হোসেনের কারখানার প্রায় ৩ লাখ টাকার ছানা, গোলকাটা গ্রামের জুয়েল ঘোষের কারখানায় দুধের ননির পানিতে পোকা ও তেলাপোকাসহ কীটপতঙ্গ পাওয়ায় কারখানার সকল মালামাল, নবঘোষের কারখানায় অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে ছানা সংরক্ষণ করায় সকল মালামাল এবং রতনপুর গ্রামের সুমন ঘোষের কারখানার সব দুগ্ধজাত পণ্য বাজেয়াপ্ত এবং কারখানাগুলো সিলগালা করে দেওয়া হয়েছে। এসব কারখানার মালিকেরা পালিয়ে যান।
তবে নকল ঘি তৈরির সময় হাতেনাতে ধরা পড়ায় দুলাল ঘোষের কারখানা থেকে ৫০ কেজি ঘি বাজেয়াপ্ত এবং কারখানাটি সিলগালা করে ১ লাখ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে।
অভিযান চলাকালে উপজেলার গোলকাটা গ্রামের নবঘোষের স্ত্রী লক্ষ্মী রানী ঘোষ বলেন, ‘আমরা নকল ঘি তৈরি করি না। ঘি তৈরির পর যে উচ্ছিষ্ট থাকে, সেই থেকে আবার ঘি বাইর হয়। এ জন্যি উচ্ছিষ্ট রাখি দেই।’