বাঁশি আর ইশারাই ভরসা

এভাবেই চলে ঢাকার যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ। গত রোববার টিপু সুলতান রোড থেকে তোলা ছবি l প্রথম আলো
এভাবেই চলে ঢাকার যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ। গত রোববার টিপু সুলতান রোড থেকে তোলা ছবি l প্রথম আলো

রাজধানীর অধিকাংশ রাস্তার মোড়ে আছে সিগন্যাল বাতি। কোথাও কোথাও স্বয়ংক্রিয় টাইমার কাউন্টডাউন (ক্ষণগণনা) পদ্ধতিও আছে। তবে সড়কে যান চলাচল ঠিক রাখতে ট্রাফিক পুলিশের ভরসা বাঁশি আর হাতের ইশারা।
গাড়ির চালকেরা বলছেন, সিগন্যাল বাতি পদ্ধতিই ভালো ছিল। এতে অন্তত মোড় পারাপারে সবাই সমান সুযোগ পেত। তবে ট্রাফিক পুলিশের দাবি, রাস্তার তুলনায় গাড়ি এত বেশি যে এখানে সিগন্যাল বাতির কোনো কার্যকারিতা নেই।
৬ জুলাই রাত ১০টার দিকে রাজধানীর নীলক্ষেত মোড়ে কথা হয় ট্রাফিক পুলিশের সদস্য মো. শাহজাহানের সঙ্গে। সিগন্যাল বাতি অনুযায়ী গাড়ি ছাড়েন—এমন প্রশ্ন করতেই তিনি বললেন, ‘বাতির কোনো ভাত নাই, কাজে আসে না। এইখানে আমাগো মানে না, আর বাতি!’ আর টাইমার মেশিন… বলতেই শাহজাহানের উত্তর, ‘এই লোকাল রাস্তায় ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে এটা দিয়ে কাজ হইব না। ভিআইপি সড়কে গিয়া খোঁজ নেন।’
২৬ বছর ধরে গাড়ি চালান মো. বাচ্চু মিয়া। এখন আশীর্বাদ পরিবহনের গাড়ি চালান। বাচ্চু মিয়া বলেন, ‘সিগন্যাল বাতিই ভালো ছিল। এতে সবাই সমান সুযোগ পাইত। ভিআইপিগো খানা থাকত না। এখন আমাগোরে ট্রাফিক আটকাই রাইখ্যা ভিআইপির গাড়ি ছাড়ে।’
২০০৯ সালের ২২ নভেম্বর বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে ঢাকা আরবান ট্রান্সপোর্ট প্রকল্পের আওতায় ৭০টি স্থানে ২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ট্রাফিক সংকেতবাতি স্থাপন করা হয়। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ প্রকল্প পরিচালক মো. শিহাব উল্লাহ প্রথম আলোকে জানান, ৭০টি সিগন্যাল বাতিতে বিদ্যুৎ খরচ, মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণে প্রতিবছর খরচ হয় প্রায় ৮০ লাখ টাকা, যা সিটি করপোরেশনই বহন করে। অথচ এই ৮০ লাখ টাকা ব্যয়ের কোনো সুফলই পাচ্ছেন না নগরবাসী। তবে সিগন্যাল বাতির অধিকাংশ এখন নষ্ট অথবা চালু থাকে না।
যানজট কমাতে ২০১৪ সালের মার্চ মাসে ঢাকার ৬৫টি ট্রাফিক সিগন্যাল ইন্টারসেকশনে ‘কাউন্টডাউন টাইমার’ যন্ত্র চালু করা হয়। এতে দুই সিটি করপোরেশনের ১৫ কোটি টাকা ব্যয় হয়। এক বছরের মাথায় সেগুলো এখন নষ্ট হয়ে গেছে।
এ বছরের ১৮ জুন রাজধানীতে সিগন্যাল বাতি অনুযায়ী যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হয়। পুলিশের দাবি, এতে রাজধানী স্থবির হয়ে পড়ে। তাই তারা আগের অবস্থায় ফিরে গেছে।
ডিএমপির উপকমিশনার (ট্রাফিক-দক্ষিণ) খান মোহাম্মদ রেজওয়ান প্রথম আলোকে বলেন, টাইমার মেশিন বসানোর সময় পুলিশের পক্ষ থেকে আপত্তি করা হয়েছিল। এর পেছনে যুক্ত ছিল, ঢাকায় যানবাহনের যে চাপ, তার সঙ্গে টাইমার মেশিন সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। এখন তা-ই হয়েছে। ফলে এটা কোনো কাজেই আসছে না। সুষ্ঠুভাবে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণের জন্য সিটি করপোরেশন ও ট্রাফিক বিভাগের মধ্যে সমন্বয় থাকা দরকার বলে মনে করেন তিনি।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মাহবুব উন নবীর মতে, যানজট নিরসনে সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে পুলিশ ও সিটি করপোরেশনের লোকদের নিয়ে বসতে হবে। তাঁদের মধ্যে সমন্বয় করতে হবে এবং ব্যক্তিগত ছোট গাড়ি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। তা না হলে যা করা হোক না কেন, যানজট নিরসন সম্ভব না।