'অসহযোগিতার' কারণে আলামত সংগ্রহ করা যায়নি

চট্টগ্রাম বন্দরে চার ঘণ্টা অপেক্ষা করেও কাস্টমস কর্মকর্তাদের অসহযোগিতার কারণে জব্দ তালিকা তৈরি ও আলামত সংগ্রহ করতে পারেননি বলে অভিযোগ করেছেন তদন্ত কর্মকর্তা।
তেলের সঙ্গে কোকেন আনার ঘটনায় করা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও চট্টগ্রাম নগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের সহকারী কমিশনার মো. কামরুজ্জামান গতকাল সোমবার বন্দরে যান। তাঁর সঙ্গে ডিবির আরও কয়েকজন কর্মকর্তা ছিলেন। আদালতের নির্দেশে জব্দ হওয়া সূর্যমুখী তেলের চালানের ড্রাম থেকে আলামত সংগ্রহ করার জন্য তাঁরা বন্দরে চার ঘণ্টা অবস্থান করলেও কাস্টমসের সহযোগিতা না পেয়ে ফিরে আসতে বাধ্য হয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন।
তবে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ বলছে, তদন্ত কর্মকর্তা যাতে জব্দ করা চালান থেকে নমুনা সংগ্রহ করতে পারেন, সে জন্য তারা ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করে। কিন্তু প্রস্তুতি শেষ করার আগেই তদন্ত কর্মকর্তা তাদের না জানিয়ে চলে যাওয়ায় এ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
জব্দ হওয়া সূর্যমুখী তেলের চালানের প্রতিটি ড্রাম থেকে ২০০ মিলিমিটার করে নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষাগারে পাঠানো, জব্দ তালিকা তৈরি এবং তদন্তে পুলিশকে সহযোগিতার জন্য চট্টগ্রাম বন্দর, কাস্টমসসহ সংশ্লিষ্ট সব সংস্থাকে গত রোববার নির্দেশ দেন চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম মোহাম্মদ ফরিদ আলম। এ নির্দেশনা নিয়েই বন্দরে যায় পুলিশ।
জানতে চাইলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মো. কামরুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আদালতের নির্দেশনা নিয়ে জব্দ তালিকা তৈরি এবং পরীক্ষাগারে পাঠানোর জন্য নমুনা সংগ্রহের জন্য গেলেও চট্টগ্রাম কাস্টমস কর্তৃপক্ষ কোনো সহযোগিতা করেনি। বেলা ১১টা থেকে তিনটা পর্যন্ত বন্দরে অবস্থান করলেও কাউকে পাওয়া যায়নি। কাজ করতে গিয়ে সহযোগিতা না পাওয়ায় বিষয়টি লিখিতভাবে আদালতকে জানানো হয়েছে। আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
পুলিশের তথ্যের ভিত্তিতে গত ৬ জুন কোকেন সন্দেহে সূর্যমুখী তেলের চালানটি চট্টগ্রাম বন্দরে জব্দ করে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর। গত ২৭ জুন তেলের চালানের একটি ড্রামের নমুনায় কোকেন শনাক্ত হয়।
তদন্ত কর্মকর্তার অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম কাস্টমস কমিশনার হোসেন আহমদ প্রথম আলোকে জানান, চালান থেকে নমুনা সংগ্রহের জন্য তদন্ত কর্মকর্তার চিঠি পাওয়ার পর দ্রুত দায়িত্বপ্রাপ্ত কাস্টমস কর্মকর্তাকে ব্যবস্থা নিতে তিনি নির্দেশ দেন। তদন্ত কর্মকর্তা যাতে চালানটি থেকে নমুনা সংগ্রহ করতে পারেন, সে জন্য প্রস্তুতি নিতে ঘণ্টা খানেক সময় লাগে। প্রস্তুতি শেষ করার পর তাঁকে জানানো হয় পুলিশ চলে গেছে।
শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের আবেদন: আলামত সংগ্রহ করে পরীক্ষাগারে পাঠাতে আদালতের দেওয়া আদেশের বিরুদ্ধে আবেদন করেছেন শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক হোসাইন আহমেদ। গতকাল বিকেলে ভারপ্রাপ্ত চট্টগ্রাম মুখ্য মহানগর হাকিম নুরুল আলমের আদালতে এ আবেদন করা হয়। এ বিষয়ে কোনো আদেশ না দিয়ে এটি নথিভুক্ত রাখার আদেশ দেন আদালত।
জানতে চাইলে গতকাল রাতে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক হোসাইন আহমেদ আদালতে আবেদন করার কথা স্বীকার করলেও বিস্তারিত কিছু বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (প্রসিকিউশন) কাজী মুত্তাকী ইবনু মিনান প্রথম আলোকে বলেন, গত রোববার চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম মোহাম্মদ ফরিদ আলম আলামত সংগ্রহ করে পরীক্ষাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। একই সঙ্গে জব্দ তালিকা তৈরিরও আদেশ দেন। এ আদেশটি স্থগিত রাখতে ভারপ্রাপ্ত চট্টগ্রাম মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে আবেদন করেছেন শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক। এতে উল্লেখ করা হয়, ঢাকায় আলামত পরীক্ষায় কোকেন পাওয়া গেছে। আলামতগুলো বন্দরের ইয়ার্ডে তাঁদের হেফাজতে রয়েছে। তদন্ত কমিটি গঠন করে শুল্ক গোয়েন্দা তদন্ত অব্যাহত রেখেছে। মামলার আলামত অন্য কোনো সংস্থার কাছে হস্তান্তর করা হলে মামলাটির তদন্ত ব্যাহত হতে পারে। তবে আদালত এ বিষয়ে কোনো আদেশ না দিয়ে এটি নথিভুক্ত রাখার আদেশ দেন।