শ্লীলতাহানির পর অপবাদ সইতে না পেরে আত্মহত্যা

‘আমি আবার বলছি, আমি খারাপ মেয়ে নই। তাই আমি আমার জীবন নিয়ে চলে যাচ্ছি।’ চিঠিতে এমন কথা লিখে চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার চৌডালা ইউনিয়নের চরউদনয়নগর গ্রামের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী এনামুল হকের প্রতিবন্ধী মেয়ে কলেজছাত্রী পপিয়ারা খাতুন গত বুধবার আত্মহত্যা করেছে।
শ্লীলতাহানি করার পর সালিসে খারাপ মেয়ের অপবাদ দেওয়ায় তা সইতে না পেরে পপিয়ারা আত্মহত্যা করে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। সে জোহর আহমেদ ডিগ্রি কলেজের দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্রী ছিল।
পপিয়ারার পরিবার ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় প্রতিবেশীর বাড়ি থেকে নিজের বাড়িতে ফিরছিল পপিয়ারা। পথে দুখু ও মামুন নামের দুই মাদকসেবী তাকে ধর্ষণের চেষ্টা চালায়। এ সময় পপিয়ারার চিৎকার শুনে লোকজন ছুটে এসে দুখুকে ধরে ফেলেন। মামুন পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। ওই দিন রাতে ইউপি সদস্য নুরুল ইসলামের বাড়িতে সালিস বৈঠক বসে। সালিসে দুখু ও মামুনের পক্ষে গোমস্তাপুর থেকে সুলতান নামের এক ব্যক্তির নেতৃত্বে ২৫-৩০ জন সন্ত্রাসী হাজির হয়ে তাদের ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। দুখু ও মামুন পপিয়ারাকে খারাপ মেয়ে বলে। আমবাগানে একটি ছেলের সঙ্গে পপিয়ারাকে ধরে ফেলে বলে তারা অপবাদ দেয়। সালিসে দুখু ও মামুনের মাত্র চার হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। জরিমানার টাকা না দিয়েই সুলতান ও তার লোকজন ওই দুজনকে ছাড়িয়ে নিয়ে যায়।
এরপর বুধবার দুপুরে বাড়ির পাশের একটি আমবাগানে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে পপিয়ারা আত্মহত্যা করে। আত্মহত্যার আগে লেখা চিঠিতে পপিয়ারা আরও উল্লেখ করে, ‘আমি একজন প্রতিবন্ধী, আমার আশা ছিল প্রতিবন্ধীদের সেবা করব। আমার আশা পূরণ হলো না।’ লেখাপড়ার পাশাপাশি পপিয়ারা গোমস্তাপুর উপজেলার কালিতলা প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ে বিনা বেতনে দুই বছর ধরে শিক্ষকতা করছিলেন।
গোমস্তাপুর থানার এসআই নূর মো. সরকার বলেন, এ ঘটনায় দুখু, মামুন, সুলতান, ইউপি সদস্য নুরুল ইসলাম, প্রতিবেশী মেরিনা বেগম, তার স্বামী মজিবুরসহ নয়জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাতনামা আরও ১৪-১৫ জনকে আসামি করে বুধবার রাতে মামলা হয়েছে। পুলিশ মেরিনা বেগমকে গ্রেপ্তার করেছে।