আ.লীগ নেতার পত্রিকা কার্যালয় থেকে অবৈধ পণ্য জব্দ

দিনাজপুর শহরের একটি সাপ্তাহিক পত্রিকা কার্যালয় থেকে প্রায় চার লাখ টাকা মূল্যের অবৈধ পণ্য জব্দ করেছে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব)। একই সঙ্গে তাঁরা তৃপ্ত ফুড অ্যান্ড বেভারেজ কোম্পানি লিমিটেড নামের একটি অনুমোদনবিহীন কারখানাও সিলগালা করে দেন।

আজ শনিবার দুপুরে দিনাজপুর শহরের পশ্চিম বালুয়াডাঙ্গা এলাকায় র‌্যাব ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট অভিযান চালান। ওই সাপ্তাহিক পত্রিকা ও কারখানার মালিক দিনাজপুর জেলার বিরল উপজেলার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. মোস্তাফিজুর রহমান।
গতকাল দুপুরে র‍্যাব দিনাজপুর শহরের ‘সাপ্তাহিক পথচলা’ নামের একটি সাপ্তাহিকের কার্যালয়ে অভিযান চালান। সেখানে ‘তৃপ্ত ফুড অ্যান্ড বেভারেজ কোম্পানি লিমিটেড’ নামে একটি অনুমোদনবিহীন প্রতিষ্ঠান ও কারখানা থেকে বিপুল পরিমাণ নকল ও নিম্নমানের ম্যাঙ্গো, অরেঞ্জ ও লিচু জুস, চকলেট, খাওয়ার স্যালাইন, সয়াবিন ও সরিষার তেল, মুড়িসহ বিভিন্ন প্রকার শিশু খাদ্য উদ্ধার করেন।
তাৎক্ষণিকভাবে ভ্রাম্যমাণ আদালত ওই নকল খাদ্য উৎপাদন ও বাজারজাত কারখানা ও প্রতিষ্ঠানটি সিলগালা করে দেন। ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. জোবায়ের রহমান রাশেদ কারখানার মালিক মোস্তাফিজুর রহমানকে এক বছরের কারাদণ্ড ও এক লাখ টাকা জরিমানা করেন। পরে কারখানার মালিক মো. মোস্তাফিজুর রহমান আদালতের কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করে বলেন—তাঁকে ভুল বুঝিয়ে কারখানার কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক সুমন পারভেজ ওই ব্যবসা পরিচালনা করে আসছেন। সুমন পারভেজ এ বিষয়ে আদালতের সামনে স্বীকার করলে মোস্তাফিজুর রহমানকে শুধু দুই লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। আর কারখানার ব্যবস্থাপনা পরিচালক সুমন পারভেজকে ছয় মাসের কারাদণ্ড ও ৮০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
ভ্রাম্যমাণ আদালতের আদেশ পরিবর্তনের ব্যাপারে জানতে চাইলে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জোবায়ের রহমান প্রথম আলোকে বলেন, আদালত কারখানার মালিকের নিঃশর্ত ক্ষমাপ্রার্থনা করেন এবং অবৈধ ব্যবসার জন্য ব্যবস্থাপনা পরিচালককে দায়ী করেন। ব্যবস্থাপনা পরিচালক সেই দায় উপস্থিত সবার সামনে স্বীকার করায় আদালত রায় সংশোধন করেছেন। জব্দ করা মোট পণ্যের মূল্য তিন লাখ ৯৬ হাজার টাকা। আগামীকাল জব্দ হওয়া পণ্যগুলো ধ্বংস করা হবে বলেও জানান তিনি।
দিনাজপুরে কর্মরত র‌্যাব-১৩ উপপরিচালক মেজর আবদুল্লাহ আল মাহমুদ জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অনুসন্ধান করে নিশ্চিত হওয়ার পর তাঁর নেতৃত্বে র‌্যাবের গোয়েন্দা দল শনিবার দুপুরে শহরের বালুয়াডাঙ্গা এলাকায় ওই দ্বিতল বাড়িতে অভিযান চালায়। এ সময় কারখানার কর্মচারী মো. জাহিদ (২০), মো. খায়রুল আলম (৩২), নারী কর্মী নূর এ জান্নাত (১৮) এবং আফরিন আক্তারকে (২০) আটক করেন।
র‌্যাবের কাছে মুঠোফোনে বার্তা পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, ভবনের সামনে রাস্তায়, ভবনে বড় করে ‘সাপ্তাহিক পথচলা’ নামে একটি পত্রিকার সাইনবোর্ড। ভবনের ভেতরে অসংখ্য স্থানে পত্রিকাটির স্টিকার লাগানো। কিন্তু ভবনের দুই তলা মিলে পত্রিকার কাজের কোনো অস্তিত্ব নেই। সর্বত্র ‘তৃপ্ত ফুড অ্যান্ড বেভারেজ কোম্পানি লিমিটেড’ নামে একটি প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম চোখে পড়ে।
ভবনটির নীচতলার ডান দিকে বড় একটি কক্ষে কার্টনজাত ‘তৃপ্ত সয়াবিন, সরিষার তেল, লিচু ও আমের জুস, চকলেট, মুড়িসহ বিভিন্ন পণ্য সাজানো রয়েছে।
নীচতলার বাম দিকের কক্ষটিতে বাজার থেকে কেনা বিশাল আকৃতির প্লাস্টিকের ড্রামের ভেতর থেকে সয়াবিন ও সরিষার তেল বের করে স্টিলের ছোট ড্রামে ভরে বোতলজাত করার যন্ত্র চোখে পড়ে।
র‍্যাব জানায়, সরিষা ও সয়াবিন তেল শহরের পাইকারি দোকান থেকে থেকে কিনে বোতলজাত করে ‘তৃপ্ত ফুড অ্যান্ড বেভারেজ কোম্পানির’ নামে লেবেল লাগিয়ে বাজারজাত করা হয়। বাকি সব পণ্য বাইরে থেকে কোম্পানির লেবেল লাগানো অবস্থায় আসে।