অসময়ের বৃষ্টি আর জমে থাকা পানিতে ভোগান্তি

অসময়ের বৃষ্টি এবং এই বৃষ্টির পানি রাস্তায় জমে থাকায় রাজধানীর বেশ কিছু এলাকার মানুষকে গতকাল মঙ্গলবার ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে। সকালে কর্মস্থলমুখী মানুষ ও বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের বেশি দুর্ভোগ পোহাতে হয়।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গতকাল সকাল ছয়টা থেকে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত ঢাকায় বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয় ৩৫ মিলিমিটার। গতকাল রাজধানীসহ দেশের অনেক এলাকায় বৃষ্টি হয়েছে। রাজধানীর একেক স্থানে একেক সময়ে বৃষ্টি হয়েছে। কখনো ঝুম ও কখনো টিপটিপ বৃষ্টি ছিল। ছাতা না নিয়ে বাইরে বের হওয়া মানুষকে হঠাৎ শুরু হওয়া বৃষ্টিতে ভিজতে হয়েছে। দেশের অন্যান্য স্থানেও বৃষ্টির ধরন ছিল এমনই।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের পর্যবেক্ষণ বলছে, বাংলাদেশ ভূখণ্ড থেকে মৌসুমি বায়ু যাওয়ার আগে শেষ বৃষ্টি ঝরছে। একই সঙ্গে দক্ষিণ-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর এবং তৎসংলগ্ন এলাকায় একটি লঘুচাপের সৃষ্টি ও ঘনীভূত হয়ে একই এলাকায় সুস্পষ্ট লঘুচাপে পরিণত হয়েছে। এর বর্ধিতাংশ উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে। দক্ষিণ-পশ্চিমা মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের পশ্চিমাংশ থেকে বিতাড়িত হয়েছে এবং পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বাংলাদেশের অবশিষ্টাংশ হতে বিতাড়িত হতে পারে। এর ফলে সারা দেশে বৃষ্টি হচ্ছে।

আবহাওয়া দপ্তরের আজ বুধবারের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট        বিভাগের অনেক জায়গায় এবং রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় অস্থায়ী দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে ভারী বর্ষণের সম্ভাবনা রয়েছে। সারা দেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।

গতকাল দেশে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত হয়েছে ফেনীতে, ৫৪ মিলিমিটার। এ ছাড়া শ্রীমঙ্গলে ৫০ ও সিলেটে ৩৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়।

ভোগান্তি: পুরান ঢাকার কে এম দাস লেনে সকালের সামান্য বৃষ্টিতেই পানি জমে যায়। নালা আর বৃষ্টির পানি একাকার হয়ে যায়। ওই এলাকার বাসিন্দা ইমামগঞ্জে একটি বেসরকারি ব্যাংকে কর্মরত মর্জিনা বেগম জানান, বৃষ্টির পর কর্মস্থলে যেতে প্রায় হাঁটুপানি ডিঙ্গিয়ে তাঁকে রিকশা খুঁজতে হয়েছে। ৪০ টাকার ভাড়া গুনতে হয়েছে ১০০ টাকা।

গোপীবাগের পেয়াদাপাড়া থেকে মৌচাকের একটি কোচিং সেন্টারে যাওয়ার জন্য রিকশা খুঁজতে গিয়ে শিক্ষার্থী উর্মিলা ছাতা থাকা সত্ত্বেও ভিজে যায়। কারণ, দমকা বাতাসে তার ছাতা উল্টে যায়।

গোলাপবাগের বাসিন্দা গাড়িচালক মো. লিটন জানান, সকাল সোয়া আটটার দিকে মতিঝিল এলাকায় বৃষ্টির দাপটে গাড়ি চালানো দুষ্কর হয়ে যায়। ওই সময় হেডলাইট জ্বালিয়ে গাড়ি চালালেও দুর্ঘটনার আশঙ্কায় ছিলেন।

বৃষ্টিতে মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকা, দিলকুশা, আরামবাগ, ফকিরেরপুল, নয়াপল্টন, পুরানা পল্টন, কাকরাইল, মৌচাক, মালিবাগ, শেরেবাংলা নগর, রামপুরা, টঙ্গী ডাইভারশন রোড, পরীবাগ, মিরপুরের গোলচক্কর থেকে কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া, পুরান ঢাকার বিস্তীর্ণ এলাকায় পানি জমে যায়। ফলে চলাচলে ভোগান্তিতে পড়তে হয় মানুষকে।

ঢাকা ওয়াসার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. আবদুল মান্নান পানি জমে যাওয়া সম্পর্কে বলেন, আগে ভারী বৃষ্টি হলে যেখানে ঘণ্টার পর ঘণ্টা পানি জমে থাকত, সেখানে এখন অল্প সময় পরই পানি সরে যায়। বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও ঢাকা ওয়াসা পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করছে।