বগুড়ার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তিনটি বন্ধই থাকে

প্রতিষ্ঠার পর থেকেই বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার এমপিওভুক্ত একটিসহ দুটি কারিগরি ও একটি মহিলা কলেজ বেশির ভাগ সময়ই বন্ধ থাকে।
সরেজমিনে পরিদর্শন এবং স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০০৬ সালে উপজেলার বাঘোপাড়া গ্রামে পূর্ব বিবিরপাড়া আদর্শ টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিএম কলেজ পাঠদানের অনুমতি পায়। এরপর শিক্ষার্থী ভর্তি করা হলেও সেখানে কোনো ক্লাস হয় না। কলেজটি এমপিওভুক্ত হয়নি।
সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা গেছে, টিনের চালা দিয়ে তৈরি কয়েকটি ঘর নিয়ে কলেজটি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। অনেক দিন থেকে ঘরের দরজাগুলো খোলা হয়নি। বাইরে প্রতিষ্ঠানটির কোনো সাইনবোর্ডও নেই। কলেজের মাঠে মাষকলাইয়ের চাষ করা হয়েছে।
এলাকাবাসী জানান, মাঝেমধ্যে কলেজ খোলা হয়। স্থানীয় গোসাইবাড়ি টেকনিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ আবদুল মজিদ এই কলেজের প্রতিষ্ঠাতা। তাঁর স্ত্রী কামরুন নাহার কলেজের অধ্যক্ষ। কামরুন নাহার একই সঙ্গে গোসাইবাড়ি টেকনিক্যাল কলেজের কম্পিউটার বিভাগের শিক্ষক বলে তাঁরা জানান।
কলেজের প্রতিষ্ঠাতা আবদুল মজিদ বলেন, তাঁর স্ত্রী এখনো অধ্যক্ষ হননি। একজনকে ভারপ্রাপ্ত হিসেবে রাখা হয়েছে। কলেজে একেবারেই ক্লাস হয় না, তা ঠিক নয়। এখানকার বেশির ভাগ শিক্ষার্থী পোশাক কারখানায় চাকরি করেন। সে জন্য তাঁরা ঠিকমতো আসেন না। বর্তমানে আর কেউ তাঁর কলেজে পড়েন না।
সারিয়াকান্দির চরাঞ্চল জামথল গ্রামে ২০০১ সালে স্থাপন করা হয় জামথল টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিএম কলেজটি। ২০০৩ সালে কলেজটি পাঠদানের অনুমতি পায় এবং ২০০৪ সালে এমপিওভুক্ত করা হয়। বিদ্যুৎ না থাকায় কম্পিউটার চলে না। জেনারেটর থাকলেও খরচের ভয়ে চালানো হয় না। কলেজটিতে প্রথম সেমিস্টারে ৫২ জন এবং দ্বিতীয় সেমিস্টারে ৫৬ জন শিক্ষার্থী রয়েছেন।
এলাকাবাসী জানান, এমপিওভুক্ত এই কলেজটি বেশির ভাগ সময় বন্ধ থাকে। মাঝেমধ্যে ক্লাস হয়।
দ্বিতীয় সেমিস্টারের ছাত্র মোস্তাফিজুর রহমান জানান, এখন পর্যন্ত এক দিনের জন্যও কলেজে কম্পিউটার ব্যবহারিক ক্লাস হয়নি। পরিসংখ্যান, ব্যবসায় গণিত, পরিসংখ্যান, ব্যবসায় সংগঠন ও ব্যবস্থাপনা বিভাগেরও কোনো শিক্ষক নেই।
বেশির ভাগ সময় বন্ধ থাকার অভিযোগ অস্বীকার করে কলেজের অধ্যক্ষ ও কাজলা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম বলেন, কলেজে শুধু পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষক নেই। তাই পরীক্ষার আগে বাইরে থেকে শিক্ষক এনে পাঠদান করানো হয়।
জোড়গাছা ইউনিয়নে ২০০৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় জোড়গাছা মডেল মহিলা কলেজ। জোড়গাছা ফাজিল মাদ্রাসার ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক আশরাফুল ইসলাম এই কলেজ প্রতিষ্ঠা করে নিজেই অধ্যক্ষ হয়েছেন। ২০১১ সালে পাঠদানের অনুমতি পাওয়ার পর ২০১২ সালে কলেজে শিক্ষার্থী ভর্তি করানো হয়।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, কাগজে-কলমে কিছু শিক্ষার্থী ভর্তি দেখানো হলেও এই কলেজে কোনো দিনই পাঠদান হয়নি। যে কারণে এই কলেজের ছাত্রীদের উপবৃত্তির টাকা ফেরত দেওয়া হয়েছে।
কলেজের অধ্যক্ষ আশরাফুল ইসলাম বলেন, কলেজে এ বছর ৫০ জন ছাত্রী ভর্তি হয়েছে। দ্বিতীয় বর্ষে রয়েছে ৩০ জন। এলাকার কিছু লোক ষড়যন্ত্র করে উপবৃত্তি বন্ধ করে দিয়েছেন।
সারিয়াকান্দি উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা রুহুল আমিন বলেন, ‘কলেজ দেখার দায়িত্ব আমাদের নয়। শুধু উপবৃত্তি কার্যক্রম আমাদের অফিস থেকে দেখা হয়। জোড়গাছা মডেল কলেজে গিয়ে শিক্ষার্থী না পাওয়ার কারণে উপবৃত্তি না দিয়ে ফেরত পাঠানো হয়েছে।’
সারিয়াকান্দি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. জিল্লুর রহমান খান বলেন, জামথল টেকনিক্যাল কলেজে তিন দিন গিয়ে তিনি কলেজটি বন্ধ পান। যে কারণে তিন মাস ধরে শিক্ষকদের বেতন বন্ধ করা হয়েছে।