এক বছর পর বাড়ি ফিরে এল শিশুটি

কিশোরগঞ্জের তাড়াইল উপজেলার দিগদাইড় ইউনিয়নের দিগদাইড় গ্রামের আবদুল কুদ্দুছ ঢাকায় রিকশা চালান। ২০১৪ সালের জুলাই মাসে ঢাকার কচুক্ষেত এলাকার আবদুল হকের বাসায় দিগদাইড় গ্রামের রতন মিয়ার ছেলে মো. হানিফকে (১৩) গৃহকর্মী হিসেবে কাজ দেন কুদ্দুছ।

আবদুল হক পরে কিশোর হানিফকে দিয়ে দেন তাঁর মেয়ে দিপা আক্তারের রামপুরার বাসায়। দিপা একদিন হানিফকে মারধর করায় সে বাসা থেকে পালিয়ে যায়। হানিফের মা-বাবা ছেলের সন্ধান না পেয়ে কুদ্দুছকে হত্যাকারী বা পাচারকারী হিসেবে অভিযোগ তোলেন। এ ঘটনায় কুদ্দুছকে মারধর করে থানায় সোপর্দ করেন তাঁরা। এ নিয়ে দিগদাইড়ে গ্রাম্য সালিসে কুদ্দুছকে দোষী সাব্যস্ত করে তাঁর ৮৫ শতাংশ কৃষিজমি ক্ষতিপূরণ হিসেবে রতনকে দিতে বলা হয়। পরে গত কোরবানি ঈদের আগে রতনের নামে ওই জমি নিবন্ধন করে দেন কদ্দুছ। নিবন্ধনের খরচও দিতে হয় কুদ্দুছকে। ওই সালিসে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য মো. আশক আলী ও মুকুল মিয়া, সাদেক ভেন্ডারসহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন।

জমি লিখে দেওয়ার প্রায় ১০ মাস পর গত মঙ্গলবার সকালে মো. হানিফ বাড়ি ফিরে আসে। বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর রতনের বাড়িতে লোকজনের ভিড় লেগে যায়। খবর পেয়ে রিকশাচালক কুদ্দুছ ওই দিন সন্ধ্যার পর ঢাকা থেকে বাড়িতে আসেন।

গত মঙ্গলবার দুপুরে দিগদাইড় গ্রামে গিয়ে কথা হয় হানিফের সঙ্গে। হানিফ বলে, ‘রামপুরার বাসায় যাওয়ার পর বাড়িওয়ালার স্ত্রী দিপা প্রায়ই আমাকে মারধর করতেন। অত্যাচার সইতে না পেরে কিছুদিন পর ওই বাসা থেকে পালিয়ে যাই।’ পালিয়ে গিয়ে এত দিন কোথায় ছিল—এ প্রশ্নের জবাবে সে জানায়, খিলগাঁও এলাকার একটি হোটেলে মাসিক এক হাজার টাকা বেতনে চাকরি নেয়। ১১ মাস চাকরি করে আট দিনের ছুটি নিয়ে বাড়িতে এসেছে।

জানতে চাইলে কদ্দুছ মুঠোফোনে ওই দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘হানিফের কারণে এরা আমার হাত-পা বেঁধে মারধর করে পুলিশে দিয়েছে। পরে গ্রামবাসী সালিস করে আমার সম্বল ৮৫ শতাংশ জমি কাওলা খরচসহ রতনকে লিখে দিতে বাধ্য করেছে। মিথ্যা অপরাধে আমার আজ এ অবস্থা। এখন আমি জমি ফেরত চাই।’

দিগদাইড় ইউপির চেয়ারম্যান মো. গিয়াস উদ্দিন বলেন, ‘বিষয়টি আমি শুনেছি। ওই সালিসে উপস্থিত ইউপি সদস্য আশক ও মুকুলকে জমি ফেরত দিতে ব্যবস্থা করতে বলেছি।’