প্রিয়জনকে হারিয়ে নির্বাক পরিবারের সদস্যরা

প্রিয়জনকে হারিয়ে পরিবারের সদস্যরা নির্বাক। তাঁদের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। কাঁদতে কাঁদতে যেন তাঁদের অশ্রু শুকিয়ে গেছে। প্রতিবেশী লোকজনসহ অনেকে বাড়িতে এসে সান্ত্বনা দিচ্ছেন।
চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলায় গত শুক্রবার বিএনপি-জামায়াতের সঙ্গে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষে যুবদলের তিন কর্মী নিহত হন। তাঁরা হলেন উপজেলার রূপসা উত্তর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের সভাপতি মো. বাবুল ভূঁইয়া, বারপাইকা গ্রামের যুবদলের কর্মী আরিফ হোসেন এবং গাজীপুর গ্রামের বাসিন্দা ও ওয়ার্ড যুবদলের সহসভাপতি জাহাঙ্গীর প্রধান।
বদরপুর গ্রামের ভূঁইয়াবাড়ির আবদুর রহিমের বড় ছেলে বাবুল কাঠমিস্ত্রির কাজ করতেন। সম্পত্তি বলতে কেবল দোচালা টিনের একটি ঘর আর ভিটেমাটি। তিন সন্তানের জনক বাবুল শুক্রবার দুপুরে বাবা আ. রহিমের সঙ্গে উপজেলা সদরে বিএনপির মিছিলে যান। কিন্তু বাবা জীবিত ফিরলেও লাশ হয়ে বাড়ি ফেরেন বাবুল। উপার্জনক্ষম বড় সন্তানের অকালমৃত্যুতে পরিবারটির সামনে এখন ঘোর অন্ধকার। আর বাবুলের সন্তানসম্ভবা স্ত্রী এখন স্বামীশোকের পাশাপাশি তিন সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে উৎকণ্ঠায় বাকরুদ্ধ।
একই দিন সংঘর্ষে নিহত হন আরিফ হোসেন। তিনি বারপাইকা গ্রামের মুন্সিবাড়ির বৃদ্ধ কৃষক আ. আলিমের ছেলে। টাইলসমিস্ত্রি আরিফের মেয়ে হাফসার বয়স দুই বছর। স্ত্রী রুমানা বিধবা হয়ে এখন পাগলপ্রায়। আরিফ জুমার নামাজের পর বাড়ি থেকে বেরিয়ে বিএনপির মিছিলে যোগ দিয়ে লাশ হয়ে ফেরেন।
গাজীপুর গ্রামের জাহাঙ্গীর প্রধানও মিছিলে গিয়ে নিহত হন। স্থানীয় একটি সমবায় সমিতির কর্মী এবং ওয়ার্ড যুবদলের নেতা হিসেবে এলাকায় জনপ্রিয়তা ছিল তাঁর। নিঃসন্তান জাহাঙ্গীরের দত্তক মেয়ের বয়স আট বছর। সে জানে না, তার বাবা আর বেঁচে নেই। জাহাঙ্গীরের মা, ভাইবোনসহ পরিবারের সবাই বাকরুদ্ধ। কেউ কাউকে সান্ত্বনাটুকুও দিতে পারছেন না।
গতকাল শনিবার তিনজনের লাশ জানাজা শেষে দাফন করা হয়। বিএনপির স্থানীয় নেতারা সান্ত্বনা দিতে গতকাল ওই তিনজনের বাড়িতে যান। আম্বিয়া-ইউনুস ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে প্রতি পরিবারকে এক লাখ টাকা করে আর্থিক সহায়তা দেন ফরিদগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মোতাহের হোসেন পাটোয়ারী। তিনি ওই ফাউন্ডেশনের সভাপতি।