ঢাকার বাইরে শক্তি দেখানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি

বিএনপি
বিএনপি

নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে ২৫ অক্টোবর রাজধানীতে সমাবেশ করতে ব্যর্থ হলে ওই দিন ঢাকার বাইরে জেলা-উপজেলায় শক্তি দেখাতে চায় বিএনপি। এ লক্ষ্যে বিএনপিসহ ১৮-দলীয় জোট নানা প্রস্তুতি নিচ্ছে। এ ক্ষেত্রে ঢাকার আশপাশের ও মহাসড়কসংলগ্ন জেলা-উপজেলা এবং বিভাগীয় শহরকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
বিএনপির দায়িত্বশীল একাধিক সূত্র জানায়, বিএনপি মনে করছে, ঢাকায় সমাবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা সরকার প্রত্যাহার করবে না। বরং সারা দেশ থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা-কারী বাহিনীর সদস্যদের রাজধানীতে জড়ো করে বিরোধী দলকে মোকাবিলায় সর্বশক্তি নিয়োগ করবে। এ অবস্থায় ঢাকায় সমাবেশ করার সুযোগ বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৮-দলীয় জোট না-ও পেতে পারে। সে ক্ষেত্রে বিভিন্ন মহাসড়কসংলগ্ন জেলা ও বিভাগীয় শহরে বিক্ষোভের নামে রাজপথ দখলে রাখার চেষ্টা করবে তারা। একই সঙ্গে ঢাকাকে চারপাশ থেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখার চেষ্টাও থাকবে দলটির। এ ছাড়া ঢাকায় সমাবেশ ‘করতে না দেওয়ার’ প্রতিবাদে ২৭ অক্টোবর থেকে টানা তিন দিন হরতাল-অবরোধ কর্মসূচি দেওয়ারও প্রাথমিক সিদ্ধান্ত রয়েছে বিরোধী দলীয় জোটের।
জোটের একাধিক সূত্র জানায়, গতকাল বুধবার ১৮-দলীয় জোটের মহাসচিব পর্যায়ের বৈঠকে ২৫ অক্টোবর সারা দেশে সমাবেশ করার জন্য ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। এ ছাড়া জেলা পর্যায়ের নেতাদের আজ বৃহস্পতিবার থেকেই মাঠে সক্রিয় থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি তৈমুর আলম খন্দকার বলেন, ‘পুলিশের হয়রানির মুখেও আমাদের কর্মীরা প্রস্তুত আছেন।’ ঢাকার প্রবেশপথে তাঁদের অবস্থান থাকবে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কেন্দ্র থেকে যেভাবে নির্দেশ আসবে, আমরা সেভাবে কর্মসূচি পালন করব।’

ঢাকা মহানগর বিএনপির সদস্যসচিব আবদুস সালামও দাবি করেন, ঢাকায় সমাবেশ করার সব প্রস্তুতি তাঁদের আছে।

রাজপথে আন্দোলনের মাধ্যমে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি আদায় করার কথা বলে আসছে বিএনপি। ঈদের আগে বিভাগীয় শহরগুলোতে অনুষ্ঠিত ১৮ দলের জনসভায় খালেদা জিয়া নির্দলীয় সরকারের দাবি মানতে ২৪ অক্টোবর পর্যন্ত সময় বেঁধে দেন। আজ ২৪ অক্টোবর তা শেষ হচ্ছে।

১৮-দলীয় জোটের একাধিক নেতা প্রথম আলোকে বলেন, ঈদের পর প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচনকালীন সরকারের প্রস্তাব, বিরোধীদলীয় নেতার পাল্টা প্রস্তাব এবং এ নিয়ে আলোচনার উদ্যোগ নিতে সৈয়দ আশরাফকে মির্জা ফখরুলের চিঠি দেওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে বিএনপির আন্দোলনের প্রস্তুতিতে কিছুটা ভাটা পড়ে। এ নিয়ে খালেদা জিয়ার সঙ্গে গত মঙ্গলবার রাতে জোটের কয়েকজন নেতার আলোচনা হয়। খালেদা জিয়াকে ওই নেতারা রাজপথ না ছাড়ার পরামর্শ দেন। এরপর সব মহানগর ও পাশাপাশি জেলাগুলোতে বিএনপির নেতা-কর্মীদের আজ থেকে সক্রিয় থাকতে কেন্দ্র থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়।

জানতে চাইলে চট্টগ্রাম জেলা ও মহানগরের একাধিক নেতা স্বীকার করেছেন, আজ বৃহস্পতিবার থেকেই সব জেলা-মহানগরের নেতা-কর্মীদের মাঠে থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তাঁরাও সে নির্দেশ পেয়েছেন।

চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সভাপতি আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, পুলিশের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও যেকোনো মূল্যে ২৫ অক্টোবর সমাবেশ করার প্রস্তুতি নিচ্ছে চট্টগ্রাম বিএনপি।

গতকাল ১৮-দলীয় জোটের বৈঠক শেষে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের বলেন, ২৫ অক্টোবর ১৮-দলীয় জোট রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এবং ঢাকার বাইরে সব জেলা-উপজেলায় সমাবেশ করবে। ঢাকায় সভা-সমাবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

সমাবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা না হলেও ঢাকায় সমাবেশ হবে কি না, জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা বলছি, আমরা সমাবেশ করব। নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার জন্য আমরা সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছি।’ তিনি বলেন, নাশকতার মাধ্যমে সরকার পরিবর্তনের কোনো ইচ্ছা তাঁদের নেই। তাঁরা শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করতে চান। কেউ অশান্তি সৃষ্টি করলে তার দায় সরকারকে নিতে হবে।