সাংসদ আমানুরসহ চার ভাই আসামি হচ্ছেন

আলোচিত ফারুক আহমেদ হত্যা মামলায় টাঙ্গাইলের প্রভাবশালী খান পরিবারের চার ভাই আসামি হচ্ছেন। এ ছাড়া এই হত্যার পরিকল্পনা, সরাসরি অংশগ্রহণসহ বিভিন্ন ধাপে জড়িত থাকায় আরও ১১ জনকে আসামি করা হচ্ছে। ১৫ জনের বিরুদ্ধে আইনের একই ধারায় হত্যা মামলা করা হবে।
পুলিশের তদন্তে অভিযুক্ত চার ভাই হলেন টাঙ্গাইল-৩ আসন থেকে নির্বাচিত আওয়ামী লীগের সাংসদ আমানুর রহমান খান (রানা), শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সদর পৌরসভার মেয়র সহিদুর রহমান খান (মুক্তি), টাঙ্গাইল জেলা চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি ও ব্যবসায়ী নেতা জাহিদুর রহমান খান (কাকন) এবং কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সদস্য, সদ্য সাবেক সহসভাপতি সানিয়াত খান (বাপ্পা)। এই চারজনই ফারুক হত্যার পরিকল্পনাকারী। চারজনের মধ্যে হত্যার সময় উপস্থিত ছিলেন সাংসদ আমানুর ও ছাত্রলীগের নেতা সানিয়াত। পরিকল্পনাকারী বাকি দুই ভাই ঘটনার সময় বিদেশে ছিলেন। পুলিশ বলছে, এখন সাংসদ ও মেয়র দেশে অবস্থান করছেন। বাকি দুই ভাই বিদেশে পালিয়ে গেছেন।
সম্ভাব্য অভিযোগপত্রের অপর ১১ অভিযুক্তের মধ্যে হত্যার সময় সরাসরি উপস্থিত ছিলেন সাতজন। তাঁরা হলেন আনিসুল ইসলাম রাজা, মোহাম্মদ আলী, কবির, সমীর, আমানুরের বাড়ির দারোয়ান বাবু, সাবেক পৌর কমিশনার মাসুদুর রহমান ও ফরিদ আহমেদ। আর পরিকল্পনার সঙ্গে জড়িত ছিলেন আলমগীর হোসেন, চাঁনে, নূর ও ছানোয়ার। খান পরিবারের দুই ভাইসহ নয়জনের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ দণ্ডবিধির ৩০২/৩৪ ধারায় অভিযোগ আনা হচ্ছে। হত্যার ষড়যন্ত্রের জন্য অভিযুক্ত অপর ছয়জনের বিরুদ্ধেও ৩০২/৩৪ ধারার পাশাপাশি ১২০(খ) ধারায় অভিযোগ আনা হচ্ছে। এই ধারায় অভিযোগ প্রমাণিত হলে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড।
২০১৩ সালের ১৮ জানুয়ারি জেলা আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা ফারুক আহমেদকে হত্যা করা হয়। হত্যার পর তাঁর স্ত্রী নাহার আহমেদ কারও নাম উল্লেখ না করেই মামলা করেন। সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে আওয়ামী লীগের এই নেতার হত্যাকারীদের খুঁজে বের করতে নির্দেশ দেওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও ফারুকের পরিবারের সদস্যদের গণভবনে ডেকে নিয়ে সান্ত্বনা দেন। তিনি এই হত্যার বিচার হবে বলে তাঁদের আশ্বস্ত করেন।
প্রাথমিক তদন্তে অভিযুক্ত ১৫ জনের মধ্যে গ্রেপ্তার হয়েছেন মাত্র তিনজন। চার ভাই-ই পলাতক। চার ভাইয়ের কাউকেই গ্রেপ্তার করা সম্ভব না হলেও আদালতে এই মামলার অভিযোগপত্র দ্রুতই দেওয়া হবে। ইতিমধ্যে গোয়েন্দা পুলিশ অভিযোগপত্র দেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য-প্রমাণ, সাক্ষী চূড়ান্ত করেছে। প্রাথমিক তদন্তের ভিত্তিতে অভিযোগপত্র কেমন হবে, সে-সংক্রান্ত একটি খসড়াও করা হয়েছে। পুলিশের তদন্তসংশিষ্ট কর্মকর্তারা বলেছেন, বলা যায় এই মামলার তদন্ত শেষ পর্যায়ে। প্রাথমিক তদন্তে যাঁদের অভিযুক্ত করা হয়েছে, চূড়ান্ত অভিযোগপত্রে বড় কোনো পরিবর্তন হওয়ার সম্ভাবনা নেই। হয়তো কিছু সাক্ষ্য-প্রমাণ বেশি উপস্থাপন করা সম্ভব হবে।
আলোচিত এই মামলাটি জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) তদন্ত করছে। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা অশোক কুমার সিংহ প্রথম আলোকে বলেন, তদন্তে চার ভাইয়ের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে। সাংসদ আমানুর বা তাঁর কোনো ভাইকে গ্রেপ্তার করা গেলে ভালো হবে। তবে যদি গ্রেপ্তার না-ও হন, তাতে সমস্যা নেই। অভিযোগপত্র দেওয়ার মতো যথেষ্ট সাক্ষ্য-প্রমাণ পাওয়া গেছে। তিনি বলেন, এখানে চক্রান্তকারী ও হত্যাকারী দুটি পক্ষ আছে। তবে সবাই একই অপরাধে অপরাধী।
ইতিমধ্যে এই মামলায় গ্রেপ্তারকৃত রাজা ও মোহাম্মদ আলী ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। গ্রেপ্তার হওয়া ফরিদ আহমেদ জবানবন্দি দেননি। এ ছাড়া আমানুরের বন্ধু ও ব্যবসায়ী ফারুক হোসেন ভূঁইয়া (সনি), ঘনিষ্ঠ সহযোগী আব্দুল খালেক ও বাবুর্চি ওয়াহেদ আলী প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে সাক্ষ্য দিচ্ছেন। এই তিনজনই ঘটনার সঙ্গে নিজেদের জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেছেন। তবে ঘটনাচক্রে হত্যা ও হত্যার পরিকল্পনার সময় উপস্থিত ছিলেন বলে সাক্ষ্য দিয়েছেন। পুলিশ বলেছে, কেবল সাক্ষীদের ওপরই নির্ভর না করে আদালতে মামলা প্রমাণ করতে বেশ কিছু প্রমাণও উপস্থাপন করা হবে।
জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি ডিবি) গোলাম মাহফীজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, মামলার তদন্ত শেষ পর্যায়ে। দিন-তারিখ বলা না গেলেও দ্রুতই এই মামলার অভিযোগপত্র দেওয়া হবে। চার ভাইকেই গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। তাঁদের কাছে যে পরিমাণ তথ্য-প্রমাণ আছে, তাতে চার ভাইয়ের যেকোনো একজনকেও গ্রেপ্তার করা গেলে তাঁর কাছ থেকে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি আদায় করা যাবে। এতে মামলাটি আরও শক্ত-পোক্ত হবে। তবে না পাওয়া গেলেও অভিযোগ প্রমাণে কোনো সমস্যা হবে না।