কামরুলকে ফেরাতে জটিলতার শঙ্কা

শেখ সামিউল আলম
শেখ সামিউল আলম

সিলেটে শিশু শেখ সামিউল আলম রাজন হত্যা মামলার অন্যতম আসামি কামরুল ইসলামকে দেশে ফিরিয়ে আনা হবে বলা হলেও সৌদি আরবের সঙ্গে বহিঃসমর্পণ চুক্তি না থাকায় এ ক্ষেত্রে জটিলতা হতে পারে। অবশ্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, কামরুলকে ফিরিয়ে আনতে প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। জটিলতা কাটিয়ে দ্রুতই তাঁকে দেশে এনে বিচারের মুখোমুখি করা হবে। 
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্র বলেছে, সৌদি আরবে আটক কামরুলকে দেশে ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে মন্ত্রণালয় গত সপ্তাহে সে দেশের সরকারের কাছে পূর্ণাঙ্গ বহিঃসমর্পণ প্রস্তাব পাঠিয়েছে। ওই প্রস্তাবের সঙ্গে মামলার এজাহারের অনুলিপি, গ্রেপ্তারি পরোয়ানার কপি, ইন্টারপোলের রেড নোটিশের কপিসহ কোন আইনে কামরুলের বিচার করা হতে পারে, সে-সংক্রান্ত মোট ৩২ পৃষ্ঠার কাগজপত্র পাঠানো হয়েছে। দ্রুত বিচার আইনে সামিউল হত্যার বিচার করা হবে। প্রস্তাবটি সৌদি কর্তৃপক্ষ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেবে। 
১৩ বছর বয়সী সামিউলকে ৮ জুলাই সিলেটের কুমারগাঁওয়ে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। ওই ঘটনার পর সৌদি আরবপ্রবাসী কামরুল পালিয়ে সেখানে চলে যান। বাংলাদেশ দূতাবাসের সহায়তায় জেদ্দায় তাঁকে আটক করে সৌদি পুলিশ। বর্তমানে তিনি সেখানকার কারাগারে আছেন। 
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের রাজনৈতিক শাখার সূত্র বলেছে, সৌদি আরবের সঙ্গে বাংলাদেশের বহিঃসমর্পণ চুক্তি না থাকলেও কামরুলকে ফিরিয়ে আনতে সে দেশে পূর্ণাঙ্গ বহিঃসমর্পণ প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। চুক্তি না থাকায় কামরুলকে ফেরত পাঠাতে বাংলাদেশ অনুরোধ জানাবে। অন্য কোনো আইনে তাঁকে ফেরত পাঠাতে পারে। সৌদি সরকার চাইলে কামরুলকে পুশব্যাকও করতে পারে অথবা তাঁকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে বাংলাদেশে ফেরত পাঠাতে পারে৷ তবে পুরো বিষয়টি নির্ভর করছে দুই দেশের সম্পর্ক ও কূটনৈতিক তৎপরতার ওপর৷ 

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পাঠানো কাগজপত্রে সিলেটের জালালাবাদ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আমিনুল ইসলামের দায়ের করা এজাহারও পাঠানো হয়েছে। ওই এজাহারে সামিউলের ব্যাপারে বলা হয়েছে, ৮ জুলাই ভোর ছয়টায় ভ্যানগাড়ি চুরি করার সময় ওই ওয়ার্কশপের নিরাপত্তা প্রহরী ময়না মিয়া আশপাশের ওয়ার্কশপের লোকজনকে নিয়ে অজ্ঞাতনামা এক ব্যক্তিকে (সামিউল) মারধর করে গুরুতর আহত করেন ও পরে ওই ব্যক্তি মারা যায়। তবে সামিউলের বাবা আজিজুর রহমান আলমের দায়ের করা এজাহারে ঘটনাটি স্পষ্টভাবে জানানো হয়েছে। তাই পুলিশের এজাহারটি পাঠানো নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
কামরুলের বিষয়ে ইন্টারপোলের মাধ্যমে রেড নোটিশ জারি করা হয়েছে। ইতিমধ্যে কামরুলের ভাই ও এই মামলার প্রধান আসামি মুহিত আলমসহ বেশ কয়েকজন আসামিকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। তাঁদের কয়েকজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছেন। চুরির অভিযোগ তুলে সামিউলকে পেটানোর দৃশ্য ভিডিও করে তা নির্যাতনকারীরা সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়েছিলেন। ওই ভিডিওতে কামরুলকেও দেখা গেছে।
মন্ত্রণালয়ের কয়েকজন কর্মকর্তা বলেন, ইন্টারপোলের রেড নোটিশ থাকার অর্থ এই নয় যে এক দেশের আসামি অন্য দেশে ধরা পড়লে তাঁকে দেশে ফেরত পাঠাতে হবে৷ এমন বাধ্যবাধকতা নেই৷ এই নোটিশের মাধ্যমে কোনো দেশের অপরাধীর ব্যাপারে তথ্য প্রকাশ এবং তথ্য সংগ্রহ করা হয়৷
১৮ জুলাই সিলেটের সদর উপজেলার বাদেয়ালি গ্রামে সামিউলের বাড়িতে গিয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, কামরুলকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করা হবে। ২০ জুলাই সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, অচিরেই কামরুলকে দেশে ফিরিয়ে আনা হবে। ২২ জুলাই সিলেটের বাদেয়ালি গ্রামে গিয়েও একই কথা পুনর্ব্যক্ত করেন তিনি। তিনি বলেন, সৌদি আরব থেকে কামরুলকে দেশে ফেরাতে তৎপরতা চলছে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী গত মঙ্গলবার প্রথম আলোকে বলেন, সামিউল হত্যার বিচার দ্রুত বিচার আইনে করা হবে। কামরুলকে দেশে ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। দুই দেশের আইনগত জটিলতা কাটিয়ে তাঁকে আনা হবে। তবে কখন আনা হবে, তা সুনির্দিষ্ট করে বলা যাবে না। এই হত্যার ঘটনাটি সারা পৃথিবীকে নাড়া দিয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এটি একটি পৈশাচিক হত্যাকাণ্ড, নৃশংস হত্যাকাণ্ড। দেশের আপামর জনসাধারণের মনে ঘটনাটি দাগ কেটেছে।
কামরুলের দেশ ছেড়ে পালানোর জন্য পুলিশের গাফিলতির বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আসামি কীভাবে দেশ ছেড়ে চলে গেলেন, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এর সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কেউ জড়িত থাকলে তাঁর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।