ওসমানী উদ্যানে দোকান, বসতি

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) প্রধান কার্যালয় নগর ভবনের ঠিক বিপরীত পাশে অবস্থিত ওসমানী উদ্যান। এই উদ্যান পরিচালনার দায়িত্ব ডিএসসিসির। ডিএসসিসির নির্দেশনা অমান্য করেই উদ্যানের ভেতরে গড়ে উঠেছে অস্থায়ী দোকান, অস্থায়ী বসতি।

গতকাল বৃহস্পতিবার সরেজমিনে দেখা যায়, নগর ভবনের বিপরীতে উদ্যানের ভেতরে দেয়াল-ঘেঁষে গড়ে উঠেছে অর্ধশতাধিক দোকান। এসব দোকানের মধ্যে অন্তত ২০টি চা-সিগারেটের। উদ্যানের বিভিন্ন জায়গায় পলিথিন দিয়ে তাঁবুর মতো টানানো হয়েছে। ভেতরে আছে শোবার ব্যবস্থা।

এমনি একটি পলিথিনের তাঁবুর বাইরে বসে দুপুরের খাবার রান্না করছিলেন সখিনা বেগম। পাশের চৌকিতে রাখা কয়েকটা ছেঁড়া কাঁথা, কাপড়চোপড়। কথা বলে জানা গেল, বাড়ি তাঁর কুমিল্লায়। নদীভাঙনের শিকার হয়ে স্বামী ও তিন সন্তান নিয়ে ঢাকায় এসেছেন। এরপর থেকে ওসমানী উদ্যানেই আছেন।

সখিনা বেগম বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ, ঘরভাড়া দেওনের সামর্থ্য নাই। ঢাকায় থাকনের জায়গা নাই। কয়েক দিন ধইর‌্যাই এইখানে থাকতাছি। ভাড়া দেওনের ঝামেলা নাই, আর কেউ তো কিছু কয় না।’

অথচ উদ্যানের ভেতরে ডিএসসিসির টাঙানো সাইনবোর্ডে রাত নয়টার পর উদ্যানে অবস্থান নিষেধ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়া উদ্যানে ধূমপান নিষেধ এবং ভবঘুরে ও বাস্তুহারা প্রবেশ নিষেধ বলেও সতর্ক করা হয়েছে সাইনবোর্ডে।

সরেজমিনে আরও দেখা যায়, উদ্যানের ভেতরে বসানো দোকানে চা, পান ও সিগারেট বিক্রি হচ্ছে। লোকজন প্রকাশ্যে ধূমপান করছে। ভবঘুরেরা জায়গায় জায়গায় জটলা পাকিয়ে বসে আছে। উদ্যানজুড়েই পড়ে আছে পলিথিন, কাগজ, কাপড় ও ময়লা-আবর্জনা।

সচিবালয়ে একটি কাজে এসেছিলেন নুরুল কবির। কাজে দেরি হবে বলে উদ্যানের ভেতরে সময় কাটাতে এসেছেন। ভবঘুরেদের যন্ত্রণায় বসার জায়গা পাচ্ছিলেন না। বললেন, ‘কর্তৃপক্ষ তো সতর্ক করেই শেষ। লিখছে অমান্যকারীর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিবে। আদতে এগুলো দেখভালের কোনো কর্তৃপক্ষ আছে বলে তো মনে হচ্ছে না।’

ওসমানী উদ্যান রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব ডিএসসিসির সম্পত্তি বিভাগের। সেখানকার প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা খালিদ আহমেদ বলেন, সিটি করপোরেশন ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে উচ্ছেদ করে। কিন্তু তারা আবার চলে আসে। সামনের সপ্তাহে উচ্ছেদের বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে আশ্বাস দেন তিনি।

২৩ দশমিক ৩৭ একর আয়তনের ওসমানী উদ্যানের দক্ষিণে রয়েছে নগর ভবন, পূর্ব দিকে গুলিস্তান, উত্তরে বাংলাদেশ সচিবালয় ও পশ্চিমে রেলওয়ে হাসপাতাল ও পুলিশের একটি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ। ওসমানী উদ্যানে ‘১৯৭১: বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সেক্টর’ শিরোনামে ১১টি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মিত আছে। স্তম্ভগুলোতে ১১টি সেক্টরের অঞ্চলসীমা, কমান্ডারদের নাম, অর্জন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য লেখা আছে। এখন এসব স্তম্ভে ‘উদ্যানবাসীরা’ ভেজা কাপড় শুকাতে দেন।

উদ্যানের ভেতরে চৌকি পেতে কয়েকজন হকার নতুন ও পুরোনো বৈদ্যুতিক সামগ্রীর দোকান নিয়ে বসেছেন। কথা হয়, উদ্যানের পাঁচ দোকানদারের সঙ্গে। তাঁদের সবাই নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, কয়েক দিন আগে উদ্যানের বাইরের ফুটপাত থেকে হকারদের উচ্ছেদ করায় তাঁদের অনেকেই এখন ভেতরে দোকান খুলে বসেছেন। এভাবে দোকান বসাতে প্রতিদিন ৫০ থেকে ২০০ টাকাদিতে হয়। এই টাকার ভাগ সিটি করপোরেশনের লোকজনও পান বলে অভিযোগ করেন তাঁরা।

এ বিষয়ে ডিএসসিসির প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা খালিদ আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘সিটি করপোরেশনের কিছু কর্মচারীর বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল আগেও। কয়েকজনকে সরানোও হয়েছে। এখন যাঁরা দায়িত্বে আছেন তাঁদের কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়া গেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’