অভিযুক্ত চাঁদাবাজ, আসামি, বহিষ্কৃতসহ ৬ জনকে নিয়োগ

পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে আজ মঙ্গলবার থেকে টানা ১০ দিনের ছুটি শুরু হচ্ছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালেয়। গতকাল সোমবার শেষ কর্মদিবসে ছাত্রলীগের চার নেতাসহ ছয়জনকে অ্যাডহক (অস্থায়ী) ভিত্তিতে নিয়োগ দিলেন উপাচার্য। এ ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের নির্দেশনাও মানা হলো না।

গতকাল নিয়োগপত্র পাওয়া এই ছয়জনের মধ্যে চারজন ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগের নেতা। চাঁদাবাজি, হামলা, সংঘর্ষের ঘটনায় তাঁদের তিনজন বহিষ্কৃত বা মামলার আসামি। এ ছাড়া বাকি দুজন বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আত্মীয়স্বজন। শিক্ষকদের বিরোধিতা উপেক্ষা করে এ নিয়োগ দেওয়ার ঘটনাকে উপাচার্যের স্বেচ্ছাচারী আচরণ বলে অভিহিত করেছেন একাধিক শিক্ষক।
অ্যাডহক ভিত্তিতে নিয়োগের বিষয়ে গতকাল রাতে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নানের কাছে জানতে চাইলে প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘জরুরি প্রয়োজন ছাড়া অস্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়া উচিত না। বিশেষ করে কর্মকর্তা পর্যায়ে।’
উপাচার্য ও ছাত্রলীগের রোষানলে পড়ার আশঙ্কায় নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকা একজন শিক্ষক বলেন, ‘অ্যাডহক ভিত্তিতে ছয়জনকে নিয়োগ দেওয়ার মতো কোনো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি প্রশাসনে। তা ছাড়া অ্যাডহক ভিত্তিতে কোনো নিয়োগ না দেওয়ারও নির্দেশনা রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের। এসব উপেক্ষা করেই এতগুলো নিয়োগ দেওয়া হলো।’
যাঁরা নিয়োগ পেলেন: বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি রাজিব চক্রবর্তীকে শিক্ষা শাখার প্রশাসনিক কর্মকর্তা, আরেক সহসভাপতি আবু সৈয়দ জিন্নাহকে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা কর্মকর্তা, সাংগঠনিক সম্পাদক ফয়সাল হোসেন ওরফে দীপুকে কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের প্রশাসনিক কর্মকর্তা, গণশিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক সোহেল রানাকে প্রক্টরের কার্যালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা, উপাচার্যের একান্ত সচিব মো. ছানোয়ার হোসেনের স্ত্রী তাসনিমা খন্দকারকে ছাত্রকল্যাণ ও পরামর্শদান কেন্দ্রের ক্যারিয়ার গাইডেন্স এবং উপাচার্যের কার্যালয়ের সিনিয়র সর্টার মো. সিদ্দিকুর রহমানের ছেলে মো. আবু হানিফকে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
নিয়োগপ্রাপ্ত ছাত্রলীগের তিন নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ: রাজিব চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে ২০১৩ সালে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ইতিহাস বিভাগে ভর্তি হতে আসা এক শিক্ষার্থীর কাছে দুই লাখ টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগ রয়েছে।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
অ্যাডহক ভিত্তিতে ছয়জনকে নিয়োগ দেওয়ার মতো কোনো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি প্রশাসনে। তা ছাড়া অ্যাডহক ভিত্তিতে কোনো নিয়োগ না দেওয়ারও নির্দেশনা রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের

ফয়সাল হোসেন ওরফে দীপু গত বছরের ২ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় ছাত্রলীগ থেকে সাময়িক বহিষ্কার হন। ২০১৩ সালের ৯ অক্টোবর সাবেক উপাচার্য আনোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে আন্দোলনকারী শিক্ষকদের ওপর হামলা চালানোর অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। অভিযোগ রয়েছে হলের এক ক্যানটিন মালিককে মারধরেরও। গত রোববার রাতে প্রায় ৩৫ জন শিক্ষক উপাচার্যের বাসভবনে গিয়ে শিক্ষকদের ওপর হামলাকারী এই নেতাকে নিয়োগ না দিতে উপাচার্যকে অনুরোধ জানান।
পূর্বশত্রুতার জের ধরে গত বছর ২৩ নভেম্বর মাওলানা ভাসানী হলের ছাত্রলীগের বিলুপ্ত কমিটির এক পক্ষের চার কর্মীর ওপর অপর পক্ষের হামলার ঘটনায় সংগঠনটির ১৩ নেতা-কর্মীসহ অজ্ঞাতনামা আরও ১০ জনের বিরুদ্ধে আশুলিয়া থানায় মামলা করেছিলেন আহত এক ছাত্রলীগ কর্মীর বাবা। সোহেল রানা এ মামলার অন্যতম আসামি। মামলাটি এখনো বিচারাধীন।
এদিকে গত ২৭ জুন ৩৪তম বার্ষিক সিনেট সভায় উপাচার্য স্বজনপ্রীতিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম প্রধান সমস্যা হিসেবে উল্লেখ করেন। কিন্তু গত রোববার তিনিই তাঁর একান্ত সচিব মো. ছানোয়ার হোসেনের স্ত্রী এবং তাঁর কার্যালয়ের সিনিয়র সর্টার মো. সিদ্দিকুর রহমানের ছেলেকে নিয়োগ দিয়েছেন। ছানোয়ার ও সিদ্দিকুরের একাধিক আত্মীয়স্বজন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন পদে কর্মরত রয়েছেন।
শিক্ষকদের বক্তব্য: সরকার ও রাজনীতি বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক নাসিম আখতার হোসাইন বলেন, কোনো বিজ্ঞাপন না দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের আগের দিন অ্যাডহক ভিত্তিতে একসঙ্গে ছয়জনকে নিয়োগ দেওয়া থেকেই বোঝা যায়, এ নিয়োগ-প্রক্রিয়া অস্বচ্ছ। এ চর্চা বন্ধ হওয়া উচিত।
এই ছয়জনকে নিয়োগের বিষয়ে জানতে উপাচার্য ফারজানা ইসলামকে তাঁর মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি। গতকাল দুই দফায় তাঁর কার্যালয়ে গিয়েও তাঁর সঙ্গে দেখা করা সম্ভব হয়নি।
যোগাযোগ করা হলে সহ-উপাচার্য মো. আবুল হোসেন বলেন, ‘এটা আমার অধীন নয়। উপাচার্য অ্যাডহকভিত্তিক নিয়োগ দিয়েছেন।’
এ বিষয়ে রেজিস্ট্রার আবু বকর সিদ্দিকের কাছে গতকাল রাতে ফোন করা হলে তিনি কিছুক্ষণ পরে যোগাযোগ করতে বলেন। প্রায় ২০ মিনিট পর ফোন করলে তিনি আর তা রিসিভ করেননি।